আজ খবর ডেস্ক:
তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই বাড়ছে জটিলতা। বারবার বয়ান বদলের অভিযোগ উঠছে প্রীতি (Priti Jana) ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে। এদিকে পুলিশ অভিযোগ করছে, তাদের ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছে মা ও মেয়ে। অন্যদিকে মৃত অয়নের (Ayan Mondal) বাবা ও বন্ধুর অভিযোগ, খুনের ঘটনায় প্রীতির মায়ের নাম জড়াতে বাধ্য করেছিল পুলিশ (Haridevpur Murder Case)।


নয়া মোড় হরিদেবপুরের যুবক খুন কাণ্ডে। তাঁকে ছাড়া আরও ৩ যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল অয়নের বান্ধবীর। আর এই নিয়েই লাগাতার অয়নের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল তাঁর।
অয়নকে খুন করে মালবাহী গাড়ি করে দেহ লোপাটের অভিযোগে ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে অয়নের প্রেমিকা প্রীতি জানা ও তাঁর মা, বাবা, ভাই এবং ভাইয়ের এক বন্ধু। খুনের তদন্ত শুরু করার বেশ কয়েকদিন পর পুলিশ সূত্রে খবর, অয়ন ছাড়াও আরও তিন যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল প্রীতির। অয়ন-সহ প্রত্যেককেই প্রীতি আলাদা আলাদা করে সময় দিতেন। এঁদের মধ্যে একজন আবার থাকতেন প্রীতির বাড়ির পাশেই।

গত দশমীর রাতে প্রীতিদের বাড়িতে যাওয়ার পর অয়ন ছাদে উঠে লুকিয়ে থাকলেও ধরা পড়ে যায়। বেশি রাতে যখন অয়নের বন্ধু রাজু তাঁকে ফোন করেন, তখন তাঁকে অয়ন প্রীতির এক বন্ধুর নাম করেই বলেন যে, ওই বন্ধুটির সঙ্গে তাঁর ঝামেলা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জেনেছে, প্রীতি তাঁর ওই “ঘনিষ্ঠ” বন্ধুটিকেও ডেকে এনেছিল। সেই বন্ধুটি অয়নের সঙ্গে ঝামেলা শুরু করে বলে রাত তিনটে নাগাদ বন্ধুকে ফোনে জানিয়েছিল অয়ন। আর সেটাই ছিল অয়নের শেষ ফোন কল।
পুলিশের কাছে খবর, ঝামেলা করার পর ওই যুবক প্রীতির বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অয়নকে খুন করার পর প্রীতি তার ওই বন্ধুটিকেও ফোন করে অয়নের দেহটি লোপাটে সাহায্য করার জন্য ডাকে। কিন্তু বেগতিক বুঝে ওই বন্ধুটি রাত তিনটের পর আর প্রীতির বাড়িতে যায়নি। তাই প্রীতির ভাই তার বন্ধুদের ফোন করে ডাকে। তবে প্রীতির ওই বন্ধুটি খুনের ব‌্যাপারে কী তথ্য জানত, তা জানতে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা।

সে ছাড়াও আর ও তিন যুবকের সঙ্গে প্রীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কথা জানার পরেই অয়ন ও প্রীতির মধ্যে গন্ডগোল বাঁধে। সঙ্গে অয়নের গোলমাল বাধে।
তদন্তকারীদের অনুমান, অন্য যুবকদের সঙ্গে প্রীতির প্রেম করা আটকাতেই দুজনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি মোবাইল বন্দী করে রেখেছিল অয়ন। প্রীতি অন্য কারোর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালে বা বিয়ে করে নিলে এই ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার হুমকি দিতো অয়ন। আর সেই কারণেই প্রীতি ও তার মায়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল অয়নের মোবাইলটি হস্তগত করার। ফলে ত্রিকোণ সম্পর্কের জেরে নয়, অয়নের থেকে তাঁর মোবাইল কেড়ে নেওয়া নিয়েই মূলত দশমীর রাতে ধস্তাধস্তি শুরু হয়েছিল বলে মনে করছে পুলিশ।


এদিকে হরিদেবপুরের দীনেশপল্লির বাসিন্দা অয়ন মণ্ডলের বাবা অমর মণ্ডল ইতিপূর্বে দাবি করেছিলেন, প্রীতির ছাড়াও তাঁর মা রুমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ছিল অয়নের। মঙ্গলবার অবশ্য সেই দাবি নাকচ করে পাল্টা পুলিশের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তিনি জানান, পুলিশের চাপেই তিনি এই কথা বলেছিলেন। আসলে অয়নের সঙ্গে শুধু প্রীতিরই সম্পর্ক ছিল।
অয়নের বন্ধু রাজু প্রামাণিকেরও দাবি, সোমবার থেকে তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি ফোন (Threat Call) পাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, দ্রুত তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দেওয়ার লক্ষ্যেই কি তদন্তে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে পুলিশ?

অয়নের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট (Postmortem Report) হরিদেবপুর থানার পুলিশের হাতে এসেছে। মাথায় ইটের ঘায়েই যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, সেই ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত। প্রীতি জানাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ সেই রক্তমাখা ইটটিও উদ্ধার করেছে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অয়নের পাশাপাশি আরও তিন যুবকের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন প্রীতি। তিন প্রেমিকের সঙ্গেই তিনি নিয়মিত ফোনালাপ এবং মেলামেশা করতেন। প্রীতির বাড়িতেও ছিল তাঁদের অবাধ যাতায়াত। তা নিয়ে ক্ষোভ ছিল অয়নের।
প্রীতির মায়ের আবার দাবি, তাঁর মেয়ে যখনই হোস্টেল থেকে বাড়িতে ফিরত, তখনই অয়ন তাঁকে সহবাসের জন্য চাপ দিত। আর তা না করলেই অশ্লীল ভিডিও এবং ছবি ফাঁসের হুমকি দিত।
জেরায় প্রীতি ও একাধিকবার দাবি করেছে, অয়ন তাঁকে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতে বাধ্য করত। আর সেই ঘনিষ্ঠতার মুহূর্তগুলি তুলে রাখত মোবাইলে। প্রীতি পরে ঘনিষ্ঠ হতে আপত্তি জানালে অয়ন নাকি তাঁকে বলেছিল, অশ্লীল ছবি ও ভিডিওগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় সে আপলোড করে দেবে। প্রীতির দাবি, এভাবে অয়ন আরও অন্তত ৪জন যুবতীর সঙ্গে নিয়মিত শারীরিক ঘনিষ্ঠতা রেখেছিল। পুলিশের কাছে তাঁদের কয়েকজনের নামও বলেছে প্রীতি।
অয়নের সঙ্গে কোনও পর্ন সাইট (Porn Site) বা ব্লু ফিল্ম (Blue Film) চক্রের যোগ ছিল কী না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *