আজ খবর ডেস্ক:
রাত পোহালেই ২১শে জুলাই। তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) মেগা ইভেন্ট। ইতিমধ্যেই সেজে উঠেছে ধর্মতলায়, ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৃণমূলের মