আজ খবর ডেস্ক:
আপডেট: মানিকের গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করে ফের সুপ্রিম কোর্টে গেলেন তাঁর আইনজীবী। শুনানি হওয়ার কথা মঙ্গলবার দুপুরেই।
সুপ্রিমকোর্টের (Supreme Court) রক্ষাকবচ মিলেছিল সিবিআইয়ের (CBI) হাত থেকে বাঁচার জন্য। সেই ফাঁকে গ্রেপ্তার করে নিল ইডি (ED)।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) গ্রেপ্তারির ঠিক ৮০ দিনের মাথায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (SSC Scam) গ্রেপ্তার হলেন মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya)। তিনি তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) এবং রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান।
তাঁকে সোমবার সারারাত জেরা করার পর এদিন সকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, সিবিআইয়ের তরফে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামে যে চার্জশিট (Chargesheet) পেশ করা হয়েছিল আদালতে, সেখানেও নাম ছিল মানিক ভট্টাচার্যর। চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, পার্থর মোবাইল ফোন থেকে মানিককে নিয়ে তথ্য পেয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তাতে দেখা গিয়েছে, পার্থর সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে মানিকের What’s App। আবার নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ করে পার্থকে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেছিলেন জনৈক ব্যক্তি।
চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয়েছিল, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছিলেন মানিক। সেই খবর ছিল পার্থর কাছেও। কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে বারবার অনুরোধ করার পরেও পার্থ এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেন নি। ইডি সূত্রে খবর, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিকের মোবাইল বার্তা আদানপ্রদানের প্রমাণ রয়েছে তাদের হাতে।
শুধু প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের থেকেই নয়, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি সহ একাধিক ক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। ইডির অভিযোগ, সবমিলিয়ে টাকার অঙ্ক কোটি পার হয়েছে।
ইডির দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁর মোবাইল ফোন। সেই ফোনে মানিকের নাম “মানিক ভট্টাচার্য ল” (Manik Bhattacharya L) বলে সেভ করা ছিল। পরে, জেরায় পার্থ জানিয়েছিলেন, “মানিক ভট্টাচার্য ল” আসলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং বিধায়ক।
সোমবার মানিক ভট্টাচার্যকে ডেকে পাঠিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা। সিজিও কমপ্লেক্সে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বয়ানে অসঙ্গতি ও তদন্তে অসহযোগিতার কারণে মঙ্গলবার ভোররাতে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। নদীয়ার (Nadia) পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়কের দুটি ফ্ল্যাটে এর আগে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। লুকআউট নোটিসও (Look Out) জারি করেছিল ইডি।
পাথর নামে জমা করা চার্জশিটে উল্লেখ করা রয়েছে, চাকরিপ্রার্থীদের থেকে ঘুষের টাকা নিয়ে তা পার্থ-অর্পিতার কাছে পাঠাতেন মানিক।
এমনকী, বাগ কমিটির রিপোর্টেও মানিক ভট্টাচার্যের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে এর আগেও একাধিকবার মানিককে তলব করা হয়। কিন্তু কখনও আদালতের রক্ষাকবচ দেখিয়ে কখনও আবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে হাজিরা এড়িয়ে যান মানিক।
এবার আসা যাক মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগ প্রসঙ্গে:
১) টেটে সাদা খাতা জমা দিয়েও চাকরি পেয়েছেন অযোগ্যরা। সব জেনেই তাঁদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য। শুধু তাই নয়,
বিএড কলেজ থেকে প্রত্যেকটা অ্যাডমিশনে বেনিয়ম করে টাকা নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এই অভিযোগও উঠেছে।
২) ২০১৪ টেটে কোনও নিয়ম না মেনেই অযোগ্যদের চাকরি দিয়েছিল প্রাইমারি শিক্ষা পর্ষদ। মানিক ভট্টাচার্যের নির্দেশেই যাবতীয় দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মহলের।
৩) সঠিক পদ্ধতি মেনে টেটের মেধা তালিকা বেরোয়নি। ইচ্ছে করেই কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
৪) প্রশ্ন ভুল থাকার পরেও সকলের নম্বর বৃদ্ধি করেনি পর্ষদ। নেপোটিজম, ফেভারিটিজম হয়েছে বলে অভিযোগ
৫) প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে চাকরিপ্রার্থীদের ভুয়ো তালিকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মানিকের বিরুদ্ধে। শুধু প্রাথমিকে নিয়োগেই দুর্নীতি নয়, নদিয়ার বেসরকারি ডিএলএড এবং বিএড কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পাশ করিয়ে দেওয়ার নামেও টাকা তোলা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিককে ইডির আধিকারিকরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠান। সূত্রের খবর, ইডির তরফে তাঁকে যে সময়ে তলব করা হয়েছিল, সেই সময়ের অনেক পরে তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন।
নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় মানিক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে যে নথি জমা দিয়েছিলেন, সেখানে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
এদিকে বেলা গড়াতেই ইডির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন ধৃত মানিক ভট্টাচার্যর আইনজীবী। এই গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করে তাঁর আইনজীবীর দাবি, সিবিআইকে বলা হয়েছে মানিককে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তারই মধ্যেই কেন ইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করল? একই মামলায় রক্ষাকবচের পরিধি কী হওয়া উচিত? এমনই সব প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলেন মানিকের আইনজীবী। মঙ্গলবার দুপুর ২টোর সময় বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি উঠতে পারে।