আজ খবর ডেস্ক:
৯ই অক্টোবর, ২০২২ এ মানসিক স্বাস্থ্য (Mental Health) নিয়ে ল্যানসেটের একটি রিপোর্ট চমকে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। ‘ল্যানসেট কমিশন অন এন্ডিং স্টিগমা অ্যান্ড ডিসক্রিমিনেশন ইন মেন্টাল হেলথ’ (LCESDMH) এর মতে, বিশ্ব জুড়ে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। গড় করলে দাঁড়ায় বিশ্বে প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১ জন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
‘Worse than the condition itself’—new Lancet Commission calls for radical action to #EndStigmaAndDiscrimination against people with mental health conditions globally.
— The Lancet (@TheLancet) October 9, 2022
👉 https://t.co/giH6oYnpDm #WorldMentalHealthDay pic.twitter.com/TgRyM0AZuT
১০ থেকে ১৯ বছর বয়সিদের প্রতি ৭ জনে ১ জন মানসিক উদ্বেগে ভুগছেন।
ভারতের (India) ক্ষেত্রে কোভিডের (Covid 19) প্রথম বছরে মানসিক সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এমনিতেই তথ্য বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় আত্মহত্যার (Suicide) কারণে। এই সংখ্যার মধ্যে ভারতেই ২০২১-এ আত্মহত্যা করেছেন প্রায় ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৩ জন। এই তথ্য উঠে এসেছে ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’-র (NCRB) সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে। NCRBর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ১২০ জনের মৃত্যুর কারণই হল আত্মহত্যা। শুধু তাই-ই নয়, ২০২১-এ আত্মহত্যার কারণে মৃত্যুর হার গত বছরগুলোর তুলনায় ৬.১ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০-সালে সেই সংখ্যা ছিল ১৫৩,০৫২। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩৯,০০০।
মনোবিদদের মতে, আমজনতার কাছে এখনও মানসিক সমস্যা আছে মানেই সেই মানুষটি “পাগল”! এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কোভিডের সময় জুড়ে নানা ধরনের প্রচার হলেও সামগ্রিক ছবি যে খুব একটা বদলায় নি, তা ওপরের পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।
কেন বাড়ছে অবসাদ?
চিকিৎসকরা (Psychiatrist) বলছেন, পেশাগত চাপ (Work Pressure), সম্পর্কের টানাপোড়েন (Relationship Stress), অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়া (Financial Crisis), পারিবারিক ঝগড়ার (Family Problem) মত সমস্যা মানুষের মনকে দুর্বল করে তোলে। জীবনের সব সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান না পেয়ে চরম অস্বস্তি, উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
এছাড়াও বর্তমান সময়ে ডায়াবিটিস (Diabetes), কোলেস্টেরলের (Cholesterol) মত অবসাদও ছড়িয়ে পড়ছে। ম শিশু থেকে প্রৌঢ়— যে কোনও বয়সেই মনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। তবে এই সমস্যায় ভুগলে বেশির ভাগ মানুষই তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে চান না।
মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কিছু হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। হরমোনের (Hormones) ভারসাম্য বিঘ্নিত হলেই মুশকিল।কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন?
