আজ খবর ডেস্ক: মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনার মুখে পড়া বিমানটির ব্ল্যাকবক্সের (Blackbox) হদিশ পেয়েছে নেপাল সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল।
উদ্ধারকারী দল সূত্রে খবর, বিমান দুর্ঘটনায় নিহত যে ১জন যাত্রীর মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, শেষমেশ তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
রবিবার সকালে দ্য তারা এয়ার প্লেন সংস্থার বিমানটি পোখরা থেকে উড়ে যাওয়ার পরই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। তারপর বিমানের ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া যায়। সোমবার নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে বিমানের কোনও যাত্রীরই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।
অন্যদিকে তারা এয়ারলাইন্স ৪ ভারতীয় অশোক কুমার ত্রিপাঠী, তাঁর স্ত্রী বৈভবী ত্রিপাঠি এবং তাদের ২সন্তান ধানুশ এবং ঋত্বিক হিসাবে চিহ্নিত করেছে। পরিবারটি মুম্বাইয়ের কাছে থানে (Thane) শহরের বাসিন্দা।
জন গিয়েছে, ওই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হলেও আদালতের নির্দেশেই তাঁরা তাঁদের দুই সন্তানকে নিয়ে ১০ দিনের ছুটি কাটাতে নেপালে গিয়েছিলেন।
কিন্তু সেখানেই যে এমন বিপর্যয় নেমে আসবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি তাঁরা! ওই পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গেও ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রশাসনের কাছে বৈভবীর দিদি অনুরোধ জানান, তাঁদের মা গুরুতর অসুস্থ। বোন ও তাঁর পরিবারের দুর্ঘটনার কথা যেন তাঁকে জানানো না হয়।
বৈভবীর দিদি জানিয়েছেন, তাঁর বোন বান্দ্রার (Bandra) একটি নামকরা সংস্থায় কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে স্বামী অশোকের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি সন্তানদের নিয়ে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন। তাঁর মা দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ থাকায় তিনিই দেখভাল করতেন।
বিবাহবিচ্ছেদের সময় আদালতের তরফে বৈভবী ও তাঁর স্বামীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তাঁরা যেন সাধ্যমত প্রতি বছর সন্তানদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যান। এতে সন্তানদের ওপর বিচ্ছেদের প্রভাব কিছুটা কম পড়বে।
নেপাল অসামরিক বিমান পরিবহণ অথরিটির মুখপাত্র দেও চন্দ্রা লাল কর্ণ বলেন, ”সবকটি দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। হদিশ মিলেছে ব্ল্যাক বক্সেরও।”
জানা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট তারা এয়ারের বিমানটি ১৯৭৯ সালের একটি এয়ারক্রাফ্ট (Aircraft)। ফ্লাইট ট্রাকিং ওয়েবসাইট (Flight Tracking Website) থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। একটি পাঁচ সদস্যের দল এই ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
কী কারণে বিমানটি ভেঙে পড়ল, তা বিশদে খতিয়ে দেখা হবে।
বিমানটি মেয়াদ উত্তীর্ণ বলেও মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও ওই বিমানে থাকা ২২ জন যাত্রীর দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকায় অবরুদ্ধ একটি রাস্তা সাফ করার পরেই বিমানের ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
যদিও বেশ কয়েকটি দেহ খাদে পড়ে যাওয়ার জন্য তা উদ্ধার করতে দেরি হয়। ধীরে ধীরে দেহাবশেষ চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে।
ঠিক কী কারণে ওই বিমানে দুর্ঘটনা ঘটে? তা জানা যাবে ব্ল্যাক বক্স থেকে। তাই সেই উদ্ধার করা ব্ল্যাক বক্স নিয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে নেপালের অসমারিক বিমান দপ্তর। নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নারয়ণ সিলওয়াল মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছেন, “যে একজন যাত্রী নিখোঁজ ছিল, তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে ১২ টি মৃতদেহ কাঠমাণ্ডুতে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হয়েছে।”
মুস্তাং জেলার কোয়াং গ্রামের কাছে থাসাং-২ -র সানোস্বারেতে বিমানটি ভেঙে টুকরো টুকরো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। বিমান ভেঙে পড়ার পর থেকে উদ্ধারকাজ শুরু হলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়েছিল। বিমানটিকে জমসমের মুস্তাংয়ের কাছেই শেষবার দেখা গিয়েছিল।