আজ খবর ডেস্ক: সোমবার সকাল ১১টা বেজে ১৭ মিনিট। এসএসকেএমেরSSKM) সিসিইউ(CCU) তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বর্ষীয়ান চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar)।


৯১ বছর বয়সেও লড়াই চালাচ্ছিলেন কিডনি ও হার্টের সমস্যার সঙ্গে। আর শেষ রক্ষা হল না।
তবে রেখে গেলেন তাঁর সৃষ্টির ভান্ডার। কখনোই না ভোলার মত এমন কিছু বাংলা ছবি যা আসলে একটি যুগের সাক্ষী হয়ে থেকে যাবে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের জন্য। যে ফিলমগুলো তারকার জন্য অথবা তাক লাগানো বাজেটের জন্য নয়, মনের মণিকোঠায় থেকে যায় তার গল্প, আবেগ আর পরিচালনার গুণে।

ফিল্মি ভাষায় আর্ট(Art) এবং কমার্শিয়াল(Commercial) ছবির মাঝামাঝি থাকে আরেকটি ধারা, প্যারালাল ছবি(Parallel Movie)।
বাণিজ্যিক ছবির থেকে অনেক কম বাজেটে, কিন্তু বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ফিল্মের কাহিনী তুলে ধরা। নতুন ধারার এই ফিল্ম বানানো ভারতে শুরু হয়েছিল ১৯৬০ থেকে, যার অন্যতম কারিগর ছিলেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন’রা।
পরে সেই ব্যাটন হাতে তুলে নিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের অন্যতম তরুণ মজুমদার।


১৯৬২ সালে ‘কাচের স্বর্গ’ ছবির জন্য প্রথম জাতীয় পুরস্কার পান পরিচালক। মোট চারটি জাতীয় পুরস্কার জয়ী চলচ্চিত্র পরিচালককে কেন্দ্র পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে ১৯৯০ সালে।

তবে নিছক পুরস্কার দিয়ে তরুণ মজুমদারের “ফিল্মি গ্রাফ” মাপা সম্ভব নয়।। “কাচের স্বর্গ” ছবির সেই চিকিৎসক যিনি দীর্ঘদিন তাঁর পেশা ছেড়ে দেওয়ার পরেও একটি রোগীকে বাঁচানোর জন্য হাতে তুলে নেন অপারেশনের যন্ত্র। ছবিতে ফুটে ওঠে সেই চিকিৎসকের মানসিক দ্বন্দ্ব।
অথবা “ঠগিনী” ছবির সেই মেয়েটি যে, পরিবার রক্ষার তাগিদে বিয়ে করে এবং বাসর রাতে স্বামীর সর্বস্ব চুরি করে পালায় বারবার।
“নিমন্ত্রণ” বা “পলাতক” ছবির নায়ক, যে সংসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে ভয় পায়, এবং ভালোবাসার মানুষদের থেকে পালিয়ে বেড়ায়।
এমন অসংখ্য ছবি যার নায়ক অনুপ কুমার, সমিত ভঞ্জ, অথবা নয়ের দশকে তাপস পাল। “ফুলেশ্বরী” হোক অথবা “শ্রীমান পৃথ্বীরাজ”, “দাদার কীর্তি” থেকে “সংসার সীমান্তে” অথবা “পথভোলা”! তরুণ মজুমদারের ছবির সঙ্গে সন্ধ্যা রায়ের অভিনয় আলাদা করা সম্ভব নয়।

