সায়ক দে – দেখতে দেখতে কেটে গেল দুর্গাপুজো, মায়ের এবার শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাওয়ার পালা। ঠাকুর জলে পড়তেই শুরু হয়ে যাবে বিজয়া। আর তার মধ্যেই মিষ্টির দোকানগুলোতে উপচে পড়ছে ভিড়। বাংলার নানান প্রান্তে নানান রকমের মিষ্টি। যেমন, শক্তিগড়ের ল্যাংচা। যেমন, কৃষ্ণনগরের সরভাজা আর সরপুরিয়া। ঠিক তেমনই বর্ধমান মানেই সীতাভোগ আর মিহিদানা। জিভে জল আনা এই যুগলবন্দী স্বাদে অতুলনীয়।এলাকা ভিত্তিক একেক রকমের বিশেষ মিষ্টিতে আবার লেগেছে জিআই বা জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন মার্ক।

এসব কিছুর মধ্যেই অনবদ্য বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা। শোনা যায় রাজা মেহতাব চাঁদ, লর্ড কার্জনের বর্ধমানে আগমনকে মাথায় রেখেই বানাতে চেয়েছিলেন নতুন এক মিষ্টি যা আগে কখনও কেউ চেখে দেখেননি। তৈরি হয়েছিল এই সীতাভোগ-মিহিদানা। পাশাপাশি বিজয় তোরণ বানিয়ে সম্মান জানিয়ে ছিলেন তাঁকে। সালটা তখন ১৯০৪।

প্রসঙ্গত এই মিষ্টি এতটাই বিখ্যাত হয়ে পড়ে তাই শুরু হয়ে যায় লড়াই। দিতে হবে সম্মান। ভৌগোলিক ভাবে চিহ্নিতকরণ করতে হবে এই মিষ্টিকে। ২০১৭ সালে এপ্রিল মাসে এই মিষ্টি দুটিকে দেওয়া হয় ভৌগোলিক চিহ্নিতকরণ।

দশমীর সকাল থেকেই বর্ধমানের দোকানে দোকানে পড়েছে লম্বা লাইন। এই মিষ্টি ছাড়া সম্পন্ন হতেই পারেনা বিজয়া দশমী। ছোট থেকে বড় বিভিন্ন দোকানে নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে এই মিষ্টি।

গণেশ সুইটস- এর কর্ণধার ইন্দ্রজিৎ দত্ত বলেন, অন্যান্য মিষ্টির পাশাপাশি সীতাভোগ মিহিদানাই বিখ্যাত এই দোকানে। তবে ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে শক্তিগড়ের ল্যাংচাও যথেষ্ট পরিমাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে টক্কর দিচ্ছে এই মিষ্টি জুটির। পাশাপাশি তিনি দাবি করেন অন্যান্য দোকানের সঙ্গে রেষারেষি নেই কারণ তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারবে না অন্য কোনও মিষ্টি প্রস্তুতকারকরা।

তাকে থর থরে থরে সাজানো মিষ্টি, রসগোল্লা চন্দ্রপুলি আম সন্দেশ এবং তার পাশাপাশি রয়েছে গরম মাখা সন্দেশ। তবে সীতাভোগ মিহিদানার জুড়ি মেলা ভার।

বর্ধমান স্টেশন সংলগ্ন রাজলক্ষ্মী সুইটসের বিক্রেতা শোনাচ্ছেন অন্য কথা। গতবছর সেভাবে বিক্রি হয়নি করোনার জন্য, এ বছরও তেমনভাবে বিক্রিবাটা নেই বললেই চলে। সীতাভোগ মিহিদানা পাশাপাশি অন্য কোন মিষ্টি বিখ্যাত জিজ্ঞাসা করায় মিঠু কুন্ডু বলেন,
বিভিন্ন রকম সন্দেশ কস্তুরী, গোলাপ, তালশাঁসের মতন বিখ্যাত মিষ্টি হচ্ছে আসন্ন উৎসবের দিনগুলোতে।

সব মিলিয়ে বিজয়া দশমীতে মানুষ মেতে আছে উৎসবে। মাকে বিদায় জানানোর সময় মিষ্টিমুখ আবশ্যক তাই বর্ধমানের সীতাভোগ মিহিদানা ছাড়া তা অসম্পূর্ণ। আগেই ডাক বিভাগে সম্মান পেয়েছে এই মিষ্টি। সরকারের তরফে ডাকটিকিটে বর্ধমানের সীতাভোগ মিহিদানা ছবি ছাপানো হয়েছিল। মানুষ ট্রেনে ওঠার আগে বা ট্রেন থেকে নেমেও আত্মীয়-স্বজনের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এই ঐতিহাসিক খ্যাতিসম্পন্ন মিষ্টি। ঠাকুর দেখার মাঝে খাওয়া শেষ পাতে ঘিয়ে ভাজা গরম সীতাভোগ মিহিদানা এক অনন্য মেলবন্ধন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *