আজ খবর ডেস্ক: দ্রৌপদী মুর্মু নাকি যশবন্ত সিনহা? আপাতত এই নিয়ে দেশের রাজনীতি উত্তাল। তবে তার মধ্যেই ঘর এবং গড় বাঁচাতে প্রাণপণ লড়াই চালাচ্ছে শিবসেনা (Shiv Sena)।
এদিনই গুয়াহাটি থেকে মুম্বাই পৌঁছনোর কথা বিদ্রোহী বিধায়কদের নেতা একনাথ শিন্ডে’র (Eknath Shinde)। সরাসরি মহারাষ্ট্র বিধানসভায় অধ্যক্ষের কাছে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে পৌঁছনোর কথা তাঁর।
তবে তার আগেই বিদ্রোহী বিধায়কদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরকে (Uddhav Thackeray) চিঠি লিখলেন।
চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, “বিদ্বেষবশত আমাদের শিবিরের ৩৮ জন বিধায়কের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করেছে মহারাষ্ট্র সরকার।’’
যেন টানটান রাজনৈতিক থ্রিলার! মহারাষ্ট্র ছেড়ে যাওয়ার পরেই বিদ্রোহী বিধায়কদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে পড়েছিলেন উদ্ধব ঠাকরের অনুগামীরা।
গত দু’দিন ধরে বিদ্রোহী নেতা একনাথ শিন্ডের সঙ্গে থাকা বিধায়কদের কয়েক জনের বাড়ির সামনে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে। শনিবার পুণেতে বিদ্রোহী বিধায়ক তানাজি সাওয়ন্তের দপ্তরে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ।
রাজনৈতিক মহল বলছে, এ যেন মোগলদের বিরুদ্ধে মারাঠি আইকন ছত্রপতি শিবাজি’র লড়াই। হাতে থাকা বিধায়ক সংখ্যা রোজ কমছে। জোট ম্যাজিক ফিগারের ধারে কাছে নেই। তবু হাল ছাড়ছেন না উদ্ধব।
শুক্রবার বিকেলে শিবসেনা পরিষদীয় দল এবং জেলা সভাপতিদের বৈঠকে ইস্তফার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ‘সংখ্যার লড়াইয়ে’ নামার বার্তা দিয়েছেন উদ্ধব ও আদিত্য ঠাকরে।
এমনকি জানা গিয়েছে উদ্ধব শুক্রবার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাংলো ‘বর্ষা’ ছেড়ে দিয়েছি, কিন্তু দৃঢ়সংকল্প ছাড়িনি। এর আগেও আমরা একাধিক বার বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও দু’বার ক্ষমতায় এসেছি।’’ অন্য দিকে, উদ্ধবের ছেলে তথা মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী, আদিত্য ঠাকরকেও (Aditya Thackeray) “বিশ্বাসঘাতক”দের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
এর মধ্যেই শুক্রবার বিকেলে আরেক শিবসেনা বিধায়ক দিলীপ লন্ডে গুয়াহাটি পৌঁছে বিদ্রোহী শিবিরে যোগ দিয়েছেন। এর ফলে শিন্ডে-শিবিরে শিবসেনা বিধায়কের সংখ্যা ৩৮-এ পৌঁছল। শিন্ডের দাবি, মোট ৪২ জন শিবসেনা এবং ১০জন নির্দল বিধায়ক রয়েছেন তাঁর পাশে।
এবার এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক মহারাষ্ট্র বিধানসভার পাটিগণিত। ২৮৮ সদস্যের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১৪৫ জন বিধায়কের সমর্থন। এই মুহূর্তে একটি পদ খালি থাকায় ম্যাজিক ফিগার ১৪৪।
খাতায় কলমে শিবসেনার ৫৫, এনসিপির (NCP) ৫৩ এবং কংগ্রেসের (Congress) ৪৪ বিধায়কের পাশাপাশি বহুজন বিকাশ আঘাডীর ৪, সমাজবাদী পার্টি এবং প্রহার জনশক্তি পক্ষের দু’জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে উদ্ধব শিবিরে। এ ছাড়া কৃষক সংগঠন পিডিডব্লিউপিআই-এর ১ এবং ৮ নির্দল রয়েছেন ট্রেজারি বেঞ্চে।
যদিও বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, শিবসেনার ৫৫ বিধায়কের মধ্যে অন্তত ৩৮ জন ইতিমধ্যেই শিন্ডে শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। সেই সঙ্গে ৮ নির্দলও। বৃহস্পতিবার উদ্ধবের বৈঠকে হাজির ছিলেন আদিত্য-সহ মাত্র ১৪ জন বিধায়ক। ফলে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালানোর অঙ্গীকার করলেও পরিষদীয় পাটিগণিতের হিসাব বলছে, উদ্ধবের পক্ষে গদিরক্ষা কার্যত অসম্ভব।
অন্যদিকে, মহারাষ্ট্র বিধানসবায় বিজেপির (BJP) বিধায়ক সংখ্যা ১০৬। রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (MNS), রাষ্ট্রীয় সমাজ পক্ষ এবং জনসুরাজ সাক্ষী পক্ষের ১ জন করে এবং ৫ নির্দল বিধায়ক রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী শিবিরে। আসাদউদ্দিন ওয়েইসির ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (AIMIM)-এর ২ এবং সিপিএম (CPIM) ও স্বাভিমানী পক্ষের ১ জন করে বিধায়ক ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান পালন করেন বিধানসভায়।
এই পরিস্থিতিতে উদ্ধবের নয়া রণকৌশল হল, বিদ্রোহী বিধায়কদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে দলত্যাগ বিরোধী আইনে অভিযোগ আনা। বিদ্রোহী শিবিরের সংখ্যা কমানো।
বৃহস্পতিবার শিন্ডে-সহ ১২ বিধায়কের পর শুক্রবার আরও ৪ জন বিদ্রোহী বিধায়কের পদ খারিজের জন্য ভারপ্রাপ্ত স্পিকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী, পরিষদীয় দলে ভাঙনের স্বীকৃতির জন্য দলত্যাগ বিরোধী কার্যকলাপে অভিযুক্ত হননি, এমন অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন।
আপাতত সেই পথেই হাঁটতে চলেছেন উদ্ধব।