আজ খবর ডেস্ক:
অর্থনীতির কারবারিদের বক্তব্য, ১৯৬০ সালে ১০০ টাকায় যে পরিমাণ জিনিস পাওয়া যেত, আজকে সেই পরিমাণ জিনিস কিনতে ৮৪৩৭.৫৫ টাকা ব্যয় করতে হয়। আরেকটু এগিয়ে কেউ কেউ বলছেন, ভারতীয় অর্থনীতির হাল এখনই না শোধরালে অচিরেই শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) দশা হবে।
কারণ একটাই। আর তা হল মুদ্রাস্ফীতি (Inflation)।
গত কয়েক বছরে দেশের একাধিক রাষ্ট্রায়ত্তা ব্যাঙ্কে সংযুক্তিকরণ (Merger) হয়েছে। দেশজুড়ে অধিকাংশ সরকারি ব্যাঙ্ক কর্মীদের আশঙ্কা, কেন্দ্রীয় সরকার আগামী দিনে প্রায় সবকটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ককেই বেসরকারি হাতে তুলে দেবে।

আগামী ১৯শে জুলাই ভারতের ৫৪ তম ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ দিবস (Bank Nationlisation Day)। গত বাজেট অধিবেশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৯শে জুলাই দুটি সরকারি ব্যাঙ্ককে বেসরকারিকরণের উদ্দেশ্যে ১৯৬৯ সালের ব্যাংক জাতীয়করণ আইনে বদল আনতে পারে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। একইসঙ্গে ১০৭০/৮০ এর ব্যাঙ্কিং কম্পানি অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ট্রানসফার অফ প্রপার্টি আইন সংশোধনের প্রস্তাব আনা হতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।
কয়েকদিন আগে, সবকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ করা হবে বলে মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব। এর প্রতিবাদে এ রাজ্যের অল ইন্ডিয়া ব্যাংক অফিসার কনফেডারেশন (AIBOC), অল ইন্ডিয়া নেশনালাইজড ব্যাংক অফিসারস ফেডারেশন (AINBOF) সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের ইউনিয়নগুলো প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল।

তাদের বক্তব্য, করোনা (Corona Virus) পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থায় কেন্দ্র সরকারের এই ধরণের “জনবিরোধী” মনোভাব দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের পক্ষে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং চরম ক্ষতিকর।
এদিকে, সম্প্রতি সামনে এসেছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ অ্যাপ্লাইড ইকোনমিক রিসার্চের (NCAER) একটি রিপোর্ট।

সেখানে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI) ছাড়া সমস্ত পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলির (PSB) বেসরকারিকরণ করা।
এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রাইভেট ব্যাঙ্কগুলি ইতিমধ্যেই পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলির একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসাবে কাজ করছে। এনসিএইআর-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, এসবিআই ছাড়া বেশিরভাগ পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলি গত দশকে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

জানা গেছে, এনসিএইআর-এর পুনম গুপ্তা এবং অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ পানাগরিয়া এই রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির তুলনায় সম্পদ এবং ইক্যুইটির উপর কম রিটার্ন অর্জন করেছে।


প্রসঙ্গত, বেসরকারি ব্যাঙ্কের তুলনায় রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাঙ্কের নন-পারফর্মিং অ্যাসেটের (NPA) পরিমাণ বেড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবর্ষ থেকে ২০২০-২১ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলিতে ৬৫.৬৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে সরকার। অপরিশোধিত ঋণের সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করতেই এই সাহায্য করেছে কেন্দ্র।
তা সত্ত্বেও এসবিআই ছাড়া বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বাজার মূল্যায়ন ‘খুব কম’ হয়ে গিয়েছে। এসবিআই ছাড়া অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের সম্মিলিত বাজার মূলধন ৪৩.০৪ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কম রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলিকে বেসরকারিকরণ করা সহজ হবে। বেসরকারিকরণের জন্য নির্বাচিত প্রথম দুটি ব্যাঙ্ককে ভবিষ্যতের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করা উচিত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি নীতি আয়োগ সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Central Bank) এবং ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের (IOB) বেসরকারিকরণের পরামর্শ দিয়েছে।


একের পর এক বেসরকারি ব্যাঙ্ক প্রতিনিয়ত দেউলিয়া হয়ে যাওয়া এবং সাধারণ মানুষকে তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ সুরক্ষিত রাখার জন্য ১৯৬৯ সালের ১৯ জুলাই ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ বা রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। এই বিশেষ দিনকে স্মরণে রেখে ব্যাংক বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ১৯ জুলাই রাজ্য জুড়ে তথা দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হল অল ইন্ডিয়া ব্যাংক অফিসার্স কনফেডারেশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে।

গত কয়েকদিন ধরে রাস্তায় নেমে প্রচার পুস্তিকা বিলি করা, ট্যাবলো বের করা, দৈনিক খবরের কাগজের মধ্যে লিফলেট বিলি করে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করে জনমত সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এছাড়াও ফেসবুকে “ব্যাঙ্ক বাঁচাও,দেশ বাঁচাও” নামে একটি পেজ খুলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আন্দোলনের সপক্ষে প্রচার চালাচ্ছে সংগঠন।


প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২২-এ দেওয়া বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা করেছিলেন যে, IDBI ব্যতীত ২০২১-২২ আর্থিক বছরে দুটি পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক (PSBs) এবং একটি সাধারণ বীমা সংস্থার বেসরকারীকরণ শুরু করা হবে।

যেহেতু PSB গুলি সংসদ দ্বারা পাস করা ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ আইনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকার এখন PSB-গুলির বেসরকারীকরণের সুবিধার্থে এই আইনগুলিতে সংশোধনী আনতে চলেছে৷ এই বক্তব্যের পাশাপাশি ব্যাঙ্ক সংগঠনের কর্তারা আরও বলছেন, “আমাদের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মূল স্টেক-হোল্ডাররা, ৭.৯ লক্ষ ব্যাঙ্ক অফিসার ও কর্মচারী থেকে লক্ষ লক্ষ PSB গ্রাহক, ব্যাঙ্ক বেসরকারীকরণের পক্ষপাতী নয়।”


“ব্যাংক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও” প্রচারাভিযান PSB-এর বেসরকারীকরণের বিরোধিতা ও প্রতিরোধ করার জন্য এই জাতীয় সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করে একটি দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *