আজ খবর ডেস্ক- মারফান সিনড্রোম! নাম শুনলে অনেকই চমকে উঠবেন। তাই হওয়ার কথা, এই সর্বনাশা রোগ হৃদযন্ত্র বিকল করে। বাঁচার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। তবে সেই অসাধ্য সাঁধন করল কলকাতার একদল চিকিৎসক। এক কিশোরী এই জিনের সমস্যায় আক্রান্ত হন, রক্ত সঞ্চালনে ঘাটতি দেখা দেয়, ধীরে ধীরে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তে প্রভাব পড়তে শুরু করে তাঁর। তবে অস্ত্রপ্রচার করে এখন কিছুটা স্বাভাবিক ওই কিশোরী।

কলকাতার আরএন টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সেস হাসপাতালে, চিকিৎসা হয় ওই কিশোরীর। ওই হাসপাতালের পিডিয়াট্রিক চিকিৎসক জানান, ওই কিশোরী আক্রান্ত হয়েছিলেন আওর্টিক ডিসেকশন রোগে। কিন্তু কি এই রোগ? তিনি বলেন, হৃদপিণ্ড থেকে সরাসরি রক্ত ছড়িয়ে যায় ধমনীর মাধ্যমে, কিন্তু সেই ধমনীতে যদি কোনও ক্ষত তৈরি হয় তাহলে রক্তসঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়।

এই সমস্যা হলে ধমনী থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পিঠে ব্যথা, বমি ভাব এবং সারা শরীরে অসহ্য পেশীর যন্ত্রণা অনুভব করেন রোগী। সাধারণত কানেকটিভ টিস্যু ডিজিস, উচ্চরক্তচাপ থাকলে পরে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, এই ধরনের রোগ হলে বিভিন্ন রকম অদ্ভুত সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। যেমন সারা শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়, পাশাপাশি হাত পা লম্বা হতে পারে। এখানেই শেষ নয়, রোগী ফ্ল্যাট ফিট হতে পারে এবং শিরদাঁড়া সোজা না হয়ে ধনুকের মতন বাঁকা হতে পারে।

চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, সারা বিশ্বে যত শিশু জন্মায় তাদের মধ্যে, ৬ শতাংশ এই ধরনের বিরল সমস্যা নিয়ে জন্মায়। অধিকাংশ শিশুই পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে মৃত্যু বরণ করে বলে দেখা গিয়েছে। বাবা-মায়ের মধ্যে যদি কারও একজনের এই ধরনের সমস্যা থেকে থাকে সেক্ষেত্রে জিন মিউটেশন হওয়ার সময় শিশুর মধ্যে সেই সমস্যা অতিবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যদি শিশুটি বেঁচেও যায়, তাহলে তাকে আজীবন সেই অতিরিক্ত সমস্যা নিয়ে জীবন যাপন করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের রোগ হলে কার্ডিয়লজিস্ট- এর সান্নিধ্যে থাকাই ভাল। তাহলে যে কোনও সমস্যার ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি সেই সমস্যা ধরে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া সম্ভব হবে। অস্ত্রোপাচারের পরে ওই কিশোরী আপাতত ভালো আছেন বলে জানা গিয়েছে। স্নায়ুতে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই তার অস্ত্রোপচার করা হয়, সেই কারণে অনেকটাই বিপদ মুক্ত হয় ওই রোগী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *