আজ খবর ডেস্ক:

আপডেট: অমরনাথ যাত্রায় গিয়ে মৃত্যু হল বারুইপুরের এক পড়ুয়ার। নাম বর্ষা মুহুরী। জিওগ্রাফি নিয়ে এমএসসি পড়ছে। শুক্রবার মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টির জেরে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়।

বিধ্বংসী অমরনাথ। কমপক্ষে ১৬ জন নিহত (এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত)। আটকে পড়েছেন ১৫হাজার তীর্থযাত্রী।
এঁদের মধ্যে যেসব তীর্থযাত্রী, জম্মু ও কাশ্মীরের অমরনাথ গুহার কাছে মেঘ বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার কারণে আটকা পড়েছিলেন, তাঁদের পাঞ্জতারনির নিম্ন বেস ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এদিকে অমরনাথের দুর্যোগে আটকে পড়েছেন বাংলার ৬ জন, খোঁজ মিলছে না ২ জনের।

অমরনাথ গুহার কাছে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ২৫টি পুণ্যার্থী শিবির (Cloudburst Near Amarnath) নিখোঁজ অনেক। এর মধ্যে বাংলারও কয়েকজন রয়েছেন বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর, অমরনাথের দুর্যোগের পরে সেখানে আটকে পড়েছেন ধূপগুড়ির ৬ জন বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে ৪জন ক্যাম্পে ফিরে এলেও বাকি দু’জনের এখনও কোনও খোঁজ মেলেনি।


পেশায় ব্যবসায়ী এই ৬জন ট্রেনে করে অমরনাথ গেছিলেন। সেখানে তাঁরা হেটে অমরনাথের উদ্দেশে রওনা দেন। আচমকা মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে সকলেই দলছুট হয়ে পড়েন। তাঁরা জানিয়েছেন, হুড়মুড়িয়ে জলের স্রোত নেমে আসছিল। জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছিলেন। কোনওরকমে তাঁরা প্রাণ হাতে নিয়ে ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছেন।
দিক ভুলে ছন্নছাড়া হয়ে ঘুরে বেড়িয়ে শেষে ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছেন। তবে ওই ৬ জনের মধ্যে ২ জনের এখনও খোঁজ না মেলায় বাকিরা উদ্বিগ্ন।

এদিন টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাত জানিয়েছেন, সর্বোত ভাবে রাজ্য সরকার পাশে রয়েছে। নবান্নে ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানকার নম্বর ০৩৩-২২১৪৩৫২৬। যে পরিবারের লোকজন অমরনাথ গিয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করতে পারছেন না, তাঁদের কী অবস্থা, ইত্যাদি জানানো হবে কন্ট্রোল রুম থেকে।
শনিবার দুপুর পর্যন্ত জানা গিয়েছে, হাওড়ার একজই পরিবারের তিনজন, ধূপগুড়ির ছজন, উল্টোডাঙার চার জন লেকটাউনের ন’জন আটকে রয়েছেন অমরনাথে। এঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তারমধ্যেই খবর মিলেছে বারুইপুরের বাসিন্দা এমএসসি পড়ুয়া বর্ষা মুহুরি পরিবারের সঙ্গে অমরনাথ গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

যদিও শুক্রবার ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (IMD) জানিয়েছে, দক্ষিণ কাশ্মীরের অমরনাথ গুহা মন্দিরের কাছে মৃত্যু এবং ধ্বংসের কারণ স্থানীয় বৃষ্টিপাত। মেঘ বিস্ফোরণের কারণে এটা হয় নি।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, শুক্রবার বিকেল ৪.৩০থেকে ৬.৩০ এর মধ্যে প্রায় ৩১মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, শুক্রবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কাশ্মীরের অমরনাথ মন্দিরের কাছে আকস্মিক বন্যা কয়েক হাজার লোককে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

শুক্রবার প্রায় ১৫০ জন তীর্থযাত্রী পাঞ্জতারনিতে বিএসএফ (BSF) ক্যাম্পে রাত কাটিয়েছেন।
শনিবার সকালে তাঁদের মধ্যে অসুস্থ ১৫জন কে বিমানে বালতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, বিএসএফ-এর বিমান শাখার একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার পরিসেবার কাজে লাগানো হয়েছে।
দিল্লিতে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “১৬টি মৃতদেহ বালতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।”


ITBP-এর একজন মুখপাত্র শনিবার জানিয়েছেন, মেঘ বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার কারণে জম্মু ও কাশ্মীরের অমরনাথ পবিত্র গুহার কাছে আটকে পড়া অন্তত ১৫ হাজার তীর্থযাত্রীকে পাঞ্জতারনির নিম্ন বেস ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

আইটিবিপি বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইতিমধ্যেই
অমরনাথ গুহার নীচের অংশ থেকে পাঞ্জতারনি পর্যন্ত রুট খোলার এবং সুরক্ষা দলগুলিকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
গত ৩০শে জুন শুরু হওয়া “তীর্থযাত্রা ট্র্যাজেডি”র পরে স্থগিত করা হয়েছে এবং উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ার পরে এটি পুনরায় শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জানিয়েছে প্রশাসন।
সেই সঙ্গে ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের (ITBP) তরফে জানানো হয়েছে, “কোনও তীর্থযাত্রী ট্র্যাকে আটকে নেই। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫হাজার লোককে নিরাপদে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।”


বিএসএফের মুখপাত্র বলেন, বন্যায় গুরুতর আহত ৯জন রোগীর চিকিৎসা করেছেন ওই বাহিনীর চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা। তাঁদের নিম্ন উচ্চতার নীলগ্রাঠ বেস ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
গুহা মন্দির থেকে আগত তীর্থযাত্রীদের সহায়তা করার জন্য নীলগ্রাথ হেলিপ্যাডে একটি ছোট বিএসএফ দলও মোতায়েন করা হয়েছে।

তবে ৪০জনেরও বেশি তীর্থযাত্রী এখনও নিখোঁজ।
ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশ সারা রাত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাঁরা নিম্ন অমরনাথ গুহা সাইটে মেঘ বিস্ফোরণ-আক্রান্ত এলাকায় নিখোঁজ তীর্থযাত্রীদের সন্ধান করছে। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (NDRF) প্রায় ৭৫ জন উদ্ধারকারীর সমন্বয়ে তিনটি দল পাঠিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *