আজ খবর ডেস্ক:
Artificial Pancreas পৃথিবী জুড়ে প্রতিদিন বাড়ছে ডায়াবেটিস (Diabetes) রোগীর সংখ্যা। ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ যেখানে রক্তে শর্করা বা সুগারের (Blood Sugar) মাত্রা বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন (Insulin)। এটি আদতে একটি হরমোন (Hormone) যা প্যানক্রিয়াসের (Pancreas) বিটা সেল থেকে নিঃসৃত হয়। সাধারণত, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে সেটি লিভারে গিয়ে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়।

ইসুলিন এই গ্লুকোজকে দেহকোষের মধ্যে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। কোষের ভেতরে গ্লুকোজ অক্সিডাইজড হয়ে অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট (ATP) তৈরি করে, যার থেকে শক্তি আসে। এই শক্তিই কোষের পুষ্টি জোগায়। কিন্তু যদি বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যায় এবং ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায় তাহলে এই প্রক্রিয়াটা বাধা পায়। ইনসুলিন কোষের মধ্যে প্রবেশের জন্য যে রিসেপ্টরটি লাগে, সেটি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ইনসুলিন ঠিকমত কাজ করতে পারে না। ইনসুলিন কোষের মধ্যে গ্লুকোজকে প্রবেশ করাতে পারে না। রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যায়। একে বলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের (Cambridge University) গবেষকরা সফলভাবে একটি কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় (Artificial Pancreas) তৈরির পরীক্ষা চালিয়েছেন, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে (Type 2 Diabetes) আক্রান্ত মানুষকে নতুন জীবন দিতে পারে। Artificial Pancreas

এটি বিশেষ অ্যালগরিদম দ্বারা চালিত একটি অ্যাপ। যার সঙ্গে গ্লুকোজ মনিটর এবং ইনসুলিন পাম্প সম্পৃক্ত । এই কৃত্রিম অগ্নাশয়ের কাজ করার পদ্ধতি ডায়াবেটিস রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে পারে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েলকাম-এমআরসি ইনস্টিটিউট অফ মেটাবলিক সায়েন্সের গবেষকরা এই কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় তৈরি করেছেন যা স্বাস্থ্যকর গ্লুকোজের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এই যন্ত্র আসল অগ্ন্যাশয়ের মতই কাজ করে ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থ রাখার চেষ্টা করবে।
CamAPS HX নামে পরিচিত অ্যাপটি নির্ধারণ করে দেবে নির্দিষ্ট একজন মানুষের ক্ষেত্রে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বজায় রাখার জন্য ঠিক কতটা ইনসুলিন প্রয়োজন। গবেষণার সহ-নেতৃত্বকারী ডঃ শার্লট বাউটন জানাচ্ছেন, ”যাঁরা ইনসুলিন ইনজেকশন নিয়ে থাকেন, কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় তাঁদের সাহায্য করার জন্য একটি নিরাপদ এবং কার্যকর পদ্ধতি প্রদান করতে পারে এবং প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা সহজ। এটি বাড়িতে নিরাপদে প্রয়োগ করা যেতে পারে।” ‘নেচার’ (Nature) মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডিভাইসটির প্রথম ট্রায়ালের বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

ডঃ শার্লট বাউটন

পরীক্ষার জন্য ২৬ জন রোগীকে বেছে নেওয়া হয়েছিল এবং তাঁদের দুটি দলে ভাগ করা হয়েছিল। প্রথম দল আট সপ্তাহের জন্য কৃত্রিম অগ্ন্যাশয়ের পরীক্ষা করবে এবং তারপর ইনসুলিন ইনজেকশনের স্ট্যান্ডার্ড থেরাপিতে স্যুইচ করবে।
দ্বিতীয় গ্রুপটি প্রথমে ইনসুলিন ইনজেকশনের স্ট্যান্ডার্ড থেরাপি গ্রহণ করবে এবং তারপর আট সপ্তাহ পরে কৃত্রিম অগ্ন্যাশয়ে স্যুইচ করবে। দেখা গেছে, কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় ব্যবহার করার পর গড় গ্লুকোজের মাত্রা কমেছে। কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন, বা HbA1c নামে পরিচিত একটি অণুর মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে, যা রক্তে গ্লুকোজের সঙ্গে হিমোগ্লোবিন যোগ করার সময় তৈরি হয়।
এমপি৩ প্লেয়ারের মত একটা যন্ত্র লাগানো থাকবে কোমরে। সেটাই হল কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় (artificial pancreas)। শরীরের কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের দরকার পড়বে না। ঠিক কতটা ইনসুলিন দিতে হবে, কখন ইনসুলিন দেওয়া বন্ধ করতে হবে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কতটা রয়েছে–এইসবই দেখে বুঝে থেরাপি করবে সে নিজেই।


ওই যন্ত্র একবার লাগালে নিয়ম করে সে নিজেই শরীরে ইনসুলিন সরবরাহ করবে। শুধু তাই নয়, রোগীর শরীর বুঝে কী মাত্রায় ইনসুলিন দিতে হবে সেটাও ঠিক করবে ওই যন্ত্রই।
এই প্রযুক্তি মানুষের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পর্যবেক্ষণে রাখে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে হাইপোগ্লাইকেমিক অ্যাটাক হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাতে এ ধরনের অসুস্থতা দেখা দেয়, যখন রোগীরা সাড়া দিতে পারেন না বা শরীরের অবস্থা বোঝাতে পারেন না। এই এ যন্ত্র হাইপোগ্লাইকেমিয়ার আভাস দিতে পারে এবং মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার আগেই (কমপক্ষে ৩০ মিনিট) ইনসুলিন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে রোগীকে বিপদমুক্ত রাখে।

গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬৪ কোটি ছাড়িয়ে যাবে, ২০৪৫ সালে তা হতে পারে ৭৮ কোটির ও বেশি।  

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *