আজ খবর ডেস্ক: নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগ এখন। বাবা আর মায়ের সঙ্গে একটি, বড়জোর দুটি খুদে। চাকরিজীবী বাবা, মা সকাল হলেই অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়লে সারাদিনের সঙ্গী “কাজের মাসি”!


দাদু দিদার সঙ্গ সপ্তাহান্তে হয় কী হয় না! আর তাই, এই শৈশবে মোবাইল (Mobile) গেম, কার্টুন নেটওয়ার্ক (Cartoon Network), হ্যারি পটার (Harry Potter) আছে, কিন্তু নেই দাদু-দিদার কোলের কাছে চুপটি করে বসে রূপকথার গল্প শোনার আমেজ।
হাতে এখন স্মার্ট ফোন, বেশীরভাগ সময় সেখানেই বুঁদ হয়ে থাকা। ফলে মন-প্রাণ খুলে কথা বলতেই ভুলে যাচ্ছে এই প্রজন্মের শিশুরা।

শুধু এই রাজ্য নয়, গোটা বিশ্ব জুড়ে ক্রমশ বাড়ছে আত্মহত্যাপ্রবণতা, বাড়ছে মানসিক অবসাদ। পারস্পরিক সম্পর্কের দূরত্ব। ছোটদের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, এই মানসিক অস্থিরতা তারা নিজেরাই বুঝতে পারছে না।
ঠিক কী চাই তা না বুঝেই মনের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। কেউ খিটখিটে হয়ে পড়ছে, কোনও শিশু আবার অতিরিক্ত চুপচাপ।
অধিকাংশ মনোবিদ (Psychiatrist) বলছেন, আনুষঙ্গিক কারণ তো আছেই, তার সঙ্গে নতুন প্রজন্মের কচিকাঁচারা গল্প করতে ভুলে যাচ্ছে, মাঠে খেলতে ভুলে যাচ্ছে। যা আগামী দিনে গোটা বিশ্বেই অনেক বড় সংকট ডেকে আনতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নয়া উদ্যোগ “আনন্দধারা”! যেখানে ফিরে আসছে নস্টালজিয়া। ফিরে আসছে সেই ছোটবেলার “গল্প দাদুর আসর”। যা এক সময় এই বাংলার প্রজন্মের পর প্রজন্ম কে মাতিয়ে রেখেছে।
তবে এখানেও থাকছে চমক। কারণ গল্প দাদুর সঙ্গে এবার জুটি বাঁধছেন দিদারাও। ইঁদুর দৌড়ে (Rat Race) ব্যস্ত এই সময়ে কে না জানে, ছোটদের মত একই অসহায় অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বার্ধক্য’কেও। সারা জীবন সংসারে কাটিয়ে অবশিষ্ট দিনগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই “বৃদ্ধাশ্রম” ভরসা!


এই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ, প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে “দাদু-দিদা ক্লাব”। সরকারি সূত্রের খবর, “আনন্দধারা” নামের এই প্রকল্পের জন্য প্রধান উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

সম্প্রতি একাধিক প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যে একের পর এক ঘটে যাওয়া আত্মহত্যার (Suicide) ঘটনায় বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি জানিয়েছেন “দাদু-দিদা ক্লাব” নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা।
এখানে বসবে “গল্প দাদুর আসর”। দাদু-দিদাদের ক্লাবে যোগ দেবে এলাকার ছোটরা। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দু’দিন প্রায় ঘন্টা দুয়েক চলবে কেবল জমাটি আড্ডা, হাসি, গল্প। প্রবীণদের সঙ্গে এই আনন্দ ভাগ করে নেবে ছোটরা। তাদের মনের কথা বলবে, তাদের আনন্দ, দুঃখ, সাফল্য, ব্যর্থতা ভাগ করে নেবে দাদু-দিদাদের সঙ্গে। যেসব কথা বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে বলা যায় না, অনায়াসে তা বলা যাবে দাদু-দিদাদের ক্লাবে।

সরকারের ভাবনা অনুযায়ী, দাদু-দিদা ক্লাবে দাদু, দিদাদের কাছে গল্প শুনতে আসবে কচি কাঁচারা। রূপকথা-রাজপুত্র-দৈত্য শুধু নয়, প্রবীণ নাগরিকদের কাছ থেকে জীবনের পাঠ নেবে তারা। এত বছর ধরে তাঁরা যেসব জ্ঞান, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন জীবনের কাছ থেকে, তাই ভাগ করে নেবেন ছোটদের সঙ্গে। যা ছোটদের বড় হয়ে ওঠার পথে কাজে লাগবে।


কিভাবে এই প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলতে হবে? সরকারের তরফে তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে এই সমস্ত বয়স্ক নাগরিকদের। “হেল্প এজ ইন্ডিয়া” (HelpAge India) এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *