আজ খবর ডেস্ক:
সোমবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং (Cyclone Sitrang) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম (Chittagong of Bangladesh) থেকে ৩৯০ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া দপ্তরের (IMD) পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পরবর্তী ১২ঘন্টার মধ্যে এটি আরও তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। তারপর তিনকোনা দ্বীপ এবং সন্দ্বীপের মধ্যবর্তী বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। এই প্রতিবেদন লেখার সময়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের যেই অংশে আছড়ে পড়ার কথা তার থেকে আনুমানিক ২৩৫ কিমি দূরে সমুদ্রের মধ্যে অবস্থান করছে।


এই ঘূর্ণিঝড়ের ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়তে পারে সোম ও মঙ্গল রাতের সন্ধিক্ষণে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত ত্রিপুরা (Tripura) ও আসাম (Assam) নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন।

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ১০০০টির ও বেশি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র (Cyclone Shelter) প্রস্তুত করেছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর (Bay of Bengal) এবং গভীর সাগরে সমস্ত মাছ ধরার নৌকো এবং ট্রলারগুলিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নোঙর রাখতে বলা হয়েছে। কারণ ঘূর্ণিঝড় সিত্রং মঙ্গলবার ভোরে দক্ষিণ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, সিত্রাং বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল বরাবর খেপুপাড়ার কাছে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশ জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রাম ও অন্যান্য পার্বত্য জেলায় কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে যে অবিরাম বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ভূমিধসে বাড়িঘর ধ্বংস হতে পারে এবং মানুষ মারা যেতে পারেন।

দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে এদিন সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত চলছে।
বরিশালে (Barisal) স্থানীয় প্রশাসন প্রচুর সংখ্যায় সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করেছে।
খুলনায় (Khulna), কর্তৃপক্ষ ৪০৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে। যে কোনও জরুরি অবস্থার জন্য ২,৭৩,০০০ জনেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।


ঢাকার (Dhaka) আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় জেলা গুলি হল- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী। তিনটি উপকূলীয় দ্বীপ বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে।


আবহাওয়া অফিস সর্বশেষ সতর্কবার্তায় বলেছে, ওপরে উল্লিখিত অঞ্চলগুলিতে বিপদ সঙ্কেত ৭এর আওতায় আসবে। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে জলস্তর এই অঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৮ ফুট বেশি উচ্চতায় থাকবে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ৬ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের পরিবর্তে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

সোমবার সকাল ৬টায় এটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা বন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এসব জেলার নদীবন্দরকে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ সোমবার বলেছে,
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণের জেলাগুলিতে সোমবার হাল্কা বৃষ্টি এবং মেঘলা আকাশ দেখা যাবে।
বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এর জেরে প্রবল থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে এবং বাতাসের গতিবেগ ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছে যাবে। ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে হাওয়া বইতে পারে দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও উত্তর ২৪ পরগনার উপকূলীয় জেলাগুলিতে।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক সীমান্তের দুই পাশের সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে।
প্রশাসন দক্ষিণ ২৪ পরগণার নদী তীর বরাবর অসামরিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকায় সরানোর ব্যবস্থাও করছে।


এদিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (North East India) ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাসও দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
ত্রিপুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। আগামী ২৪ঘন্টার মধ্যে সর্বাধিক ২০০ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, IMD জানিয়েছে।
ত্রিপুরা ছাড়াও আসাম, মিজোরাম (Mizoram), মণিপুর (Manipur) এবং নাগাল্যান্ডের (Nagaland) জন্য “Red Alert” এবং অরুণাচল প্রদেশের (Arunachal Pradesh) জন্য ” Orange Alert” জারি করা হয়েছে।


রাজ্য সরকারগুলির তরফে এনডিআরএফ (NDRF) কর্তৃপক্ষকে এসব এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ আসামের ৩জেলা — কাছাড়, করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দি; মিজোরামের ১১টি জেলা, ত্রিপুরার ৮টি জেলা এবং নাগাল্যান্ডের ১৬টি জেলার বেশিরভাগই “রেড অ্যালার্ট”-এ রয়েছে।
ত্রিপুরা সরকার আগামী ২৫ এবং ২৬শে অক্টোবর রাজ্য জুড়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী সহ পর্যাপ্ত সংখ্যক ত্রাণ সহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *