তরমুজ থেকে গুড় বানানোর প্রক্রিয়া (ছবি সংগৃহীত)

আজ খবর ডেস্ক- নানান রকমের গুড় পাওয়া যায় বাজারে। শীতকালের গুড়ের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু কখনও ভেবে দেখা গেছে কি, এই ফল থেকেও তৈরি হতে পারে সুস্বাদু গুড়। বাজারে অবশ্য এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘তোগুড়’।

কিন্তু হঠাৎ কী এমন সেই গুড়? মাঠে অনেক সময় তোরমুজ ফলানোর সময় বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় তরমুজ ফুলে-ফেঁপে বড় না হলে, তখন সেই তরমুজগুলিকে মাঠেই ফেলে চলে আসা হয়। কারণ সেগুলিকে দিয়ে বিশেষ লাভ হয়না কৃষকের। নয় সেগুলি মাঠেই পড়ে থাকে, নয়তো পচে দুর্গন্ধ বের হয় এলাকায়। এবার সেই ছোট আকারের তরমুজ থেকেই তৈরি করা গেল সুস্বাদু গুড়।

তাক লাগানো এই ভাবনা খুলনার কৃষক মৃত্যঞ্জয় মণ্ডলের। তাঁর এই অভিনব আবিষ্কারের জন্য ইতিমধ্যেই সাড়া পড়ে গিয়েছে নেট জগতে। ভাইরাল হয়েছে তাঁর ছবি এবং এই কীর্তির কথা।

খুলনা মহানগর থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের অবস্থান তাঁর। উপজেলা সদর থেকে আরও ১০ কিলোমিটার দূরত্বে সাহস ইউনিয়নের ছোটবন্দ গ্রামটি অবস্থিত। এই গ্রামে কালিদাস মণ্ডলের ছেলে তরুণ কৃষক মৃত্যঞ্জয় মণ্ডলের (৪০) বসবাস।

দশম শ্রেণির পর আর লেখা পড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। ছোট বেলা থেকেই হাল ধরতে হয় সংসারের। প্রথম দিকে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে কসমেটিক্স বা প্রসাধন সামগ্রি বিক্রি করতেন। আর এরই সুবাদে বিভিন্ন জেলায় তরমুজের ক্ষেত-খামার দেখতে পান তিনি। পড়ে যান তরমুজের প্রেমে। সিদ্ধান্ত নেন তরমুজ চাষের। ২০০৮ সালে মাত্র ২০ শতক জমিতে প্রথম তিনিই বাণিজ্যিকভাবে ডুমুরিয়ায় তরমুজ চাষ শুরু করেন।

কিন্তু সিজনে বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদনের কারণে মূল্য কম থাকায় লাভও কম হয়। এই কারণে সিদ্ধান্ত নেন, অফসিজনে তরমুজ চাষের। সর্বশেষ চলতি অফসিজনে ৬৫ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করে দেড় লাখ টাকা আয় করেন তিনি।

আকৃতিতে কম তরমুজ না ফেলে দিয়ে কিভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই বিষয়ে তিন বছর ধরেই ভাবনা-চিন্তা করছিলেন তিনি। সেই ভাবনা থেকেই প্রথম ২ অক্টোবর থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেন তিনি। ২০ কেজি তরমুজের রস বা জুসে ৫ কেজি গুড় উৎপাদন হচ্ছে। এভাবে গত ১১ দিনে তিনি প্রায় ১০-১৫ কেজি গুড় উৎপাদন করেছেন। যার প্রতিকেজি তিনশো টাকা করে বাজারে বিক্রিও করছেন। পরবর্তীকালে উৎপাদন আরও বাড়াবেন বলে জানিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়।

পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, তার কাকিমা এবং স্ত্রীকে নিয়ে গুড় বানানোর কাজ চালাচ্ছেন তিনি। প্রথমে ছোট আকারের তরমুজের ছাল ছাড়িয়ে তার লাল অংশ আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর সেই লাল অংশ থেকে ছাকনিতে মসৃণভাবে ছেঁকে নিয়ে সেই জুস কড়াইয়ে ধীরে ধীরে জাল দিলে তা পরিণত হয় গুড়ে। ইতিমধ্যেই এই উপায়ে গুড় বানিয়ে লাভের মুখ দেখেছেন তিনি এবং ভবিষ্যতে ব্যবসাকে আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে তাঁর মনে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *