আজ খবর ডেস্ক- রাত পোহালেই ৪ পুরসভায় ভোট। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে তৃণমূল অন্দরের সমীকরণ। আর এই সবকিছুর কেন্দ্রে এমন দুটি নাম রয়েছে, যা নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না দলের কেউই।
প্রথমে “আইপ্যাক” কে ঘিরে প্রার্থী তালিকা সংক্রান্ত জটিলতা আর তার ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতির। ফলে চলতি মাসেই ১০৮ টি পুরভোট নিয়ে জেলায় জেলায় অশান্তি অব্যাহত।
এবার তাই জোর জল্পনা, তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? পরিস্থিতি এমনই ঘোরালো হয়েছে যে অভিষেকের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি গোয়ায় বিধানসভা ভোটের পর অভিষেক ওই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।
এই মুহূর্তে গোয়ায় রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।বৃহস্পতিবার গোয়ায় দু’টি নির্বাচনী সভা করেছেন তিনি। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই বিজেপি এবং কংগ্রেসকে জোরালো আক্রমণ করেছেন। শুক্রবার দুপুরে অভিষেকের কলকাতায় ফেরার কথা। কিন্তু গোয়ার ভোট হওয়ার আগে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না। কারণ, একদিকে তিনি তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আবার অন্যদিকে গোয়ায় ভোটের দায়িত্ব তাঁরই কাঁধে।
সোমবার গোয়ায় ভোট শেষের পর বা মঙ্গলবার তিনি প্রকাশ্যে তাঁর অবস্থান জানিয়ে দিতে পারেন।
কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগণায় যে সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে, তাতে বেজায় ক্ষুব্ধ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
তবে এর মধ্যে অভিষেক ও মমতার মধ্যে মুখোমুখি আলোচনা হলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে বলে দাবি করছে দলের একটি অংশ।
দলের আরেক অংশ আবার মনে করছে , অভিষেক ‘পাল্টা চাপ’ দিতে চাইছেন। এবং সেটা তিনি করতে চাইছেন পদ ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে। যদিও অভিষেকের ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, এর মধ্যে পাল্টা চাপের রাজনীতির কোনও প্রশ্নই নেই। অভিষেক মনে করছেন, তিনি দলের কাঠামোগত যে বদল করতে চাইছেন, তা করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে পদ আঁকড়ে থেকে কি কোনও লাভ আছে? তার চেয়ে সাংসদ হিসেবে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের জন্য কাজ করাই ভাল।
অভিষেকের ঘনিষ্ঠরা অবশ্য বিষয়টি বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে অভিষেকের তীব্র অভিমান হয়েছে। প্রয়োজনে অভিষেক সম্ভবত ‘ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ’ হিসেবেই থাকতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। গোয়া থেকে নিজের কিছু ঘনিষ্ঠকে অভিষেক এমনও জানিয়েছেন যে, তিনি সংসদীয় রাজনীতিতে থাকতে চান। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে যাওয়া ছাড়া তাঁর কাছে আর কোনও বিকল্প আপাতত নেই।
পুরো ঘটনায় যেহেতু মমতা ও অভিষেকই মূলত যুক্ত, তাই বিষয়টি নিয়ে ঘনিষ্ঠরা সরাসরি কেউই কিছু বলছেন না। যদিও সূত্রের খবর, পরিস্থিতি যেদিকে গড়িয়েছে তাতে কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।
পুরভোটের প্রার্থিতালিকা নিয়ে যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে, তাতে রীতিমত ক্ষুব্ধ পার্থ-বক্সী। অসমর্থিত সূত্রের খবর, তাঁরা দলনেত্রীকে এমনও বলেছিলেন যে, ক্যামাক স্ট্রিটে গিয়ে নির্দেশ নেওয়ার চেয়ে বরং দল করা ছেড়ে দেবেন!
তার পরেই ওই বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ করেন মমতা। অভিষেকের ঘনিষ্ঠ নেতাদের মতে, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দলের অন্দরে একটা শৃঙ্খলা এবং কাঠামো আনার চেষ্টা করছেন। গত ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর মমতা সুচারু ভাবে সরকার চালিয়েছেন। এখনও চালাচ্ছেন। কিন্তু দলের আলাদা করে কোনও ‘পরিচিতি’ তৈরি হয়নি। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দল যেভাবে চলেছে, তাতে সামগ্রিক ভাবে দলের ভাল হয়নি।
অভিষেকের ‘মুড’ বুঝে তাঁর ঘনিষ্ঠেরা ইতিমধ্যেই নেটমাধ্যমে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির সমর্থনে পর পর পোস্ট করতে শুরু করেছেন। অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত যুব তৃণমূলের এক সাধারণ সম্পাদক পুরভোট নিয়ে যে পোস্ট করেছেন, তা যথেষ্ট ‘অর্থবহ’। সেখানে তিনি লিখেছেন পুরভোটে পুলিশকে ‘১০০ শতাংশ ফ্রি হ্যান্ড’ দেওয়া উচিত।
সব মিলিয়ে ঘাসফুল শিবিরের অন্দরে চলতে থাকা এই “অশান্তি”র শেষ কবে হবে সেই নিয়ে জল্পনা অব্যাহত।