আজ খবর ডেস্ক- Asansol রাত পেরোলেই ভোট। আসানসোল লোকসভা আর বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচন ঘিরে বেশ জমজমাট রাজ্য রাজনীতি। তার অন্যতম কারণ, দুই কেন্দ্রে শাসক দলের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। Asansol
শত্রুঘ্ন সিনহা (Shatrughna Sinha) এবং বাবুল সুপ্রিয়র(Babul Supriyo) মধ্যে আরও একটি মিল আছে। দুজনেই বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ছিলেন। এই ভোটে দুজনেই তৃণমূলের প্রার্থী।
দুই কেন্দ্রেই আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল। তবে চোরাস্রোত আছেই। তবু সংগঠনের ওপরে ভরসা রেখেই মঙ্গলবারের উপনির্বাচনে লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস।
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে কখনও জেতেনি তৃণমূল। ২০১৪ সালে দলের দাপুটে নেত্রী দোলা সেন আর ২০১৯ এ গ্ল্যামারাস মুনমুন সেন কে হারিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়।
সেই বাবুল এবার দল বদল করে বালিগঞ্জে তৃণমূলের প্রার্থী। আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্র পাল (Agnimitra Paul) এবার এই লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। আছেন সিপিএম প্রার্থী পার্থ মুখোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস প্রার্থী প্রসেনজিৎ পুইতুন্ডি।
তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ বলছে, আসানসোল কে নিজের হাতের তালুর মত রাখতে চান রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক। শুধু তাই নয়, তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন ২০১৪ সালে দোলা সেন হারার পরে দলের তরফে শাস্তি পেতে হয়েছিল মলয় ঘটক কে। এই অংশ আর ও বলছে, আসানসোলের সংসদ অন্য দল থেকে হলেও আপত্তি নেই মলয়ের। কিন্তু এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মুখ হিসেবে তিনি নাকি নিজেই থাকতে চান।
তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কে এক সঙ্গে নিয়ে শত্রুঘ্ন সিনহার প্রচারে যে দলীয় ঐক্য ছবি তুলে ধরা হয়েছে, তাতে ভোটারদের কতটা মন গলবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
আমার দলের আশাবাদী অংশ মনে করছে, মোটর ওপর প্রায় ৪৫ শতাংশ হিন্দিভাষী ভোট রয়েছে এই কেন্দ্রে। যা অতীতে বিজেপির ভোট বাক্স গিয়েছে। কিন্তু এবার “বিহারি বাবু”কে প্রার্থী করায় সেই ভোটের অনেকটাই আসতে পারে তৃণমূলের দখলে।
আসানসোল নিয়ে বিজেপির আশঙ্কা আবার অন্য। বিজেপির প্রার্থী আসানসোলেরই মেয়ে। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের একাংশ মনে করছে, অগ্নিমিত্রার জেতার পথে কাটা হতে পারেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বিধানসভা ভোটের আগে দল বদলে তৃণমূল থেকে বিজেপি তে আসার পর জিতেন্দ্র নাকি চেয়ে ছিলেন এই ভোটের নিজেই প্রার্থী হবেন। সেই প্রার্থীপদ না মেলায় প্রশ্ন উঠছে তাঁর ভূমিকা নিয়ে।
অন্যদিকে বাবুল সুপ্রীয় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার পরে বাবুলের ঘনিষ্ঠমহলের ভোট কোন দিকে যাবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
কোলিয়ারি ও শিল্পাঞ্চল মিলিয়ে আসানসোল একসময় সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি ছিল। এবারের ভোটে সিপিএম প্রার্থী পার্থ মুখোপাধ্যায় বাম জমানায় কার্যত এই এলাকা শাসন করতেন। এমনটাই বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একই সঙ্গে তারা এটাও বলছেন, মূল লড়াই হবে তৃণমূল বনাম বিজেপির। সিপিএম ও কংগ্রেস এখানে ফ্যাক্টর নয়।
এবার আসা যাক বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের বিষয়ে। রাজ্যের প্রবীণ নেতা ও মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে ফাঁকা হয়েছে এই কেন্দ্র।
একদিকে হিন্দুস্তান পার্ক, ডোভার টেরেস অন্যদিকে ব্রডস্ট্রিট, বন্ডেল রোড অথবা কাঁকুলিয়া বস্তি। এককথায় বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র বৈচিত্র্যের সমাহার।
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এই কেন্দ্রে মূল ফ্যাক্টর সংখ্যালঘু ভোট। তবে চলতে থাকা রমজান মাসের কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ মুসলিম ভোটের ঠিক কতটা ভোট কেন্দ্র পর্যন্ত যাবে তা নিয়ে একটা সংশয় থেকেই যাচ্ছে। এই কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী দায়রা শাহ হালিম ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন।
তৃণমূলের বাবুল সুপ্রিয় ছাড়া লড়াইয়ে আছেন রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার অন্যতম নেত্রী কেয়া ঘোষ।
সংখ্যালঘু প্রার্থী এবং সংখ্যালঘু ভোটারের অনুপাত মিলিয়ে সিপিএম প্রার্থী এগিয়ে থাকলেও রাজনৈতিক মহলের একটা অংশ মনে করিয়ে দিচ্ছে, ৭ ওয়ার্ডে এই বিধানসভা কেন্দ্রে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া কলকাতা পুরসভার ভোটে ৪ কেন্দ্রে কিন্তু দ্বিতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস।
ভোটে আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের সংখ্যালঘু ভোট আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যেতে পারে কংগ্রেস ও বামেদের মধ্যে। কারণ বাবুল সুপ্রিয়র বিজেপিতে থাকাকালীন তৃণমূল বিরোধী যে সমস্ত বক্তব্য ছিল, এক্ষেত্রে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এখানেও একটা বড় অংশ হিন্দিভাষী ভোটার রয়েছেন। মূলত বিজেপির টার্গেট এই ভোট পুরোটা নিজেদের দিকে নিয়ে যাওয়া।
সিপিএমের অন্দরেই আবার একটা অংশ বলছে, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন সায়রা শাহ হালিমের স্বামী চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল মেরেকেটে পাঁচ হাজারের কিছু বেশি। এবার সেই ভোট কিছুটা বাড়লেও ২০ হাজারের বেশি হওয়া সম্ভব নয়। সিপিএম প্রার্থী কত ভোট পাবেন তার অনেকটাই এখানে নির্ভর করছে কংগ্রেস প্রার্থী কত ভোট কাটতে পারবেন তার ওপর।