১৯৩১ সালের ৮ জানুয়ারি অবিভক্ত বাংলার বগুড়ায় জন্ম তরুণ মজুমদারের। পড়াশোনা কলকাতাতেই। সেন্ট পলস্‌ ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র তরুণ পরে রসায়ন নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
তরুণের ফিল্ম জগতে পদার্পণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পরই। তবে ১৯৫৯ সালে প্রথম ফিল্ম পরিচালনায় আসেন তিনি। উত্তম কুমার সুচিত্রা অভিনীত ‘চাওয়া পাওয়া’ ছবিটি দিয়ে। তখন তাঁর বয়স ২৮।
যদিও এই ছবিটির পরিচালনায় আসলে ছিল “যাত্রিক” নামে একটি গোষ্ঠী। যার সদস্য ছিলেন শচীন মুখোপাধ্যায়, দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের এবং তরুণ মজুমদার। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এই ‘যাত্রিক’-এর সঙ্গেই ছবির পরিচালনা করেছেন তরুণ। তার পর আলাদা ভাবে ছবি পরিচালনা শুরু করেন। ১৯৬২ সালে এই যাত্রিকের পরিচালনাতেই ‘কাচের স্বর্গ’ ছবিটি তৈরি হয়। যা পরে জাতীয় পুরস্কার এনে দেয় পরিচালককে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে যে শোকবার্তা পাঠানো হয়েছে তাতে লেখা , “বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।ভিন্নধারার রুচিসম্মত সামাজিক চলচ্চিত্র নির্মাণে তরুণ মজুমদার উজ্জ্বল নিদর্শন রেখে গিয়েছেন। তাঁর ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রয়োগ দর্শককে আবিষ্ট করে রাখে। তরুণ মজুমদার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র, ‘বালিকা বধূ’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘সংসার সীমান্তে’, ‘গণদেবতা’, ‘শহর থেকে দূরে’, ‘পথভোলা’, ‘চাঁদের বাড়ি’, ‘আলো’ ইত্যাদি উল্লেখের দাবি রাখে।”

তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ
পশ্চিমবঙ্গ সরকার
নবান্ন
৩২৫ শরৎ চ্যাটার্জি রোড
হাওড়া ৭১১১০২

স্মারক সংখ্যা: ১২৬/আইসিএ/এনবি
তারিখ: ৪/৭/২০২২

মুখ্যমন্ত্রীর শোকবার্তা

বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

ভিন্নধারার রুচিসম্মত সামাজিক চলচ্চিত্র নির্মাণে তরুণ মজুমদার উজ্জ্বল নিদর্শন রেখে গেছেন। তাঁর ছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের প্রয়োগ দর্শককে আবিষ্ট করে রাখে। তরুণ মজুমদার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র , বালিকা বধূ, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ফুলেশ্বরী, দাদার কীর্তি, ভালবাসা ভালবাসা, সংসার সীমান্তে, গণদেবতা, শহর থেকে দূরে, পথভোলা, চাঁদের বাড়ি, আলো ইত্যাদি উল্লেখের দাবী রাখে।

তিনি পদ্মশ্রী, জাতীয় পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।

তাঁর প্রয়াণ চলচ্চিত্র জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি।

আমি তরুণ মজুমদারের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়


এক নজরে পরিচালকের সৃষ্টি:

বালিকা বধূ-১৯৬৭
কুহেলি-১৯৭১
শ্রীমান পৃথ্বীরাজ-১৯৭৩
ঠগিনী-১৯৭৪
ফুলেশ্বরী-১৯৭৪
সংসার সীমান্তে-১৯৭৫
বালিকা বধূ -১৯৭৬ (হিন্দি)
গণদেবতা- ১৯৭৮
দাদার কীর্তি-১৯৮০
শহর থেকে দূরে- ১৯৮১
খেলার পুতুল-১৯৮২
অমর গীতি-১৯৮৪
ভালোবাসা ভালোবাসা-১৯৮৫
পথভোলা- ১৯৮৬
আগমন-১৯৮৮
পরশমণি- ১৯৮৮
আপন আমার আপন-১৯৯০
পথ ও প্রাসাদ-১৯৯১
আলো-২০০৩
ভালোবাসার আরেক নাম-২০০৫
চাঁদের বাড়ি-২০০৭


সম্প্রতি বামমনস্ক এই পরিচালককে নিয়ে তথ্যচিত্র বানানোর কাজে হাত দিয়েছিলেন তরুণ সিপিএম (CPIM) নেতা শতরূপ ঘোষ। “জীবনপুরের পথিক” নামের এই তথ্যচিত্র আপাতত সম্পাদনার টেবিলে রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *