আজ খবর ডেস্ক:
সম্পর্কে সূত্রপাত ২০০৮ সালে। একজন তখন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী। অন্যজন নামী ক্রিকেটকর্তা। গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রির খবর অনুযায়ী, সেই তখন থেকেই সুস্মিতা সেন (Sushmita Sen) ও ললিত মোদি কে (Lalit Modi) হামেশাই দেখা যেত রাত পার্টি অথবা নৈশ অভিসারে।
বলা হয় আইপিএলের (IPL) মাঠেই নাকি তাঁদের প্রথম দেখা।
অবশেষে পরিণতি পেল সুস্মিতা সেন এবং ললিত মোদির সম্পর্ক। যে খবর আচমকা সামনে আসতেই চমকে গেছেন ভারতের মানুষ। কারণ দেশছাড়া হওয়ার পর দীর্ঘদিন ললিত মোদি কার্যত নিজেকে সকলের চোখের আড়ালেই রেখেছিলেন।
ফিরলেন যখন, যেন “চন্দ্রবিন্দু”র গান হয়ে। “এভাবেও ফিরে আসা যায়…”।

আইপিএল নিয়ে টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল ললিত মোদির বিরুদ্ধে। সেই সময় তছরুপ হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৭০ কোটি। বস্তুত ভারতে ললিত মোদিকে ধরে নেওয়া হয় আর্থিক প্রতারণার ক্ষেত্রে বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি ও মেহুল চোকসিদের পথপ্রদর্শক।তদন্তের মাঝেই ২০১০ সালে দেশ ছাড়েন ললিত। সেই থেকে তিনি লন্ডনে।


ললিতের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গেছে, বরাবরই সুস্মিতা সেনকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন ললিত। অবশেষে বৃহস্পতিবার বিয়ের কথা ঘোষণা করেন তিনি।
সুস্মিতা আপাতত কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তাঁর শেষ পোস্ট যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী। ইনস্টাগ্রামে (Instagram) লিখেছিলেন, “কখনও কখনও জীবনকে অন্ধকারাচ্ছন্ন বলে মনে হয়। মনে হয় তোমাকে কবর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, সেটা আদৌ শেষ? নাকি নতুন শুরুর ইঙ্গিত?” ইমেজের ক্যাপশনে লেখেন, “এই জীবন আমি সৌভাগ্যের জোরে পাইনি। বরং আমি এই জীবন নিজের মত করে তৈরি করেছি।”

প্রাক্তন “মিস ইউনিভার্স” ওই পোস্ট করার ২১ ঘণ্টার মধ্যেই ললিত টুইট করে জানান, তাঁর বেটার হাফ সুস্মিতার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন তিনি।
বিষয়টি দেখে চমকে উঠেছেন বহুজন। তবে ২০০৮ সাল থেকেই একটু একটু করে গড়ে উঠেছে সুস্মিতা এবং ললিতের সম্পর্ক।
জানা গেছে, ২০১০ সালে সুস্মিতার শখ পূরণ করতে ১৩০ কোটি টাকা খরচ করতে চেয়েছিলেন ললিত। ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাইয়ের ওপর একটি বায়োপিক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সুস্মিতা সেন। সেই সময় নায়িকার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ললিত।


একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল, সুস্মিতার প্যাশন আর উৎসাহে মুগ্ধ হয়েছিলেন ললিত মোদি।
শোনা গিয়েছিল, সুস্মিতার জন্য ১৩০ কোটি টাকা খরচ করতে রাজি হয়ে যান ললিত। শাহরুখ খান (Shahrukh Khan), সলমান খান (Salman Khan) এবং অক্ষয় কুমারের (Akshay Kumar) মধ্যে যে কোনও একজনকে নায়ক করার কথা ছিল। পুরো বিষয়টিতে সুস্মিতাকে যারপরনাই সাহায্য করেছিলেন ললিত। সংবাদমাধ্যমকে সুস বলেছিলেন, “আমি পরিচালক হব কখনও ভাবিনি। ভাগ্যের ফেরেই এই জায়গায় আসতে পেরেছি।”

ললিত মোদি তখন ভারতীয় ক্রিকেটে আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ৫০ ওভারের একদিনের ক্রিকেটকে ২০ ওভারের টি-টোয়েন্টিতে নামিয়ে এনে ইতিহাস তৈরী করেছিলেন তিনি।
প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি থেকে তিনি তখন ক্রিকেট কর্তা। একাধিক বড় ব্যবসার সঙ্গে নিজের নাম জড়িয়েছেন। তালিকা সুদীর্ঘ।
“মোদি এন্টারটেনমেন্ট অ্যান্ড নেটওয়ার্ক” (MEN) তৈরি করেন। এই MEN ডিজনি এবং ESPN এর সঙ্গে কাজ করে। দেশে ESPN এবং Disney-র সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার শুরু করেন মোদি।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতেই পারে, গত দু’বছর ধরে ওটিটি প্লাটফর্মে ডিজনি হটস্টারের অন্যতম সফল ভেঞ্চার ওয়েব সিরিজ “আরিয়া” (Aarya)। যার মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন সুস্মিতা সেন। বলা যেতে পারে, এই সিরিজের মধ্যে দিয়ে বলিউডে কামব্যাক করেছেন নায়িকা।

এছাড়াও বিপুল পারিবারিক ব্যবসার উত্তরাধিকারী ললিত মোদি। ১০ বছরের জন্য MEN ESPN এর একজন ডিস্ট্রিবিউটর হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন সেই সময়।
যদিও ১০ বছর পরে ESPN এই চুক্তি আর পুননর্বীকরণ করায়নি।
এরপর ললিত মোদি কেরালায় Sixo বলে একটি সংস্থা শুরু করেন। পাশাপাশি, ললিত মোদি “মোদি এন্টারপ্রাইজ” ( Modi Enterprise) নামে তাঁদের পারিবারিক কংগলোমারেটের ( Conglomerate) প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন।

তবে ব্যবসায়িক সাফল্যের সঙ্গে, তাঁকে তাড়া করে বেরিয়েছে বিতর্কও। পারিবারিক ব্যবসা নিয়ে ও একাধিক বিতর্ক তাড়া করে বেরিয়েছে তাঁকে। তাঁর পিতা কে কে মোদি ( K.K. Modi) ছিলেন বড় ব্যবসায়ী।
“মার্লবোরো” সিগারেট প্রস্তুতকারী সংস্থা গডফ্রে ফিলিপসে ( Godfrey Phillips) তাঁর পিতার ৪৭% অংশীদারিত্ব ছিল। ফিলিপ মরিস কোম্পানিতে ছিল ২৫.১%। এই দুইয়ের মধ্যে থেকেই ললিত মোদি যে অংশীদারিত্ব পেয়েছিলেন– তা তিনি বিক্রি করে দেন।
আর্থিক তছরূপের দায়ে তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়। ২০১০ সাল থেকে তিনি থাকছিলেন লন্ডনে। IPL চলাকালীন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি।

প্লো


সুস্মিতার সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি টুইট করার পরেই নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। ফেসবুকে দুজনের ছবি দিয়ে মিম (Meme) বানানো হয়েছে, “রুপ কি রানী চোরো কা রাজা ২০২২ ভার্সন”।
আমজনতা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, প্রথমে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে বিজয় মালিয়ার মাত্র ২০০০ টাকা জরিমানা এবং চার মাসের জেল। আর এবার ললিত মোদি বীরদর্পে নিজের বিয়ের ঘোষণা করলেও কেন্দ্র সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপে নিতে পারছে না কেন?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *