আজ খবর ডেস্ক:
বুধবার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় “বিজয়া সম্মেলন” (Bijoya Sammelan) শুরু করেছে রাজ্যের শাসক দল (TMC)। বুধবার নিউটাউনে (New Town) মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) বিজয়া সম্মেলনীতে আমন্ত্রণ না পেয়ে রীতিমত বিস্ফোরক রাজারহাট নিউটনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় (Tapas Chatterjee)।


অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে অভিনেতা তথা তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী (Soham Chakraborty) এবং তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষের (Kunal Ghosh) উপস্থিতিতে বিজয়া সম্মেলনের অনুষ্ঠানে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন এলাকার তৃণমূল কর্মীরা।
তাপস চট্টোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে বলেন, “আমি খুবই মর্মাহত, গতবারও আমাকে জানানো হয়নি। দু’বছর ধরেই দলে আমার কোনও স্টেটাস নেই। ২ বছর ধরে আমায় বিজয়া সম্মেলনীতে ডাকা হয় না। দলে একটা চাকরশ্রেণি আর আরেকটা বাবুশ্রেণি। দলে আমার স্টেটাসটা চাকরশ্রেণির। চাকরদের সম্মান জানিয়ে বলছি, আমি চিরকাল শ্রমজীবী মানুষদের হয়ে লড়াই করেছি।”


এদিকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বিজয়া সম্মেলনীর আমন্ত্রণ কার্ডে স্থানীয় বিধায়কের নাম না থাকায় বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন তৃণমূল কর্মীরা। দলের নেতা কুণাল ঘোষ ও সোহম চক্রবর্তীর সামনেই তুলকালাম করেন তৃণমূল কর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কর্মীদের থামাতে কার্যত হিমশিম খেয়ে যান কুণাল-সোহম।

২০২১ এর বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গ তুলে প্রাক্তন সিপিআইএম নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমি ৫৬ হাজার ভোটে জিতেছিলাম। নিউটাউনের ইতিহাসে কেউ কখনও এত ভোটে জিততে পারেনি। ৩৯ বছর ধরে আমি রাজারহাটে জনপ্রতিনিধিত্ব করছি। ৪৬ বছর হয়ে গেল আমার রাজনীতিতে। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি সম্মানটাই চাই। কিন্তু আমার কোনও কথা বলার সুযোগ নেই। কীভাবে কথা বলতে হয় দলে, আমার জানা নেই। সিপিআইএম থেকে আসায় যদি আমার সততা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমার কিছু করার নেই। কিন্তু দলের কোনও কর্মী বলতে পারবে না যে তাপস চট্টোপাধ্যায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন আছে।”


রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ওই এলাকায় তাপসের মূল গন্ডগোল আদতে সভ্যসাচী দত্তর (Sabyasachi Dutta) সঙ্গে। মাঝে সব্যসাচী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে (BJP) চলে গিয়েছিলেন। তবে একুশের ভোটের কিছুদিন পরেই ফের পুরনো দলে ফিরে আসেন। দোলের তরফে একাধিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সব্যসাচীকে। আর সে কারণেই ক্ষুব্ধ তাপস সরব হয়েছেন।

পূর্ব মেদিনীপুরে (Purba Medinipur) আবার অন্য সমস্যা। একদিকে অধিকারী পরিবারের “চাপ” আর অন্যদিকে অখিল গিরি-সুপ্রকাশ গিরি। মাঝে রয়েছেন তৃণমূলের বেশ কিছু স্থানীয় নেতা।
জেলায় দলের তরফে বিজয়া সম্মেলনীর অনুষ্ঠান হচ্ছে অথচ তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। এই অভিযোগ নিয়ে কুণাল ঘোষ ও চন্ডিপুরের বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীর কাছে যান তাঁরা। ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, বিষয়টা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান TMC মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
এদিনের অনুষ্ঠান ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর বিধানসভার ভীমেশ্বরীতে। এলাকার তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, যাঁরা সক্রিয় TMC করে তাঁদেরকে ডাকা হয়নি।


বিক্ষোভকারীদের একজন জানান, তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ও এগরার বিধায়ক তরুণ মাইতির নাম মঞ্চ থেকে নিয়মমাফিক ঘোষণা করা হয়নি। এদিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি (Akhil Giri), বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একাধিক নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের মাঝেই কর্মীদের একাংশ TMC মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীকে ঘিরে তাঁদের অভিযোগের কথা জানান।
বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর তার আগে জেলায় জেলায় যদি এভাবে দলীয় কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে শাসকদলের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *