আজ খবর ডেস্ক: বিতর্কিত বৈবাহিক ধর্ষণ মামলায় কোনও সমাধান সূত্র দিতে পারল না দিল্লি হাইকোর্ট (Delhi Highcourt)। বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলা যায় কিনা সেই ইস্যুতে বিভক্ত রায় দিয়েছে দিল্লির উচ্চ আদালত। দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার ব্যতিক্রম ২-এর বৈধতার বিষয়ে মতানৈক্যর কারণেই এই দ্বিধাবিভক্ত রায় দিয়েছে।

দিল্লি হাইকোর্টের দুই বিচারপতি রাজীব শাকধের (Rajiv Shakdher) ও হরি শঙ্কর (Hari Shankar) তাঁদের রায়ে একমত হতে পারেননি।

যেহেতু মামলাটিতে আইনের জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত আছে, তাই দিল্লি হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট দিয়েছেন। এবার মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে যাবে।

ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি রাজীব শাকধের বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলে অভিহিত করার পক্ষে রায় দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এটাও জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী একজন যৌনকর্মীর যৌন মিলনে না বলার অধিকার রয়েছে, কিন্তু একজন বিবাহিত মহিলার এই অধিকার নেই। এই বৈষম্যের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন তিনি।

শুনানির সময় বিচারপতি শাকধের বলেছেন যে, ভারতীয় দন্ডবিধি অনুযায়ী একজন বিবাহিত মহিলার তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অসম্মতি সত্ত্বেও যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার অভিযোগ আনার জায়গা নেই। ওই মহিলার অধিকারকে খর্ব করলেও, এটি একটি গুরুতর সমস্যা।

বিচারপতি হরি শঙ্কর অবশ্য তাঁর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই বিষয়টি ব্যতিক্রমী, বিচারের উপর ভিত্তি করে বলা যায় এটা অসাংবিধানিক নয়। তাঁদের নিজ নিজ রায় ঘোষণার পর উভয় বিচারকই আইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সম্পর্কিত বিষয় হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার অনুমতি দেন।

আবেদনকারীরা ৩৫৭ আইপিসি (ধর্ষণ) ধারার অধীনে বৈবাহিক ধর্ষণের ব্যতিক্রম ২-এর সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। বলা হয়েছিল স্বামীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার বিবাহিত মহিলাদের প্রতি বৈষম্য করে এই ধারাটি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, ব্যতিক্রম ২-এর অধীনে কোনও পুরুষের দ্বারা তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌন মিলন বা যৌন ক্রিয়াকলাপ ধর্ষণ বলে চিহ্নিত করা যাবে না। ৩৭৫ নম্বর ধারা বলছে, স্ত্রীর বয়স যদি ১৫-র বেশি হয়, তাহলে তা ধর্ষণ বলে চিহ্নিত করা যাবে না।

আদালত এনজিও RIT ফাউন্ডেশন, অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন, ভারতীয় ধর্ষণ আইনের অধীনে স্বামীদের জন্য প্রদত্ত ব্যতিক্রম প্রত্যাহার করতে চেয়ে দায়ের করা পিআইএলগুলির শুনানি করছিল।

২০১৭-য় দায়ের করা হলফনামায়, কেন্দ্র দাখিল করা আবেদনের বিরোধিতা করে বলেছিল যে বৈবাহিক ধর্ষণকে ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করা যাবে না, কারণ এটি বিবাহ প্রথাকে অস্থিতিশীল করতে পারে এবং স্বামীদের হয়রানির একটি সহজ হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

এনজিও মেনস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টও বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধীকরণের বিরোধিতা করেছিল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *