আজ খবর ডেস্ক:
রক্তে শর্করার মাত্রা হল শরীরে উপস্থিত গ্লুকোজের (Glucose) পরিমাণ। শরীরে গ্লুকোজ আসে আপনি যে খাবার খান, সেখান থেকে। রক্ত শক্তি হিসাবে শরীরের কোষে গ্লুকোজ ছড়িয়ে দেয়।
গবেষণা দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি যখন ঘুমায় তখন সাধারণত রক্তে শর্করার (Blood Sugar) মাত্রা ওঠানামা করে। এটা স্বাভাবিক এবং বেশিরভাগ সুস্থ মানুষের এতে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু, ঘুমের অভাব অবশ্যই একটি উদ্বেগের কারণ। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিসে (Diabetes) আক্রান্ত মানুষের ঘুমের অভাবজনিত কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি ও বেশি থাকে। রাতে কম ঘুমের (Insomnia) আরেকটি ফল হল, টুকটাক কিছু না কিছু খেতে ইচ্ছে করে। অনেকেই ফ্রিজ খুলে মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় জিনিস খান। যা আপনার ব্লাড সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়।
ঘুম এবং ডায়াবেটিস বিভিন্ন ধরণের হয়। রক্তে শর্করার অনিয়মের দুটি বিভাগ রয়েছে:
১) রক্তে উচ্চ শর্করা বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া (Hyperglycemia)
২) রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia)।
হাইপারগ্লাইসেমিয়া হয় যখন শরীরে ইনসুলিনের (Insulin) অভাব হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। মানসিক চাপ (Mental Stress), ঘুমের অভাব ইত্যাদি থেকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনার ঘুমের সময় এবং গুণমান আপনার মেজাজ এবং জীবনীশক্তিকে প্রভাবিত করে। ঘুমের অভাব বা অনুপযুক্ত ঘুম ক্রমাগত মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়াও, টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে কারণ তাদের শরীর ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না। অন্য কোনও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণের জন্য যাঁরা স্টেরয়েড (Steroid) ব্যবহার করেন, তাঁরাও হাইপারগ্লাইসেমিয়ার সম্মুখীন হন।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, শরীর ভোরবেলার মধ্যে নিজেকে কাজের জন্য প্রস্তুত করে, যার ফলে বিশেষ এক ধরণের হরমোন (Hormone) নিঃসৃত হয়। এতে ডায়াবেটিসে আক্রান্তর শরীরে সকালে সুগার লেভেল অনেকটাই বেশি থাকে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া হল রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কমে যাওয়া। চলতি কথাই আমরা একে বলি “সুগার ফল” (Sugar Fall)। মানুষের কোষ সঠিকভাবে কাজ করার জন্য, সেখানে পর্যাপ্ত চিনি থাকা আবশ্যক। রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে উদ্বেগ, মাথাব্যথা এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা হয়।
একটি সমীক্ষা অনুসারে, হাইপোগ্লাইসেমিয়া চেতনা হারানো, খিঁচুনি এমনকী মৃত্যুর কারণ হতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা মারাত্মকভাবে কম হওয়াকে ইনসুলিন শক বলা হয়। একটি সমীক্ষা আরও দেখায় যে রক্তে শর্করার মাত্রা কম হলে ঘুমের সময় দুঃস্বপ্ন এবং কান্নাকাটি হয়।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রায়শই ঘটে যখন একজন ডায়াবেটিস রোগী একটানা কয়েক ঘন্টা ধরে কিছু না খেয়ে থাকেন।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে শর্করার মাত্রা কম হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে খাবার বাদ দেওয়া, ইনসুলিনের ডোজ বা ওষুধ গ্রহণের নিয়ম না মানা, অ্যালকোহল পান করা ইত্যাদি। পেশী এবং লিভার গ্লাইকোজেন আকারে অতিরিক্ত গ্লুকোজ সঞ্চয় করে।
১) দীর্ঘস্থায়ী ঘুমের ব্যাঘাত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং শেষপর্যন্ত ইনসুলিন প্রতিরোধের (Insulin Resistance) দিকে পরিচালিত করতে পারে। ২) ক্রমাগত ঘুমের অভাব স্থূলতা (Obesity) এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় ।
৩) ঘুমের অভাব আপনাকে আরও ডিহাইড্রেটেড করে দেয়। উচ্চতর চিনির মাত্রা কমাতে আরও জল নিষ্কাশন করে শরীর টিস্যুগুলিকে ক্ষয় করে।
একাধিক সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্কর শরীর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ন্যূনতম ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। অতিরিক্ত ঘুম এবং ঘুমের অভাব উভয়ই আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
ডায়াবেটিস রোগীদের স্ট্রোক বা হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি। অতএব, তাদের একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা উচিত এবং তাদের রক্তে শর্করার মাত্রার ওপর নজর রাখা উচিত।