আজ খবর ডেস্ক:
ঘটনা ১
২১শে ফেব্রুয়ারি “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”। পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় “অমর একুশে” নামে।
ঘটনা ২
২১শে জুলাই। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে “শহিদ দিবস” পালন করা হয়। ১৯৯৩ দলের ২১শে জুলাই তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বে “মহাকরণ অভিযান” কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল। ১৩জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছিল সেদিন।


পরবর্তী সময়ে তৃণমূল কংগ্রেস দল তৈরি হওয়ার পরে প্রত্যেক বছর পালিত হয় এই দিনটি।
তবে এবছর ২১শে জুলাইয়ের পোস্টারে এসেছে নয়া বদল। শহিদ দিবসের পাশাপাশি পোস্টারের একেবারে ওপরে জ্বলজ্বল করছে অপর একটি শব্দবন্ধ। আর তা হল,
“অমর একুশে”। তাতেই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

করোনা (Corona) অতিমারীর কারণে গত দু’বছর ধর্মতলার পরিচিত জায়গায় এই কর্মসূচি পালন করা যায়নি। সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে ২০২০তে অনলাইন বক্তব্য রেখেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১ সালেও কালীঘাট মিলন সংঘে খুব ছোট জমায়েত হয়েছিল। মমতার বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল আমজনতার জন্য।
তবে এবার আবার ধর্মতলায় তৃণমূলের একুশে জুলাই কর্মসূচি হবে। নিয়ম মেনে মূল মঞ্চের খুঁটিপূজাসহ প্রচার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।


বেশ কিছু কড়া নিয়ম ইতিমধ্যেই জারি করা হয়েছে ঘাসফুল শিবিরের অন্দরে।

এসবের মধ্যেই একুশে বিতর্কের স্ফুলিঙ্গ প্রথম জ্বালান সিপিএম নেতা তথা এসএফআইয়ের (SFI) রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য (Srijan Bhattacharyya)। নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “একুশে জুলাই আসছে। তৃণমূলের বন্ধুরা লিখেছেন, অমর একুশে। কেন? তাঁরা জানেন না, অমর একুশে মানে কী? নাকি বাংলার রাজনৈতিক সামাজিক চেতনাকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এভাবেই তৃণমূল বিজেপিকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।”


প্রসঙ্গত, স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার পরে একদিকে যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম জুড়ে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল, ঠিক তেমনই আসামের শিলচরে, বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন ৪জন।

aajkhobor.com এই প্রসঙ্গে কথা বলেছিল বিশিষ্ট অধ্যাপক ও গায়ক শুভ প্রসাদ নন্দী মজুমদারের (Subha Prasad Nandi Majumdar) সঙ্গে।


তিনি বললেন, “একটা দলের একটা দিবস উদযাপন কে একটা জাতির সম্মানের প্রতীকের সঙ্গে গুলিয়ে দেওয়াটা এক কথায় অসভ্যতা। ২১শে গোটা পৃথিবী জুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। সবাই তাকে “অমর একুশে”
বলে। পৃথিবীর সমস্ত ভাষাভাষী মানুষ নিজের নিজের মাতৃভাষা স্মরণ করেন এই দিনে। আর এখানে একুশে জুলাই পালিত হয় একটি বিশৃংখল কর্মসূচিকে স্মরণ করে এবং বিশৃংখলার মধ্যে দিয়ে। এরকম একটা অত্যন্ত সংকীর্ণ দলীয় কর্মসূচি কে গোটা মানবজাতির সম্মানের দিনের সঙ্গে গুলিয়ে দেওয়াটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটাকে আমি তীব্র ভাষায় নিন্দা করি”।

যদিও তৃণমূল কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে তারা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এই দিনটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। দলীয় কর্মসূচির পোস্টারে “অমর একুশে” শব্দবন্ধ শুধুমাত্র ওই ১১জন মৃত যুবকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ব্যবহার করা হয়েছে।


সামনে পঞ্চায়েত ভোট আর তারপরে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন। তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার বাইরে বেরিয়ে লোকসভা ভোটের আগে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে।।
ফলে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যথেষ্ট ওয়াকিবহাল যে এবছরের ২১শে জুলাইয়ের দিকে নজর থাকবে গোটা দেশের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *