আজ খবর ডেস্ক:
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) মঙ্গলবার চীনের মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থা ভিভোর বিরুদ্ধে নথিভুক্ত করা অর্থ পাচারের একটি মামলার ক্ষেত্রে সারা দেশে ৪০টি স্থানে অভিযান চালায়।


শীর্ষস্থানীয় চীনা মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থা ভিভো (Vivo) এবং তার সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপে নিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা।
প্রসঙ্গত, গত মে মাসে জেডটিই কর্পোরেশন (ZTE Corporation) এবং ভিভো মোবাইল কমিউনিকেশনস (Vivo Mobile Communications) এর স্থানীয় ইউনিটগুলির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। সেই কারণে তদন্তের মুখোমুখি ও হতে হয়েছিল এই সংস্থাকে৷

প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, মালিকানার অংশীদারিত্ব এবং আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখযোগ্য অনিয়ম” ছিল কিনা তা দেখার জন্য এপ্রিল মাসে ভিভোর বিরুদ্ধে একটি তদন্ত চাওয়া হয়েছিল। কারণ সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ওঠে এই সংস্থার বিরুদ্ধে।

২০২০ সালে, একই IMEI নম্বর দিয়ে দেশের প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ ফোন বিক্রির অভিযোগ ওঠে ভিভোর বিরুদ্ধে। প্রতারণার মামলা দায়ের করেছিল মিরাট পুলিশ।
ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (IMEI) হল একটি ১৫ সংখ্যার কোড যা স্মার্টফোনগুলিকে পৃথকভাবে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
বস্তুত ওয়াকিবহাল মহলের মনে করছে, এটি হল দ্বিতীয় ঘটনা যেখানে ইডি একটি চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে এত বড় অঙ্কের অর্থ কারচুপির মামলা নথিভুক্ত করেছে।
এর আগে এটি ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট (FEMA) লঙ্ঘন করে অবৈধ বিদেশী রেমিট্যান্স করার অভিযোগে চীনা মোবাইল নির্মাতা শাওমি’র (Xiaomi) বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।

Xiaomi India হল চীন ভিত্তিক Xiaomi গ্রুপের একটি সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানির করা অবৈধ রেমিট্যান্সের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে ইডি।
এপ্রিল মাসে, ইডি এই মামলার বিষয়ে Xiaomi-র গ্লোবাল ভাইস-প্রেসিডেন্ট মনু কুমার জৈনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
পরে একটি বিবৃতিতে ইডি বলেছিল, “Xiaomi কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ভারতে ব্যবসা শুরু করে এবং ২০১৫ সাল থেকে চীনে লভ্যাংশ পাঠানো শুরু করে। কোম্পানিটি তিনটি বিদেশী ভিত্তিক সংস্থাকে ৫৫৫১.২৭ কোটি টাকার সমতুল্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছে রয়্যালটির ছদ্মবেশে। রয়্যালটির নামে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের চীনে অবস্থিত তাদের হেড অফিসের নির্দেশে প্রেরণ করা হয়েছিল। এছাড়াও অন্য দুটি মার্কিন কোম্পানিকে পাঠানো অর্থও Xiaomi গ্রুপ বেআইনি ভাবে পাঠিয়েছিল।

ইডি’র মতে, Xiaomi India ‘MI’ ব্র্যান্ড নামে ভারতে মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ী এবং পরিবেশক।
Xiaomi ইন্ডিয়া তিনটি বিদেশী-ভিত্তিক সংস্থার কাছ থেকে কোনও পরিষেবা নেয়নি। অথচ যাদের কাছে এই বড় অঙ্কের অর্থ পাঠিয়েছে।
পারস্পরিক সম্পর্কহীন বিভিন্ন ডকুমেন্টের আড়ালে, কোম্পানি রয়্যালটির ছদ্মবেশে এই অর্থ বিদেশে পাঠানো হয়েছে যা FEMA-র ৪নম্বর ধারাকে সরাসরি লংঘন করে।
সেইসঙ্গে ইডি’র পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, এই কোম্পানী বিদেশে অর্থ প্রেরণ করার সময় ব্যাঙ্কগুলিকে বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ করেছিল।

২০২০ সালে দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনার পরে চীনা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তদন্তে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল ভারত সরকার।
যার ফলে কূটনৈতিক স্তরে একাধিক দফা আলোচনার পরে “টিকটক” (TikTok) সহ ২০০ টিরও বেশি মোবাইল অ্যাপ (Mobile App) নিষিদ্ধ করা হয় সেসময়।
চলতি বছরের মে মাসে, চীন দাবি করে, ভারত গত ১বছর অন্য যেকোনও দেশের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনেক গুণ বেশি বাণিজ্য করেছে। ফলে ভারত ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অনেকটাই কমেছে। এমনকি সূত্রের খবর চীনের তরফে, ভারতের সঙ্গে পুরনো, স্বাভাবিক বাণিজ্যকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এরপরেও যেভাবে ভারতীয় এজেন্সি অপর একটি চীনা মোবাইল কোম্পানির বিরুদ্ধে আর্থিক তসরূপের বিষয়ে তদন্ত করছে, তাতে ওয়াকিবহাল মহল মনে পড়ছে কার্যত এটি কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্তরে চীনের বিরুদ্ধে ভারতের নয়া “সার্জিক্যাল স্ট্রাইক”।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *