আজ খবর ডেস্ক: Insomnia

Insomnia আজকাল বেশিরভাগ মানুষই ঘুমের সমস্যায় (insomnia) ভুগছেন। এতদিন পর্যন্ত জানা ছিল শোয়ার আগে মোবাইল ব্যবহার করলে ঘুম কমে যায়। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে যা প্রমাণিত হয়, তা খুবই চিন্তার বিষয়। Insomnia

এক পরীক্ষায় দেখা গেছে দিনে যারা এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময় মোবাইল ব্যবহার করেন, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ থাকেন, তাদের ঘুমের পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে কমে আয়ুও।

এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, ঘুমানোর আগে অন্ধকার ঘরে মোবাইল ফোন ব্যবহার এবং টিভি দেখে সময় কাটালে আপনার ঘুম নষ্ট হতে পারে। সেই সমীক্ষায়, গবেষকরা রাতে ফোন এবং ল্যাপটপের ব্যবহারের মধ্যে খারাপ ঘুমের গুণমান, অপর্যাপ্ত ঘুম এবং জীবনের দুর্বল অনুভূত মানের সাথে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের (Lincoln University) মাইকেল মিরেকু বলেন, “যদিও আগের গবেষণায় স্ক্রিন ব্যবহার (screen time) এবং তরুণদের ঘুমের গুণমান এবং দৈর্ঘ্যের মধ্যে একটি যোগসূত্র দেখানো হয়েছে, তবে ঘরের আলো কীভাবে এটিকে আরও প্রভাবিত করতে পারে তা দেখানোর জন্য আমাদের প্রথম গবেষণা।”

এ বিষয়ে গবেষকরা ১১ থেকে ১২ বছর বয়সী ৬৬১৬ জন কিশোর-কিশোরী থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে, ৭০ শতাংশেরও বেশি অংশগ্রহণকারী তাদের ঘুমানোর এক ঘন্টার মধ্যে কমপক্ষে একটি স্ক্রিন-ভিত্তিক ডিভাইস ব্যবহার করার কথা জানিয়েছেন।

অংশগ্রহণকারীদের তখন অন্ধকার এবং আলোকিত উভয় কক্ষে তাদের ডিভাইস ব্যবহারের স্ব-প্রতিবেদন করতে বলা হয়েছিল।

এছাড়াও, তিনটি জিনিসের রিপোর্ট করতে বলা হয়েছিল: তাদের সপ্তাহের দিন এবং সপ্তাহান্তে শোবার সময়, তাদের ঘুমাতে যেতে কতটা কঠিন ছিল এবং তাদের ঘুম থেকে ওঠার সময়।

সমীক্ষার ফলাফল অনুসারে, যারা রাতে ফোন ব্যবহার করেন না তাদের তুলনায় যারা একটি ফোন ব্যবহার করেন বা একটি ঘরে লাইট জ্বালিয়ে টেলিভিশন দেখেন তাদের ৩১ শতাংশ এবং কম ঘুমানোর সম্ভাবনা বেশি ছিল। একই কার্যকলাপ অন্ধকারে সঞ্চালিত হলে, একই সম্ভাবনা ১৪৭ শতাংশ বেড়ে যায়।

শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বজায় রাখতে প্রতিদিন সুস্থ ও সুন্দর ঘুম হওয়া জরুরি।

কিছু খাবার অবশ্য এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে, যেমন:

১) চেরি (cherry)

চেরি হল ভাল মানসিক ক্লান্তি এবং চাপ বর্ধক। এই ফলটিতে মেলাটোনিন (melatonin) রয়েছে যা আমাদের ঘুম-জাগরণ চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

২) বাদাম বা আলমন্ড (almond)

বাদামের মধ্যে রয়েছে ট্রিপটোফ্যান, যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর উপর প্রশান্তিদায়ক প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন এক মুঠো ভিজানো বাদাম খেলে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করতে পারে।

৩) দুধ (milk)

শুতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন যদি এক গ্লাস করে দুধ খেতে পারেন, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় যতই ঘোরাঘুরি করুন না কেন ঘুম আসতে একেবারেই সমস্যা হয় না। আসলে এই পানীয়টির অন্দরে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, শরীরে প্রবেশ করার পর মস্তিষ্কের অন্দরে মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ঘুম আসতে সময়ই লাগে না। প্রসঙ্গত, শুধু দুধ নয়, রাত্রে যে কোনো ধরনের দুগ্ধজাত খাবার খেলেই সমান উপকার পাওয়া যায়।

৪) ক্যামোমাইল চা (chamomile tea)

ক্যামোমাইল চা স্নায়ুর উপর প্রশান্তিদায়ক প্রভাব ফেলে এবং ঘুম আনতে সাহায্য করে। ক্যামোমাইল চায়ের মধ্যে থাকা এপিজেনিন নামক ফ্ল্যাভোনয়েডের উপশমকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে পরিচিত।

৫) মধু (honey)

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শুতে যাওয়ার আগে এক চামচ মধু খেয়ে নিলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির অন্দরে থাকা প্রাকৃতিক সুগার, ট্রাইপোফেনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে ঘুমের রেশ আসতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, এক কাপ ক্যামোমিল চায়ে যদি মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, তাহলে এক্ষেত্রে আরো বেশি মাত্রায় উপকার পাওয়া যায়।

৬) হার্বাল চা (herbal tea)

রাতে ঘুমানোর আগে ভেষজ চা পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এটি খেলে শরীর শান্তি পায় এবং সহজেই ঘুম আসে।

৭) ম্যাগনেসিয়াম (magnesium)

ম্যাগনেসিয়াম খনিজ, সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি পেশীকে শিথিল করার পাশাপাশি টেনশন কমায়। অনেক গবেষণার রিপোর্টেও এটা প্রমাণিত হয়েছে যে ম্যাগনেসিয়াম একজন মানুষের স্লিপ সাইকেলকে উন্নত করে, যার ফলে ভালো ঘুম হয়।

আপনার যদি ঘুমের সমস্যা হয়, তাহলে এই খাবার এবং পানীয় সাহায্য করতে পারে। তবে, আপনার ডায়েটে নতুন কোনও খাবার যোগ করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *