আজ খবর ডেস্ক:
প্রতিশ্রুতি মিলেছে, কিন্তু আজও চাকরি মেলেনি। “আমাদের প্রত্যেকের চাকরি চাই। চাকরি না পেলে আমরা আমৃত্যু অনশন করব।” ভাঙা গলায় অদম্য, আন্দোলনে অনড় চাকরিপ্রার্থীরা। জলের বোতল আর খাবার ছুড়ে ফেলে দিয়ে ২০১৪ প্রাইমারি টেট নট ইনক্লুডেড (Primary TET Not Included) চাকরিপ্রার্থীরা মঙ্গলবার দুপুর থেকে অনশন শুরু করলেন।


এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের থেকে ইতিমধ্যেই স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা কোনমতেই বাড়ানো হবে না। ফলে এবার সংঘর্ষ আরও বাড়বে বলেই মনে করছে সব মহল।
পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে শূন্যপদ সাড়ে তিন লক্ষ। প্রাথমিক শিক্ষকের শূন্যপদ ১ লক্ষ ২০ হাজার। টেট পাশ সফল ছাত্র ছাত্রী ২২ হাজারের কিছু বেশি।
তাই বিক্ষোভের ২৪ ঘন্টা পার হতেই এবার আমৃত্যু অনশন (Hunger Srike) আন্দোলন শুরু করলেন ২০১৪-র টেট উত্তীর্ণরা। কিন্তু পর্ষদের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল ৪০ বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়া চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ সম্ভব নয়।


চাকরির দাবিতে টেট-উত্তীর্ণদের বিক্ষোভের পিছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে, অন্যায্য দাবি’ মানবে না প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে এমনই মন্তব্য করলেন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল (Gautam Pal)। তিনি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। তাঁদের আবেগের প্রতি সহমর্মী। কিন্তু অন্যায্য দাবি মানা যায় না।’’

আন্দোলনকারীদের অবস্থান তুলে নেওয়ার জন্য বারে বারেই আবেদন জানাচ্ছে পুলিশ। তা না হলেই আইনানুগ পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি ও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনড় আন্দোলনকারীরা এই মুহূর্তে খোলা রাস্তায় শুয়ে আছেন
সল্টলেকের করুণাময়ীতে (Saltlake Karunamoyee)। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের (Primary Education Department) দপ্তরের সামনে লাগাতার অবস্থান-আন্দোলন চালাচ্ছেন ২০১৪-র প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণরা। ইতিমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকজন। করুণাময়ীর ওই জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে বিধাননগর কমিশনারেট (Bidhannagar Commissionerate)।


সোমবার রাতভর অবস্থানের পর এ দিন পুলিশ করণাময়ী থেকে আন্দোলনকারীদের সরতে বললে উত্তেজনা তৈরি হয়। খাবার, বোতল থেকে পানীয় জল রাস্তায় ফেলে টেট (Primary TET) উত্তীর্ণ বিক্ষোভকারী চাকরিপ্রার্থীরা অনশনের ঘোষণা করেন। রাস্তায় চকের মাধ্যমে নিজেরে কথা তুলে ধরেন তাঁরা। চাকরির নিয়োগ না মেলা পর্যন্ত আন্দোলন-অবস্থান চলবে বলে দাবি চাকরিপ্রার্থীদের।

একদল চড়া রোদে শুয়ে রয়েছেন রাস্তায়। একদল আবার ভাঙা গলায় স্লোগান দিচ্ছেন। আন্দোলনস্থলেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ১০ জনের ও বেশি চাকরিপ্রার্থী। তবুও অবস্থান থেকে পিছু হঠতে রাজি নন একজন ও। তাঁদের সম্মিলিত দাবি, আর কোনও পরীক্ষা নয়। অবিলম্বে দিতে হবে নিয়োগপত্র।
মঙ্গলবার বেলা গড়াতেই আমরণ অনশন শুরু করলেন চাকরিপ্রার্থীরা। ইতিমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। ১০ জনকে ভর্তি করতে হয়েছে হাসপাতালে।
বসে থাকার ক্ষমতা নেই। রাস্তাতেই শুয়ে এক চাকরিপ্রার্থী বললেন, “আমি মরে যাব, তবুও আর আন্দোলন ছাড়ব না। আমি ৮ বছর ধরে বেকার। আমার আর চাকরির বয়স নেই। আমি আর ইন্টারভিউ দিতে পারব না। আর কোনও পরীক্ষায় বসতে পারব না। আমার মেরিট লিস্টে নাম ছিল। আমি নট ইনক্লুডেড।”

আন্দোলনের মাঝেই অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েকজন রাস্তাতেই শুয়ে পড়লেন। বাকিরা মাথায় জল-বাতাস দিতে থাকছেন। বিক্ষোভ ক্ষেত্র থেকে তাঁদের কয়েকজন কে নিয়ে গেন অ্যাম্বুলেন্স।
সোমবার বেলা ১২টা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সামনে চলছে অবিরাম আন্দোলন।
চলতি বছরে নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছে। যেখানে, বলা হয়েছে, ২০১৪ ও ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণরা অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু একবার TET পাস করার পর, আর কতবার ইন্টারভিউ দিতে হবে? প্রশ্ন বিক্ষোভকারীদের।


এই অবস্থায় এদিন সাংবাদিক বৈঠকে নতুন পর্ষদ সভাপতি বলেন, ‘‘আন্দোলনকারীদের দাবি আইনানুগ নয়।’’ গৌতম আরও বলেন, ‘‘আমি তো জল খাওয়ার সময় পাচ্ছি না। আমরা কেউ স্বাভাবিক ভাবে অফিসে ঢুকতে বেরোতে পারছি না। খাবার আনতে পারছি না। আন্দোলনকারীরা বোর্ডের কাজ বিঘ্নিত করছেন। রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে এই আন্দোলনে। সকল প্রার্থীকেই ইন্টারভিউতে অংশ নিতে হবে।’’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *