আজ খবর ডেস্ক:
Sujan Dasgupta বাঙালিকে নতুন গোয়েন্দা উপহার দিয়েছিলেন তিনি। ফেলুদা (Feluda) , ব্যোমকেশ (Byomkesh Bakshi), কিরীটি আদতে সিরিয়াস গোয়েন্দা। তাঁরা হাসেন কম, কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে রহস্য সমাধানে আগ্রহী বেশি। কিন্তু একেন বাবু (Eken Babu) ছিলেন একেবারেই অন্যরকম। আর তাই পাঠক ও দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন সহজেই।
তবে একেন বাবুকে যত জন চেনেন বা জানেন, তাঁদের অনেকেই হয়ত জানেন না এখানের স্রষ্টার নাম। তিনি সুজন দাশগুপ্ত (Sujan Dasgupta)। এদিন তিনি মারা গেলেন।
জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন ৭৮-এর সুজন। ঘটনাটি যখন ঘটে, তাঁর বাড়িতে তখন কেউ ছিল না। সুজনের স্ত্রী শান্তিনিকেতনে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তাঁর মেয়ে থাকেন আমেরিকায়। প্রতিদিনের মত বুধবার সকালেও তাঁর পরিচারিকা আসেন। লেখক দীর্ঘ সময় ধরে দরজা না খোলায় তাঁর বাইপাসের ধারের আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীদের ডেকে আনেন সেই মহিলা। কিন্তু তাঁরাও দরজা খুলতে ব্যর্থ হন। এর পরেই সুজনের শ্যালক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশে খবর দেন।
আমেরিকাতেই (America) থাকতেন লেখক সুজন দাশগুপ্ত। সম্প্রতি ‘দ্য একেন’ ছবির জন্য কলকাতায় আসেন। ইএম বাইপাসের ধারের বহুতল আবাসন ‘উদিতা’ থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। ফ্ল্যাটে সেই সময় তিনি একাই ছিলেন বলে খবর।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ১০টা নাগাদ দরজা ভেঙে লেখকের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয় ফ্ল্যাট থেকে। শোওয়ার ঘরের বাথরুমের সামনে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে।
১৯৬৭ সাল থেকে আমেরিকায় থাকেন লেখক। মূলত নিউ জার্সির বসিন্দা তিনি। সেখানে বসেই নিজের ভাবনায় সৃষ্টি করেছেন একেন বাবু চরিত্রটি। সাম্প্রতিক কালে ওটিটি (OTT) এবং ছবির সুবাদে প্রচুর ভালবাসা কুড়িয়েছেন দর্শকের থেকে।
মঙ্গলবার রাতে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে শেষ কথাও হয়েছিল সুজন দাশগুপ্তর। এমনিতে আমেরিকাবাসী হলেও বেশ কয়েক মাস হল তিনি কলকাতাতেই ছিলেন। এই বইমেলাতেই তাঁর নতুন বই প্রকাশ পাওয়ার কথা। ‘দ্য একেন’ ছবির সাংবাদিক সম্মেলনেও তিনি হাজির ছিলেন। শেষ ৫০ বছর ধরে তিনি থাকতেন আমেরিকাতেই।
দিন কয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে সুজন বলেছিলেন, “পর্দার একেনকে দেখে মাঝেমাঝে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। দর্শকের এত আগ্রহ এত ভালবাসা পেয়ে সত্যিই আপ্লুত। আমার একেন এখন সবার, তা নিয়ে হিংসা হয় না। তবে মাঝেমাঝে বুঝতে পারি না, কী লিখব না লিখব। আমার একেন বন্দুক ধরত না। পর্দার একেন বন্দুক নিয়ে ছোটে। না খারাপ লাগে না। বেশ ভাল লাগে। পদ্মনাভ-অনির্বাণ, ওরা এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে, আমার খারাপ লাগার কোনও জায়গাই নেই। আর আমার যখনই মনে হয় নতুন কিছু যোগ করতে হবে, তা সঙ্কোচ না করেই বলে দিই। ওরাও কিন্তু আমার কথা শোনে।”
এখনও পর্যন্ত একেন বাবু’র মোট ছ’টি সিজ়ন দেখানো হয়েছে ‘হইচই’-এ (Hoichoi)। চিত্রনাট্য পদ্মনাভ দাশগুপ্ত নিজের মত গড়ে নিলেও মূল গল্প ছিল সুজনেরই। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাঙালি আপন করে নিয়েছিল নিতান্ত মধ্যবিত্ত চেহারার গোলগাল, হাসিখুশি, ভুল-বকা গোয়েন্দাকে। এই সিরিজ়ের বিপুল জনপ্রিয়তার পরই একের পর এক ছবির প্রস্তাব আসতে থাকে।
সুজনের মেয়ে সায়ন্তনীও আমেরিকাবাসী লেখিকা। একেন বাবু’র পর এবার এক মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র তৈরির কাজে মন দিয়েছিলেন সুজন ও তাঁর স্ত্রী।