আজ খবর ডেস্ক: কোভিড (Covid19) আতঙ্কের পর এবার এক নতুন ভাইরাসের তাণ্ডবে ত্রাহি ত্রাহি রব সর্বত্র, উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO)। আর এই নয়া ত্রাসের নাম মাঙ্কিপক্স (Monkeypox)। ইউরোপের দেশগুলিতে এখনও পর্যন্ত একশোর বেশি মানুষের দেহে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে।
মে মাসের শুরু থেকে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার কয়েক ডজন ‘মাঙ্কিপক্স’ আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। মাঙ্কিপক্স নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভাইরাসটির সংক্রমণ ও ভ্যাকসিনের বিষয়ে জোড় দিতে ও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে গতকাল তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চিকিত্সক বিজ্ঞানীরা। চলতি মাসেই বেশ কয়েকটি দেশে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস বায়ুবাহিত। ১৯৫৮ সালে প্রথম মাঙ্কিপক্স পাওয়া গিয়েছিল। মূলত ইঁদুর থেকেই এই ভাইরাস ছড়ায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছিল। মাঙ্কিপক্স হল প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত একটি ভাইরাস, যার লক্ষণগুলি গুটিবসন্তের মতোই হলেও চিকিৎসার দিক দিয়ে কম গুরুতর।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-এর তথ্য অনুযায়ী, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ ও শরীরে চিকেন পক্সের মতো ফুসকুড়ি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে ফ্লুর মতো উপসর্গ যেমন জ্বর, পেশিতে ব্যথা এবং টনসিল ফুলতে পারে।
নাইজেরিয়া থেকে ইংল্যান্ডে ফিরে আসা একজন ব্যক্তির মধ্যে ৭ই মে প্রথম ইউরোপীয় সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছিল।
সেই থেকে, ব্রিটেনে এই বিরল ভাইরাসে আক্রান্ত ২০ জনের হদিশ মিলেছে। ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি বলেছে যে, দেশের সাম্প্রতিক কেসগুলি প্রধানত পুরুষদের মধ্যে ছিল যারা নিজেকে সমকামী বা উভকামী বলে পরিচয় দেয়৷
ফ্রান্স, জার্মানি এবং বেলজিয়ামও শুক্রবার নিজেদের দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তদের চিহ্নিত করেছে।
ভাইরাসঘটিত মাঙ্কিপক্স অত্যন্ত ছোঁয়াচে। গুটি বসন্ত গোত্রেরই ভাইরাস এটি।
WHO অনুসারে, মাঙ্কিপক্সের জন্য কোন নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন নেই, তবে ডাটা দেখায় যে গুটিবসন্ত নির্মূল করতে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনগুলি মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে ৮৫% পর্যন্ত কার্যকর। সংক্রমিত হলে কী কী লক্ষ্মণ দেখা দিতে পারে?
দেহে ভাইরাসের প্রবেশের তিনদিনের মাথায় প্রবল জ্বর আসে।
▪️জ্বর আসতে পারে কাঁপুনি দিয়ে।
▪️শুরু হয় সারা শরীরজুড়ে অসম্ভব ব্যথা।
▪️পেশিতে খিঁচুনি হতে পারে।
▪️চিকেনপক্সের মতো মুখ এবং শরীরজুড়ে বড় বড় ফোস্কার মতো ব়্যাশ বের হবে।
▪️ব়্যাশের জায়গায় চুলকানি, জ্বালা হতে পারে।
▪️ত্বক শুকিয়ে, খসখসে হয়ে যাবে।
▪️দুর্বল হয়ে যাবে শরীর।
▪️দু-চারসপ্তাহ ভোগাবে এই অসুখ।
তবে ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির মতে, মাঙ্কিপক্স একটি বিরল সংক্রমণ, এবং এটি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে না। সংক্রামিত ব্যক্তির ত্বকের ক্ষত এবং তাদের দ্বারা ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে, গামছা, জিনিসপত্র এবং বিছানার সংস্পর্শে আসা এড়ানো উচিত। WHO আরও জানিয়েছে, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা থেকে মনে হচ্ছে, সমকামীদের মধ্যে এই রোগ বেশি সংক্রমিত হয়েছে।
আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকের ক্ষত এবং ড্রপলেট অন্য ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে ছড়াতে পারে মাঙ্কিপক্স। একই বিছানা অথবা তোয়ালে-গামছা ব্যবহার করলেও এই রোগ ছড়াতে পারে। যৌনসম্পর্কের সঙ্গেও এই রোগের সংক্রমণ ছড়ানোর যোগ থাকতে পারে। হু-র মতে, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেখা গিয়েছে সমকামী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে, এই রোগ কী ভাবে বাড়ছে? এখনও পর্যন্ত কারও এই রোগে মৃত্যু হয়নি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মনসুখ মান্ডাভিয়া জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (National Centre for Disease Control) এবং ICMR-কে পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বিমানবন্দর এবং বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে যে মাঙ্কিপক্স-আক্রান্ত দেশগুলিতে ভ্রমণের ইতিহাস সহ যে কোনও অসুস্থ যাত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে (NIV) নমুনা পাঠানো হবে।