আজ খবর ডেস্ক:
তাঁর জীবন কোনও ফিল্মের থেকে কম চিত্তাকর্ষক ছিল না। মৃত্যুর পরেও তার থেকে বেরোতে পারলেন না জয়ললিতা (Jayalalithaa)। ২০১৬ সালের ৫ই ডিসেম্বর মৃত্যু হয় জয়ললিতার। মৃত্যুর প্রায় ৬ বছর পরে তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট ঘিরে ফের দেশ জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ালো।


ডাক্তারি রিপোর্টে (Medical Report) বলা হয়েছিল, হৃদ্‌রোগে (Heart Attack) আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছিলেন জয়ললিতা। পাশাপাশি তাঁর দেহের একাধিক অঙ্গও কাজ করা বন্ধ করে দেয় (Multi Organ Failure)। এই কথাটা জানাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দু’মাস সময় নেয়। তখন থেকেই জয়ললিতার অনুগামীদের মধ্যে সন্দেহ ছড়িয়েছিল। তৈরি হয়েছিল বিতর্ক।
নিছক মৃত্যু নাকি এই মৃত্যুর পেছনে অন্য কিছু আছে? গোটা বিষয় খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিশন তৈরি করা হয় সে সময়।

তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এআইএডিএমকে-র প্রাক্তন প্রধান জয়ললিতার মৃত্যু নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিল কমিশন। কমিশনের মাথায় ছিলেন আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আরুমুগাসমি (Arumugasamy Commission) সহ বেশ কয়েকজন। এই মৃত্যু নিয়ে প্রথম থেকেই “আম্মা”র অনুগামীরা দাবি করেছিলেন, তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই দাবিতেই সিলমোহর দিয়েছে কমিশন। ৬০৮ পাতার রিপোর্ট পেশ করেছে কমিশন।
রিপোর্টে ‘আম্মা’র মৃত্যুর জন্য শশীকলাকেই (VK Sasikala) দায়ী করা হয়েছে।

এদিকে, কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশে আসার পরই শশীকলা এবং সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল টিমের ওপর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জয়ার মৃত্যু পরিকল্পিত হতে পারে বলে ইঙ্গিত রয়েছে তামিলনাড়ু সরকারের (Tamilnadu Government) গড়া তদন্ত কমিশনে। চেন্নাইয়ের (Chennai Apollo Hospital) অ্যাপেলো হাসপাতালে মারা যান জয়া। তাঁর মৃত্যুতে কোনও রহস্য নেই বলে AIIMS ছাড় দিলেও, তামিলনাড়ুর সরকারের তদন্ত কমিশন অন্য কথা বলল।
জয়ললিতার মৃত্যুর তদন্তে গঠিত কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জয়ললিতার মৃত্যুর জন্য দায়ী তাঁর প্রিয় বান্ধবী শশীকলা। শশীকলাকে জয়ললিতার ছায়াসঙ্গী বলা হতো। মাঝে বান্ধবীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছিল জয়ললিতার। পরে অবশ্য সেই বিবাদ মিটিয়ে নেন তাঁরা।

মারা যাওয়ার আগে অ্যাপোলোতে ৭৫ দিন ভর্তি ছিলেন জয়ললিতা। অভিযোগ, তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবাইকেই অন্ধকারে রেখেছিলেন। বিশেষ কয়েক জনের বাইরে কেউ জানতেনই না, কেমন আছেন জয়ললিতা। এমনকী, তাঁর সঙ্গে প্রায় কাউকে দেখা করতে দেওয়া হত না।
জয়া আম্মার অনুগামীদের অভিযোগ ছিল, শশীকলা স্লো পয়জন (Slow Poison) করেছেন জয়ললিতাকে।
মঙ্গলবারই তামিলনাড়ু বিধানসভায় এই রিপোর্ট পেশ করে কমিশন। ৬০৮ পাতার এই রিপোর্ট এর আগে মুখ্যমন্ত্রী স্টালিনের (M K Stalin) কাছেও রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে।


রিপোর্টে বলা হয়েছে,
১) শশীকলার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিজয় ভাস্কর, প্রাক্তন স্বাস্থ্যসচিব রাধাকৃষ্ণন এবং চিকিৎসক শিবকুমার। এদের পরিকল্পিত চক্রান্তেই মারা যান তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়লালিতা।
২) জয়ললিতাকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু শশীকলার নির্দেশেই সেটা করা হয়নি।
৩) জয়ললিতার হার্টের সমস্যা থাকা সত্ত্বে তাঁর এনজিওপ্লাস্টি (Angioplasty) করা হয়নি।
৪) অ্যাপেলো হাসপাতালের পক্ষ থেকে বাইরে থেকে চিকিৎসক ডেকে এনে চিকিৎসা করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেটা করা হয়নি।

২০২৭ পর্যন্ত কোন নির্বাচনে লড়তে পারবেন না শশীকলা। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। জয়ললিতা মারা যাওয়ার পরেই কার্যত দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে এআইএডিএমকে (AIADMK)।
জয়লালিতা হাসপাতালে থাকাকালীন তাঁর চিকিৎসার সব রকম কাজ শশীকলার নির্দেশেই হত। এমনকী জয়ললিতার খাবারও শশীকলার নির্দেশে যেত। ৪ ডিসেম্বর জয়ললিতা মারা গেলেও ৫ তারিখ সেকথা ঘোষণা করা হয়। তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে,পুরোটাই হয়েছিল শশীকলার নির্দেশে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *