আজ খবর ডেস্ক: গত কয়েক বছর ধরে বঙ্গ বিজেপি’র (WB BJP) অন্যতম মুখপাত্র (Spokesperson) তিনি। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের (Assembly Election) সময়ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের রাজনৈতিক আলোচনায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি।
দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ (Tollygunge) এলাকার বাসিন্দা। গত ৭/৮ মাস ধরে বিজেপি নেতা বা মুখপাত্র পরিচয়ে কোথাও আর দেখা যাচ্ছে না তাঁকে।
স্বপন দাস এবার বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন বঙ্গ বিজেপির বিরুদ্ধে। নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের হোয়াটস অ্যাপ (WhatsApp) গ্রুপে রীতিমত বিস্ফোরক একটি লেখা শেয়ার করেছেন তিনি।

কাশীপুরে বিজেপি যুব মোর্চার এক কর্মী অর্জুন চৌরাসিয়ার মৃত্যু নিয়ে সেই লেখা শুরু হয়েছে। যেখানে স্বপন দাস লিখেছেন, ” একজন আইনজীবি হিসাবে বলবো হয়তো আত্মহত্যা, একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসাবে বলবো এটা কোন রাজনৈতিক মৃত্যু নয়, তৃনমূলের যোগসাজসের কোন সম্ভাব্য কারন খুঁজে পাচ্ছি না। কেন? কারন সহজ মাননীয় সরাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলা সফরে, সেই সময় তৃনমূল কেন এই ধরণের কাজে লিপ্ত হবে? বিশেষ করে অর্জুন চৌরাসিয়ার ওয়াডে’ বিজেপিতো কোনদিনই জিতবে না”


এরপরেই সরাসরি স্বপন দাস তোপ দেগেছেন বঙ্গ বিজেপির ক্ষয়িষ্ণু সংগঠন নিয়ে। তিনি এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, “এই সময় বিজেপির সংগঠনের অবস্থাও তলানিতে।
কেন লোপপা ইস্যু বিজেপির হাতে তৃনমূল তুলে দিতে যাবে?
দিতে পারে যদি তৃনমূল বিজেপিকেই বিরোধী দল হিসাবে বাংলায় ধরে রাখতে চায় তার স্বার্থে, কারন বিজেপি বিরোধী থাকলে তৃনমূলের বেশী লাভ, দাঁড়াশ সাপের সাথে সহবাস অনেক লাভ, কোন বিপদ নেই।”

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সেদিন মৃত ওই যুব কর্মীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেই বিষয়টি টেনে এনে স্বপ্নের বক্তব্য, এটি একটি রাজনৈতিক হত্যা, অথবা এতে তৃনমূল জড়িত এসব বলে হাওয়া গরম করে আদপে লাভ হবে কিনা সময় বলবে।
একইসঙ্গে, এক অংশের বিজেপি নেতাদের “রাষ্ট্রপতির শাসন” চাওয়াকে কটাক্ষ করেছেন দলের এই প্রাক্তন মুখপাত্র।
বঙ্গ বিজেপির নেতাদের “নেপো” বলে সম্বোধন করেছেন তিনি। বলেছেন, “মাননীয় অমিত শাহ বংগ বিজেপির নেপোদের আশায় সব জল ঢেলেছেন।”

রবিবার দুপুরে, এই হোয়াটস অ্যাপ টি হাতে পাওয়ার পর aajkhobor.com এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় স্বপন দাসের সঙ্গে।
তিনি স্পষ্ট বলেন, “মমতা ব্যানার্জিকে (Mamata Banerjee) পছন্দ নাই করতে পারি, তৃনমূলকে (AITC) না চাইতে পারি কিন্তু মমতা যে বাংলায় সর্বকালের সেরা জনপ্রিয় জননেত্রী তা অস্বীকার করতে পারি কি? মমতা ব্যানার্জি ছাড়া সিপিএম কে সরানো সম্ভব ছিল কি?
সিপিএম থাকলে আজ বাংলায় সংঘ বা বিজেপি মাথা তুলতে পারতো কি? দিলীপ ঘোষ বা সুকান্ত বা এলিতেলী শুকুর আলি’রা এমপি এমএলএ হতে পারতো কি? কেউ চিনতো এদেরকে? অনেককেই বাড়িতে সিপিএমের সমর্থক হিসাবে গনশক্তি কিনে বা নিয়মিত দলের চাঁদা দিয়ে খাঁটি হিন্দু হিসাবে সংঘের শাখায় ভন্ড স্বয়ংসেবক পরিচয়েই থাকতে হতো। পরিবার নিয়ে বাঁচতে হতো।”

স্বপন দাস নিজেকে এখন আর বিজেপির মুখপাত্র বলেন না। নিজের পরিচয় দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে। তবে সেই বিস্ফোরক হোয়াটস অ্যাপ বার্তার শেষ পর্বে এসে গেরুয়া শিবিরের নেতাদের তীব্র বিদ্রূপ করেছেন তিনি। যা পড়ে যে কেউ নিশ্চিত ভাবে বাকরুদ্ধ হয়ে যাবেন।
স্বপন লিখেছেন, দলের নেতাদের “সুন্দরী মহিলাদের মোহ থেকে মুক্ত হতে হবে। সাধারন মহিলা কর্মীদের রূপ দেখে নয় গুণ দেখে কদর করুন। অর্থবান দালালদের দূরে সরান, কাজের যোগ্য ডেডিকেটেড মানুষদেরকেই কাছে টানুন।”


রাজনৈতিক মহল বলছে, বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বঙ্গ বিজেপির একের পর এক নেতা, বিধায়ক দল ছাড়ছেন। এরকম চলতে থাকলে আগামী দিনে গেরুয়া শিবিরের অবস্থা এই রাজ্যে কংগ্রেসের মত হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *