আজ খবর ডেস্ক: উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। অন্যান্য বিষয়ে পাশ করলেও আটকে গেছেন ইংরেজিতে।
বন্ধু-সহপাঠিদের নিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাতে বসেছিলেন।
আর সেখানেই সংবাদমাধ্যমের একাংশের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।
সেই এক ভিডিও তেই জীবন তছনছ! মুখ লোকানোর জায়গা খুঁজতে হচ্ছে ‘Amrela’ বানান করা সেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে। পাড়া, প্রতিবেশী সকলেই ভাইরাল ভিডিও দেখেছেন।
পাতার চেনা মেয়েটিকে রাতারাতি যেন এক বানানে চিনছেন সকলে। ‘সমাজ’ মুখ ফিরিয়েছে গোটা পরিবারের থেকে।
নদিয়ার সুদীপ্তা বিশ্বাস এখন ‘আমব্রেলা দিদি’। সমাজ মাধ্যমে নিয়মিত ট্রোল (troll) হওয়ার পর মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত সেই মেয়ে। পরিবার সূত্রে খবর, এই অসম্মানের হাত থেকে বাঁচতে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর ইংরেজিতে ফেল করেছিল মালদহের এক ছাত্রী। সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিল সেও। লাগাতার কটুক্তি সহ্য করতে না পেরে দিন কয়েক আগে আত্মঘাতী হয়েছে সেই ছাত্রী।
সুদীপ্তার বাবা সুকুমার বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, “মেয়ে দু’তিন বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। আমরা চোখে চোখে রাখছি বলে এখনও কোনও অঘটন ঘটেনি। আমরা বাড়ি থেকে বার হতে পারছি না। চারপাশে লোকজন যেসব কথা বলছে তা সহ্য করা যাচ্ছে না। যাঁরা এসব রটাচ্ছে তাঁদের অনুরোধ করছি এই রকম করবেন না।”
এমনকি, আত্মীয়রাও পাশে নেই বলে জানান তিনি। সুদীপ্তার বাবার বলেন, “নিজের আত্মীয় প্রতিবেশীরা খারাপ মন্তব্য করছে। বলছে পড়াশোনা শেখাতে পারে নি। আমি নিজে দেখেছি ইউটিউবে ওই ভিডিও টা। ওকে বলেছে ‘আমবেলা’ বানান করতে। তাই ও ওই বানান করেছে। ওকে যদি বলত ‘আমব্রেলা’ (Umbrella) বানান করতে তাহলে হয়তো ঠিক বলত। যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে সেভাবে উত্তর দিয়েছে। আমার মনে হয় ও ঠিক উত্তর দিয়েছিল।”
নদিয়ার শিবকালি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ছাত্রীরা বিক্ষোভে বসেছিল। তাঁদেরই একজন সুদীপ্তা। তাঁকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেন, “কেন বিক্ষোভ তাঁদের?” প্রশ্নের জবাবে সুদীপ্তা বলেন, “সাতটি মেয়েকে ইংরেজিতে ফেল করানো হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে লেটার পেয়েও তাঁরা ইংরেজিতে ফেল করার বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছেন না। আর সেই কারণেই পাশ করানোর দাবিতে তাঁদের প্রতিবাদ।”
এরপরেই সাংবাদিক প্রশ্ন করেন তাঁকে ‘আমব্রেলা’ বানান বলতে। প্রথমে অল্পবিস্তর প্রতিবাদ করে ওই ছাত্রী, “কে রে, কী বলছেন, এসব নিতে এসেছেন?” বলে প্রতিবাদ জানায়।
এরপরেই ওই সাংবাদিক Umbrella বানান জিজ্ঞাসা করায় সুদীপ্তা উত্তর দেয় , “AMRELA”।
তারপর থেকেই ভাইরাল এই ভিডিও নেটপাড়ায় রীতিমত ঠাট্টার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
তাঁকে নিয়ে ট্রোলের বন্যা। কেউ আবার বানাচ্ছেন ‘রিমিক্স’ গান। এই ভাইরাল ভিডিওর বাড়বাড়ন্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশ।
তাঁদের মন্তব্য, এভাবে একটা ভিডিও বা হঠাৎ একটি বানানের ভিত্তিতে কারও মেধা যাচাই করা উচিত নয়। আর একটি বানানই কি প্রমাণ করে মেয়েটির ইংরেজি ভাষার দৌড়?
সামাজিকভাবে একটি কিশোরীকে এহেন নির্যাতন কার্যত অপরাধের শামিল বলে মনে করছেন অনেকেই। এই পুরো বিতর্কে সুদীপ্তার পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন নদিয়া জেলার মতুয়া মহাসংঘ। এমনকি, নদিয়া জেলার মতুয়া মহাসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা এসব ট্রোল করছে বা রিমিক্স তৈরি করছে দিন কয়েকের মধ্যেই সাইবার ক্রাইম বিভাগে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হবে।