আজ খবর ডেস্ক:
Suvendu-Mamata তাঁরা একে অপরের “ঘোষিত” প্রতিপক্ষ। বিশেষত ২০২১ বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম (Nandigram) কাণ্ডের পর থেকে প্রায় প্রতিদিন একে অন্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে চলেছেন।
তবে এদিন বিধানসভায় সেই দুজনই সকলকে চমকে দিলেন।
প্রকাশ্যে কিছু না বললেও উপস্থিত প্রায় সবাই ঘনিষ্ঠ মহলে এক বাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন, “বিষয়টা ঠিক হজম হল না।”
সাসপেন্স আর না বাড়িয়ে ঘটনা তাহলে খুলেই বলা যাক। বিধানসভায় এখন শীতকালীন অধিবেশন চলছে। শুক্রবার হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ঘরে গেলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক অশোক লাহিড়ি, অগ্নিমিত্রা পাল এবং মনোজ টিগ্গা।

Suvendu-Mamata প্রকৃতপক্ষে এই প্রথম বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে গেলেন বিরোধী দলনেতা। পরের ঘটনা আর ও চমকপ্রদ! বিধানসভায় নিজের বক্তব্যে শুভেন্দুকে “ভাই” বলেও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। রীতিমত উল্লেখযোগ্য হয়ে রইল শুক্রবার দুপুরের বিধানসভার ঘটনা।
এখানেই শেষ নয়, শুভেন্দু অধিকারীর বক্তৃতায় যেন কোনও বাধা না পড়ে— তৃণমূল বিধায়কদের সতর্ক করে বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাটি শুক্রবার সকালের। বিধানসভার অধিবেশন কক্ষ তখন কানায় কানায় পূর্ণ। শুভেন্দু বক্তৃতা করতে উঠেছেন। তখনই বিরোধী দলনেতাকে চায়ের নিমন্ত্রণ জানান মমতা। শুভেন্দুও যান মমতার সঙ্গে তাঁর ঘরে।

শুক্রবার ছিল সংবিধান দিবস (Constitution Day)। সে বিষয়েই বলতে শুরু করেছিলেন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু শুভেন্দুর বক্তব্য শুরু হতে না হতেই শাসক দলের বিধায়কদের বসার জায়গা থেকে একটা গোলমাল শুরু হয়। কানে আসতেই রুখে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কেউ বাধা দেবে না। সবাই চুপ করে থাকো।’’
কোনও কোনও তৃণমূল বিধায়ক টীকা-টিপ্পনীও কাটতে শুরু করেছিলেন। মমতা তাঁদেরও কড়া ভাষায় গোলমাল করতে বারণ করেন। সঙ্গে সঙ্গেই থেমে যায় গোলমাল, বক্তৃতা শেষ করেন শুভেন্দু।
দিন কয়েক আগেই নতুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (CV Ananda Bose) শপথগ্রহণ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল রাজ্য বিধানসভায়। শুভেন্দু শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে পাল্টা অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ ছিল, রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বসার জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল দুই বিজেপি ত্যাগী বিধায়কের পাশে।
তার ঠিক দু’দিন পর বিধানসভায় মমতা ও শুভেন্দু অধিকারীর দেখা হল।

মাত্রই মিনিট চারেক শুভেন্দু ছিলেন মমতার ঘরে। পরে মমতা বলেন, ‘‘শুভেন্দুকে চা খেতে ডেকেছিলাম।’’ আর শুভেন্দু বলেন, ‘‘এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। যদিও চা খাওয়া হয়নি।’’ শুভেন্দু আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সকলকে চা খেতে বলেছিলেন। কিন্তু বিধানসভায় অধিবেশন চলায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদেরও ব্যস্ততার কারণে চা খাওয়া হয়নি।
সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেও চমক বজায় ছিল। অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা শুভেন্দুকে ‘ভাই’ বলে উল্লেখ করেন। মমতা বলেন, ‘‘ভাইয়ের মত স্নেহ করতাম যাঁকে, সে বললেন গণতন্ত্র নিয়ে।’’ এমনকী শুভেন্দুর বাবা, তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর (Sisir Adhikari) কথাও শুক্রবার বলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘দল গঠনের সময় আপনি ছিলেন না। শিশির দা আমাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন। আমি তাকে সন্মান করি।’’ প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় কাঁথিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে লড়াইও করেছিলেন শিশির।

ফাইল ছবি


শুভেন্দুর “পিসি-ভাইপো লিমিটেড কোম্পানি” -র পাল্টা মমতাও নানা কথা বলেন। কিন্তু কখনও শুভেন্দুর নাম সে ভাবে বলেননি। তারই মধ্যে আজকের ঘটনা “অঘটনের বিধানসভা” হয়ে থেকে গেল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *