আজ খবর ডেস্ক:
চাকরিপ্রার্থীদের পাশে আসলে কে? এদিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে গেল দড়ি টানাটানি।
চাকরিপ্রার্থীদের (TET Protesters) তুলে দেওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই বাম ছাত্র-যুবরা (SFI-DYFI) ঘোষণা করেছিল, শুক্রবার দুপুরে তারা জমায়েত করবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই করুনাময়ীতে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল (Agnimitra Paul) । গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, করুণাময়ী-কাণ্ড কাজে লাগাতে মরীয়া রাজ্য বিজেপি (BJP Bengal)।
চাকরিপ্রার্থীদের আইনি লড়াইয়ে প্রথম থেকেই সঙ্গে ছিলেন সিপিআইএম (CPIM) সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikash Ranjan Bhattacharyya)।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে কিছুটা অ্যাডভান্টেজ পেয়েছে সিপিএম। নিউ রোডে গান্ধী মূর্তি অথবা মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশ, পুজোর দিন গুলোয় বারে বারে চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গ দিয়েছেন মহম্মদ সেলিম (Md.Selim) বিমান বসুরা (Biman Basu)। বিরোধিতার তুলনামূল্য লড়াই থেকে পিছু হটতে চায়নি বিজেপি। নবমীর দিন দীর্ঘক্ষণ সেখানে কাটিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।
ফলে অনেকেই মনে করছেন, শাসকদলের বিরোধিতায় লড়াই শুরু হয়েছিল পূজোর সময় থেকেই। যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিজেপির থেকে কিছুটা এগিয়েই সিপিএম।
এই পরিস্থিতি কী করে নিজেদের অনুকূলে আনা যায় তা নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, সেখানে নানা বিষয়ে আলোচনা হলেও এখনও পর্যন্ত আন্দোলনের কোনও নির্দিষ্ট রূপরেখা চূড়ান্ত হয়নি। শুধু এটুকু ঠিক হয়েছে যে, “আর বিলম্ব নয়”। শনিবার থেকেই পথে নামতে চায় গেরুয়া শিবির।
এদিকে শুক্রবার বাম সমর্থকদের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে বেলা বাড়তেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল করুণাময়ী। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিধাননগর পুলিশের অভিযানের প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বাম সমর্থকদের একাংশ। রাস্তায় শুয়ে বিক্ষোভ দেখতে শুরু করে DYFI-SFI বিক্ষোভকারীরা। সকালেই বিধান নগর থেকে পুলিশ আটক করে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের পুত্র সপ্তর্ষি দেবকে। যদিও পড়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
করুণাময়ীতে ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ আন্দোলনকারীদের অবস্থানে পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। ফেসবুক-টুইটারে (Facebook/Twitter) সরব হয়েছেন অপর্ণা সেন (Aparna Sen), শ্রীলেখা মিত্র (Sreelekha Mitra), বাদশা মৈত্র (Badsha Moitra), কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়রা (Kamaleshwar Mukherjee)। বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশের অভিযোগ, “সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে সরকার।”
The Trinamool govt is flouting the basic democratic rights of the hunger-strikers! Section 144 issued against a non-violent protest! Why? I strongly condemn the undemocratic and unethical action of the West Bengal govt!
— Aparna Sen (@senaparna) October 21, 2022
পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে প্রচুর সেলিব্রিটি এবং আলাদা আইনজীবী সেল থাকতেও বামেদের সঙ্গে এই লড়াইয়ে কেন পিছিয়ে পড়ছে বিজেপি? যদিও শুক্রবার আন্দোলনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) বলেন, ‘‘যে ভাবে চাকরিপ্রার্থীদের তুলতে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি। আমরা লাগাতার আন্দোলনে নামতে চলেছি। এই রাজ্য সরকারকে গদি থেকে না নামানো পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’’
অন্যদিকে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘এ নিয়ে বিজেপি কোন মুখে আন্দোলন করবে? ওরা তো গোটা দেশে এমনটা করে! বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে দুর্নীতির অন্ত নেই। আর আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপিও একই ভূমিকা নেয়।’’
এদিন বাম ছাত্র যুবদের কর্মসূচি ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল সিটিসেন্টার-১ চত্বর। বেলা ১২টার সময় জমায়েতের ডাক দিয়েছিল বামেরা। কিন্তু সেই কর্মসূচির আগেই সায়নদীপ মিত্র, মধুজা সেন রায়দের গ্রেফতার করে নেয় পুলিশ। তারপরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই নেতা কর্মীদের সঙ্গে কার্যত পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়।
এরপরেই মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, কলতান দাশগুপ্ত, ময়ূখ বিশ্বাস, পারমিতা ঘোষ চৌধুরিরা রাস্তায় বসে পড়েন। তাঁদের তুলতে কার্যত কাল-ঘাম ছোটে পুলিশের। এক পুলিশকর্মীর উদ্দেশে মীনাক্ষীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি কাগজ দেখান সিটি সেন্টারের সামনে ১৪৪ ধারা আছে। দেখাতে পারবেন?”
শেষ পর্যন্ত বাম ছাত্র, যুবদের আটক করে ভ্যানে তোলে পুলিশ। চ্যাংদোলা করে সরানো হয় মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়দের।
নতুন করে উত্তেজনা ছড়ানোর পর থেকেই নিরাপত্তার বজ্রআঁটুনিতে মুড়ে ফেলা হয়েছে করুণাময়ীতে পর্ষদের দফতর। গোটা এলাকা পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ।