আজ খবর ডেস্ক- ফের একবার সংঘাতে জড়াল রাজ্য প্রশাসন ও রাজভবন। বেশ কয়েকদিন ধরেই সম্পর্কে তিক্ততা এসেছে রাজ্য এবং রাজ্যপালের। রাজ্যপালের একের পর এক টুইট নিয়ে সরব হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদে আবার রাজ্যপালকে সরানোর জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। এমনকি প্রকাশ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, টুইটারে (twitter) রাজ্যপাল কে “ব্লক” করে দিয়েছেন তিনি।
এহেন পরিস্থিতিতে এবার সরাসরি রাজ্যের বিরুদ্ধে টপ দাগলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়( Jagdeep Dhankhar)।
শুধু টুইট করেই থেমে না থেকে সরাসরি সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ জানালেন রাজ্যপাল।
এ বার ইস্যু রাজ্যের আর্থিক মঞ্জুরি সংক্রান্ত ফাইল। যা ফেরত পাঠালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। প্রথমে, মঙ্গলবার নিজের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডলে জোড়া টুইট করে ফাইল ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন তিনি। রাজ্যপাল লিখেছিলেন, “সরকারের তরফে কোন ক্ষেত্রে কত টাকা খরচ করা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট রাজভবনে পাঠাতে হবে।”
প্রসঙ্গত, সামনেই বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন শুরু হবে। বাজেট পাঠ করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বভাবতই প্রশাসনিক মহলে তা নিয়ে তোড়জোড় চলছে। গত সপ্তাহে বাজেট অধিবেশনের ফাইল পাঠানো নিয়েও মতান্তর হয়েছিল নবান্ন এবং রাজভবনের।
After receipt of Cabinet Decision to summon assembly & publication of Notification in Kolkata Gazette, these financial matters will be addressed.
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) February 22, 2022
Also sought compliance of note dated 21.01.2022 seeking information, including diversion of funds from State Consolidated Fund. 2/2
সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘গভর্নর ফেরত পাঠিয়েছেন ফাইল। আমি নিজে চিফ মিনিস্টার সই করে ফাইল পাঠিয়েছি। বলেছেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত পাশ করিয়ে পাঠাও।’’
এক্ষেত্রে মমতার দাবি ছিল, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনিই ‘ভয়েস অব দ্য ক্যাবিনেট’। তবুও তিনি শিষ্টাচার মেনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে বিষয়টি রাজভবনে পাঠিয়েছিলেন।
রাজ্যপালের নাম না করে মমতা বলেছিলেন, ‘‘কয়েকটি মুখ, যাঁদের আমি শ্রদ্ধা করি, অশ্রদ্ধা করি না, অশ্রদ্ধা করা কথাটা আমার রুচিতে বাধে, কোনও কিছু করতে গেলেই বাধাদান করা তাঁদের একটা কাজ। না জেনেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি জানি না, কেন এগুলো করছেন। অকারণে “ডিলে” (বিলম্ব) করা। বস্তুত মুখে না বললেও, ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজ্যপালকে বিঁধেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর এমন বিবৃতির পরদিনই রাজ্যপাল টুইট করে রাজ্যের সঙ্গে চলা রাজভবনের দ্বৈরথে নতুন ইন্ধন জুগিয়েছিল বলেই মনে করছে রাজ্যের প্রশাসনিক মহল।
মঙ্গলবার রাজ্যের আর্থিক মঞ্জুরি সংক্রান্ত ফাইলটির জন্য আর্থিক ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে পাঠিয়ে নতুন করে রাজ্য সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন রাজ্যপাল।
এরপরই তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, “আইন মেনে ফাইল পাঠানো হচ্ছে না রাজভবনে।” তিনি সংবিধান মেনে কাজ করতে চাইলেও করতে পারছেন না। এদিকে রাজ্য সরকারের তরফে বারবার দোষ দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। এরপরেই রাজ্যপাল বলেন, ” গোটা বিষয়টি তে আমি বিরক্ত এবং চিন্তিত। আমার ভূমিকা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলছে প্রশাসন এবং রাজ্যের শাসক দল”।
এর মধ্যে বেশ কয়েকবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে রাজভবনে গিয়েছিলেন। সরকারি প্রকল্প “মা ক্যান্টিন” যা মূলত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগ্রহে চালু করা হয়েছিল, তার খরচ কোথা থেকে আসছে এই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ বিরোধী দলনেতা এবং হস্তক্ষেপ দাবি করেছিলেন রাজ্যপালের।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রাজ্যের আর্থিক মঞ্জুরি সংক্রান্ত যে ফাইলটি রাজভবন থেকে ফের নবান্নে ফেরত গিয়েছে, তার মূল কারণ সম্ভবত গেরুয়া শিবিরের এই নির্দিষ্ট অভিযোগ।