আজ খবর ডেস্ক:
Wig Village সুকুমার রায় লিখেছিলেন, “গোঁফের আমি /গোঁফের তুমি/ গোঁফ দিয়ে যায় চেনা”!
আর এখানে চেনা যায় মাথার চুল দিয়ে। মাথায় চুল গজাল, সেখান থেকে তা পরচুলা (Wig) হয়ে ক্রেতার মাথা পর্যন্ত পৌঁছনোর গল্প বেশ লম্বা।
সারা বিশ্বে চুলের (Hair) জোগানে শীর্ষে ভারত (India)। আর ভারতের মধ্যে শীর্ষে কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের এক গ্রাম।
মন্দিরে দান করা চুলেই পেট চলে এই গ্রামের মানুষ। দানের চুলের মহিমায় এখন গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত এই গ্রামের নাম। Wig Village
‘তন্নু ওয়েডস মন্নু’-তে কঙ্গনা রানাউতের (Kangana Ranaut) দু’রকমের চুলের সাজ মনে আছে? নানা ধরনের চুলের ছাঁট দেওয়া ‘উইগ’ তৈরি হয় অভিনেতা-মডেলদের সাজাতে। কেউ টাক ঢাকেন ‘উইগ’ দিয়ে। কেউ অন্য ছাঁটের চুল পরে চেহারায় বদল আনেন।
গোটা বিশ্বে পরচুলার প্রায় ৫৮০ কোটি ডলারের ব্যবসা হয়েছিল ২০২১ সালে। এ বছর তা আরও বাড়বে বলেই ধারণা। ‘উইগ’ তৈরি করতে অনেক ক্ষেত্রে কৃত্রিম জিনিস ব্যবহার করা হলেও তার এক-তৃতীয়াংশই তৈরি হয় আসল চুল দিয়ে। সেই চুলের অনেকটাই যায় ভারত থেকে।
২০২১ সালে ৭৭ কোটি আমেরিকান ডলারের চুল বিদেশে গিয়েছে এখান থেকে। ২০২০ সালের সঙ্গে তুলনা করলে সে সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ।
পৃথিবীর সর্বত্র সেই চুলের জোগান দেওয়ার ব্যবসায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভারত আর তা রয়েছে মূলত বাংলার এক গ্রামের দৌলতে। সেখানে ঘরে ঘরে তৈরি হয় নকল চুল। দেশের নানা প্রান্ত মিলিয়ে যত পরচুলা তৈরি হয়, তার চেয়েও বেশি তৈরি হয় শুধু এই একটি গ্রামেই।
গ্রামের নাম বাণীবন জগদীশপুর। হাওড়া (Howrah) জেলার আর পাঁচটি জায়গার মতই। গ্রামের ভিতরে এক একটি গলিতে একাধিক কারখানা। গ্রামবাসীদের রান্নাবান্না, লেখাপড়ার সঙ্গে সমান তালে চলতে থাকে খোঁপা, বেণী, ববছাঁট চুলের উইগ, লম্বা স্টেপকাট চুলের উইগ তৈরির কাজ!
গ্রামের বধূ থেকে মাঝবয়সি গৃহকর্তা— অধিকাংশেই কোনও না কোনও ভাবে নকল চুল তৈরির এই কাজে যুক্ত। কেউ চুল তৈরির কারখানার রোজের কর্মী, কেউ বা কারখানা চালান। কেউ আবার অন্য কাজ সামলে ফাঁকা সময়ে কিছুটা কাজ হাতে নেন।
যদিও দেখে বোঝার উপায় নেই প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্ক, সর্বত্র সেরা সুন্দরীদের সাজিয়ে তুলতে এই গ্রাম থেকে যায় পরচুলা।
প্রতি বছর এই চুল পাড়ি দেয় কানাডা, ফ্রান্স এবং ডেনমার্কে।
শুধু চুল নয়, বিভিন্ন ধরণের গোঁফ, দাড়ি, ভুরুও বানানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, ব্যবসা বাড়তে থাকায় আশপাশের গ্রামগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ছে এই শিল্প। কাঁটাবেড়িয়া, মল্লিকপাড়া, বড়গ্রাম, ওয়ালবেড়ে গ্রামেও এখন তৈরি হচ্ছে পরচুলার কারখানা।