১) যদি মনঃসংযোগে সমস্যা হয়
২) অবসন্ন লাগে
৩) কাজের ইচ্ছে চলে যায়
ধরে নেওয়া হয় মস্তিষ্কে ডোপামিনের (Dopamine) মাত্রা কমে গিয়েছে। অপর একটি হরমোন হলো সেরোটোনিন (Serotonin)। যার নেতিবাচক প্রভাব খুব বেশি। যেমন,
১) হাল ছেড়ে দেওয়া
২) অপরাধবোধে ভোগা
৩) আত্মহত্যার প্রবণতা
ইত্যাদি উপসর্গ বোঝায় সেরোটোনিনের মাত্রার হেরফের। এর প্রকাশও অনেক বেশি। ঘুমের চক্র বিঘ্নিত হওয়া, যৌনইচ্ছা কমে যাওয়াও এর অন্যতম উপসর্গ। এছাড়াও, নরএপিনেফ্রিনের (Norepinephrine) ক্ষেত্রে শারীরিক উপসর্গ বেশি প্রকট। ১) সারা শরীরে ব্যথা বা জ্বালা করা
২) চিনচিন করার মত লক্ষণ দেখা যায়। এ রকম কোনও সমস্যা দেখা দিলেই মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
মানসিক সমস্যা লুকিয়ে না রেখে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। জানেন কী, দীপিকা পাড়ুকোন (Deepika Padukone) , বিরাট কোহলি (Virat Kohli) থেকে এসআরকে (Shahrukh Khan), জীবনের কোনও না কোনও সময়ে এরা প্রত্যেকেই অবসাদে ভুগেছেন? কিন্তু নিজের মধ্যে লুকিয়ে না রেখে সেই সমস্যা ভাগ করে নিয়েছেন সকলের সঙ্গে।
এই তালিকায় সবার প্রথমেই দীপিকার নাম না রাখাটা অন্যায় হবে। ২০১৫ সালে যখন বিষণ্নতাকে একটা ব্যক্তিগত দুর্বলতা হিসেবে ধরা হতো, সেই সময় দীপিকা ভারতীয় জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি শুরুতে ভেবেছিলাম, বোধ হয় দুশ্চিন্তা আর মানসিক চাপ থেকে এ রকম হচ্ছে। তাই আমি অন্য কিছুতে মন দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কাজ কমিয়ে দিয়েছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছি। আমি কোনও কিছুতেই মন দিতে পারছিলাম না। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতেও পারতাম না, ঘুম তো দূরের কথা। আমি দীর্ঘমেয়াদি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলাম।”
বলিউড বাদশা শাহরুখ খানও কথা বলেছেন নিজের বিষণ্নতায় ভোগা নিয়ে। এটা ঘটেছিল ২০১০ সালে, তাঁর কাঁধের অপারেশনের পর। শাহরুখ বলেছিলেন, “আমি গভীর বিষণ্নতায় ডুবে গিয়েছিলাম। আর মনের ব্যথা যে শরীরে কীভাবে জেঁকে বসে, তা প্রত্যক্ষ করেছি। এভাবেই আমি কাঁধের বারোটা বাজিয়েছি। আর শেষমেশ অপারেশনও করাতে হয়েছিল। তবে এখন ভাল আছি। আমার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা আরও কঠিন। কেননা, আমি খুবই একান্তে বাঁচতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি শান্ত, অন্তর্মুখী আর লাজুক। মাঝেমধ্যেই মানুষ আমার আবেগ, ভালবাসা, বন্ধুত্ব, রাগ এগুলো নিয়ে ভুল বোঝে। অন্তর্মুখী মানুষদের বোধ হয় এ রকম সঙ্কটে পড়তেই হয়।”
ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বিজয়ীর হাসির পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই তাঁর হতাশা ধরা পড়ে ক্যামেরায়। জনপ্রিয় এক ক্রিকেট চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কোহলি জানিয়েছিলেন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর যুদ্ধের কথা। ৩৩ বছরের ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের বয়ান ছিল, “আমার মনের অবস্থা আমার প্রখরতার ওপর প্রভাব ফেলছিল। আমি আমার নিজের হারানো প্রখরতা ফিরে পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করছিলাম। কিন্তু আমার মন কেবলই আমার শরীরকে বলছিল থামতে। মন আর শরীর—দুই–ই আমাকে পেছন দিকে টেনে ধরছিল।”
এই প্রতিবেদন আমরা শেষ করব আরেক বলিউড ডিভা ইলিয়ানা ডি ক্রুজ (Ileana D’Cruz) দীর্ঘ সময় ধরে বডি ডিজমরফিয়ায় (Body Dysmorphia) ভুগেছেন। অর্থাৎ তিনি তাঁর শরীর নিয়ে প্রবল হীনম্মন্যতায় ভুগতেন।
এটা তাঁর আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিত। সব সময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রাখত। আর বিষণ্নতাও চেপে ধরত। এটা ইলিয়ানার পেশাগত জীবনেও মারাত্মক খারাপ প্রভাব ফেলেছে। কেননা, তিনি ক্যামেরার সামনে স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন না। ছোটবেলায় বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছিলেন। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসতেন। এখন অবশ্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার পর পুরোপুরি সুস্থ ইলিয়ানা।