আজ খবর ডেস্ক- শনিবার বিস্তর বিতর্কের মধ্যেই রাজ্যের ৪ পুরসভায় ভোট হয়। আজ সকালে থেকে ফল ঘোষণা শুরু হতেই সবুজ আবীরে উল্লাস শুরু ঘাসফুল শিবিরে।
বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে প্রাপ্ত ফলাফল বলছে, এই ৪ পুরসভাই দখলে নিল তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত, আজি উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই মমতা জানিয়েছেন, শিলিগুড়ি পৌরসভার নতুন মেয়র হচ্ছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব। বাকি ৩ টি পুরসভার বোর্ড গঠন নিয়ে দলের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মমতা।

বিক্ষিপ্ত হিংসার মধ্যে গত শনিবার ওই ৪টি পুরনিগমে ভোট হয়েছিল। যেখানে মৃত সংগীতশিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যাযের ভোট পড়ার অভিযোগ যেমন উঠেছিল, ঠিক তেমনভাবেই সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা এক মহিলা বিধান নগর পুরসভার ভোট দেবার লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এলাকায় বাইক বাহিনী ঘোরানোর, অন্যদিকে ভোটারের পেছনে দৌড়াতে দেখা গেছে বিজেপি প্রার্থী কে।
তবে সব থেকে বেশি অভিযোগ উঠেছিল বিধাননগর কে কেন্দ্র করে। যেখানে ফলাফল বলছে, ৩৯ টি আসনের মধ্যে ৩৭ টি তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে এসেছে।
বেলা ১২টা পর্যন্ত ভোটে জয়ী এবং শতাংশের হিসেব
তৃণমূল: ১৩৩ (৬২.৪৪%)
বিজেপি: ৯ (৪.২৩%)
বামেরা: ৬ (২.৮২%)
কংগ্রেস: ৩ (১.৪১%)

এই বাজারেও শিলিগুড়ি পুরসভা ছিল বামেদের হাতে। মেয়র ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। এবার শিলিগুড়ির নতুন মেয়র হচ্ছেন গৌতম দেব, তাঁকে বামেদের ক্ষমতাচ্যুত করার ‘পুরস্কার’ দিলেন মমতা। বলছে
রাজনৈতিক মহল। শিলিগুড়িতে কিন্তু জয়জয়কার তৃণমূল কংগ্রেসের। গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় অনেকটাই ফল ভাল হয়েছে
রাজ্যের শাসকদলের। নিজেই হেরে গিয়েছেন শিলিগুড়ি কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ। বিধানসভা ভোটের তুলনায় যথেষ্ট খারাপ ফলাফল হয়েছে বিজেপির। তবে লড়াই জারি রেখেছে বামেরা। বস্তুত রাজনৈতিক মহল বলছে, ক্রমশ দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসছে বাম।
চূড়ান্ত ফলাফল শিলিগুড়ি পুরসভার
শিলিগুড়ি পুরসভায় মোট আসন ৪৭।
তৃনমূল পেয়েছে ৩৭টি আসন।
বিজেপি পেয়েছে ৫টি আসন।
বামেরা পেয়েছে ৪ টি আসন।
কংগ্রেস পেয়েছে ১ টি আসন।

এদিকে, পুরভোটে ‘সন্ত্রাস’ ও “রিগিং” এর অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি।
৪ পুরনিগমের ভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগে সোমবার সকালে চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলবিজেপির।
যদিও, আসানসোল পুরনিগমে জয়ী হয়েছেন প্রাক্তন তৃণমূল এবং বর্তমান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির স্ত্রী।
আসানসোল পুরনিগমের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি স্ত্রী চৈতালি জয়ী হয়েছেন। ৩,৩৩০ ভোটে তিনি জিতেছেন।

সকাল থেকেই এদিন কালীঘাটে উড়ছে সবুজ আবির। বিধাননগরের ফলাফল সামনে আসার পরেই সস্ত্রীক কালীঘাটে যান সব্যসাচী দত্ত।
সস্ত্রীক কালীঘাটে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেকের সঙ্গে দেখা করলেন সব্যসাচী। বিধাননগরের পরবর্তী মেয়র নিয়ে জল্পনার মাঝেই এই সাক্ষাতের দিকে নজর ছিল সবার। সব্যসাচী জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি তাঁকে বলেছেন এলাকা দেখে রাখতে।
অন্যদিকে, কৃষ্ণা চক্রবর্তী জেতার পরে জানান, ‘আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন চেয়ার পেয়ে বসে থাকলে চলবে না, পারফরম্যান্স দিতে হবে। কাজ করতে হবে, যে কাজ করতে পারবেন না তাঁর চেয়ারে বসার কোনও অধিকার নেই।’

গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সাংগঠনিকভাবে খানিকটা অন্য পথে চলার চেষ্টা করছে আলিমুদ্দিন। কলকাতা পুরসভার ভোটে প্রার্থী তালিকায় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল তুলনায় যুবক ও তরুণদের। সুযোগ পেয়েছিলেন রেট ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করা কর্মীরা। এই ৪ পুর নিগমের ভোটেও সেই নীতিতেই চলেছে বামেরা মূলত সিপিএম। রাজনৈতিক মহল বলছে, এতে কিছুটা হলেও সুফল মিলছে। চন্দননগরের ফলাফল বলছে নতুন মুখদের ইতিবাচক ভাবেই গ্রহণ করেছেন ভোটাররা। পাশাপাশি, গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই তৃণমূলের প্রধান বিরোধী হিসেবে উঠে আসা বিজেপির ফলাফল বলছে, প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ক্রমশ শক্তি হারাচ্ছে গেরুয়া শিবির। জায়গা শক্ত করছে বাম। এই পুরনিগমের ফলাফল ও খানিকটা যেন সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *