আজ খবর ডেস্ক:

রবিবার সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের (Cyclone Sitrang 2022) প্রভাবে এদিন বিকেলের পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হবে রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায়।
এর মধ্যেই রবিবার সকালে বড় আপডেট দিল আবহাওয়া দপ্তর (IMD)। হাওয়া অফিস কীঅনিয়েছে, আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে (North-West) এগোবে এই গভীর নিম্নচাপ। তারপর আরও শক্তি বাড়িয়ে পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড়ে। মধ্য বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলেও হাওয়া অফিস জানিয়েছে।

হাওয়া অফিসের Live Update বলছে, গত ৬ ঘণ্টা ধরে প্রায় ১৮ কিমি বেগে মুখ ঘুরিয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, রবিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।


বর্তমানে ওই গভীর নিম্নচাপ আন্দামানের পোর্টব্লেয়ার (Port Blair of Andaman) থেকে প্রায় ৫৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, সাগর দ্বীপ থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের বরিশাল (Barisal of Bangladesh) থেকে ৮৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে।
এর পর আরও উত্তর এবং উত্তর-পূর্বে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা এই ঘূর্ণিঝড়ের। ২৫শে অক্টোবর ভোরে বাংলাদেশের তিনকোনা দ্বীপ এবং সন্দ্বীপের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে সিত্রাং

যদিও এই ঘূর্ণিঝড়ের পশ্চিমবঙ্গের কোনও উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আবহবিদরা।তবে, এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় জেলাগুলিতে সোম এবং মঙ্গলবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার দুই ২৪ পরগণায় এবং দুই মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে পারে মঙ্গলে।
বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে এই ঘূর্ণিঝড়ের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহবিদরা।

আগামী ১২ ঘণ্টায় আরও গভীর হতে চলেছে এই নিম্নচাপ। সোমবার সকাল থেকেই দাপট দেখাতে শুরু করবে সিত্রাং। এটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অভিমুখ ঘুরিয়ে ফেলবে সোমবার।
সোমবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের কলকাতা (Kolkata), হাওড়া (Howrah) এবং হুগলি (Hooghly)-সহ অন্যান্য বিভিন্ন জেলাতেও হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কালীপুজোর দিন পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘণ্টায় ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ থাকতে পারে ৪৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার।কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার।

মঙ্গলবার ও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে দুই ২৪ পরগণা এবং নদিয়ায়। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুরে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির সঙ্গে বইবে ঝোড়ো হাওয়াও।
মঙ্গলবার কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার।
মঙ্গলবার দুই ২৪ পরগনায় ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিমি। পূর্ব মেদিনীপুরে বইতে পারে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৮০ কিমি।


ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় তৎপর প্রশাসন। উপকূলবর্তী এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। ২৩শে অক্টোবর থেকে মৎস্যজীবীদেরও সাগরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যারা সমুদ্রে রয়েছেন, সেই মৎস্যজীবীদেরও ফিরে আসার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সোম ও মঙ্গলবার সুন্দরবনে ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুরের মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে।


ইতিমধ্যেই উপকূলীয় দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কমলা সতর্কতা (Orange Alert) জারি করা হয়েছে। নবান্নের তরফে এই জেলা প্রশাসনগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারীদের সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য।
পাশাপাশি, জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিকেও আশ্রয় শিবিরে (Cyclone Centre) পরিণত করার নির্দেশ দিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *