আজ খবর ডেস্ক:
পুজো মানেই থিমের চমক! গত বেশ কয়েক বছর ধরে এটাই যেন হয়ে উঠেছে দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2022) বৈশিষ্ট্য।
প্রথমে ছিল কলকাতার “দাদাগিরি”। সময় যত এগিয়েছে পিছিয়ে থাকেনি জেলার পুজোও। শুধু দুর্গাপূজা নয় এখন কালী বা জগদ্ধাত্রী পুজোতেও থিমের (Puja Theme) বাহারে চমকে দিচ্ছেন জেলার পুজো উদ্যোক্তারা।
যেমন হুগলির (Hooghly) গুড়াপ। এখানে হাসামপুর এলাকার দুর্গাপুজোয় ধরা পড়ল অন্য ছবি। জানিয়ে রীতিমত তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি।
দেখা গেল, দুর্গা মূর্তির হাতে নেই ত্রিশূল। পরিবর্তে রয়েছে তৃণমূলের (TMC Flag) দলীয় পতাকা। আর সেই পতাকা দিয়েই অসুরকে বধ করছেন তিনি!

স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সমালোচনায় সরব হয়েছে। কিন্তু পুজো উদ্যোক্তাদের যুক্তি ও ফেলে দেওয়ার মত নয়। তাঁরা বলছেন, রাজ্যের মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) যেভাবে অশুভ শক্তির বিনাশ করে রাজ্যে শুধু উন্নয়ন করে চলেছেন সেটা দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়ে এমন থিমের আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। এমনকি স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যর বক্তব্য, “দেবী দুর্গা অশুভ শক্তির বধ করেন আর রাজ্যের মুখমন্ত্রী এই রাজ্যে বিজেপি (BJP) নামক অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে তাকে এবারের বিধানসভা ভোটে বধ করেছেন। তাই এবার আমাদের দুর্গা প্রতিমা তৃণমূলের দলীয় পতাকা দিয়েই মহিষাসুর বধ করবেন”।
এছাড়াও ওই সদস্য জানিয়েছেন, “রাজ্যের মুখমন্ত্রী এবারে পুজো কমিটিগুলিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছেন তাই অনেক পুজো কমিটি ভাল ভাবে পুজো করতে পারছে। আর মুখমন্ত্রী যেভাবে রাজ্যের উন্নয়ন করে চলেছেন সে সব দেখেই এবার আমরা আমাদের দুর্গাপ্রতিমাকে অন্য ভাবেই সাজিয়েছি।”

এবার আসা যাক পূর্ব মেদিনীপুরে। বলা হয় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) খাস তালুক এই জেলা। এখানে তমলুকে হঠাৎ যেন উঠে এসেছে রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক দপ্তর!
হাওড়া থেকে গঙ্গা পেরিয়ে “নবান্ন (Nabanna) এবার তমলুকের মাঠে। প্যান্ডেল তৈরি হওয়ার পরেই চমকে গিয়েছিলেন এলাকার মানুষ।


হুবহু নবান্ন -র মত দেখতে পুজো মণ্ডপ তমলুকের একটি ক্লাবের দুর্গাপুজোয়। মণ্ডপের অন্দর ও বহিঃসজ্জায় তুলে ধরা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) চালু করা বিভিন্ন প্রকল্প। আর তাতে মূল মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে রাজ্যের প্রশাসনিক হেডকোয়ার্টার নবান্নর ধাঁচে।

থিমে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা জেলা থেকে কলকাতা প্রতিটি ক্লাবেরই।
যেমন, উত্তর ২৪ পরগণার (North 24Parganas Durga Puja) অরুণাচল পল্লীমঙ্গল দুর্গোৎসব কমিটি। ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবার এই মণ্ডপের থিম হল “মনের জানালা বই” (Moner Janala Boi)। দুটি পুস্তক প্রকাশনা সংস্থা (Publishing House) এই দুর্গোৎসবে তাদের বইয়ের সম্ভার নিয়ে যোগ দিয়েছে।


পুজোর থিম বই কেন? উদ্যোক্তারা বলছেন, বই হল মানুষের জ্ঞান বিকাশের বন্ধু। দুর্গোৎসবের মতো সর্বজনীন উৎসব সব জ্ঞানের আলো জ্বালাতে সহায়ক হয়ে উঠুক । ঘরের জানালা খুললেই যেমন আলো বাতাস ঢুকে ঘরকে আলোকিত করে, মনের জানালা খুলে দিতে হবে। সেই পথ ধরে বইয়ের মাধ্যমে সারা বিশ্বের জ্ঞানের আলো ঢুকুক। এই পুজোর উদ্বোধন করেছেন প্রখ্যাত কবি জয় গোস্বামী (Joy Goswami)।

এবার আসা যাক কলকাতার মধ্যেই তুলনামূলক কম বাজেটের একটি পুজোয়। একেবারে ভিন্ন স্বাদের থিম নিয়ে হাজির হয়েছে বাঘাযতীন (Baghajatin) এলাকার মৈত্রী সংসদ। এবারে তাদের থিম “সঞ্জীবন”। বিষয় মরণোত্তর দেহ, অঙ্গ ও টিস্যু দান বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা। এর সমগ্র পরিকল্পনায় আছেন সুদীপ্ত পাল আর সোমনীল সাহা। যারা আবার উদ্যোক্তাও বটে।


কেন এই বিষয়কে তারা বেছে নিল।
মৈত্রী সংসদের সদস্য সুদীপ্ত, বাসুদেব আর সোমনীলদের বন্ধু ২৯ বছরের রাহুল দে গত আড়াই বছর ধরে কিডনির সমস্যায় অসুস্থ। দুটো কিডনিই খারাপ। ডায়ালেসিস চলছে। অবিলম্বে কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন।
শুধু রাহুল নয়, রাহুলের মত অন্যান্যরা নতুন জীবন পেতে পারেন। শুধুমাত্র কিডনি নয়, হার্ট, লিভার, প্যানক্রিয়াস ইত্যাদির সমস্যার জন্য মৃত্যুপথযাত্রীও নতুন জীবন লাভ করতে পারেন।


থিমের এই নতুনত্বের কারণে মন্ডপে ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার মানুষ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *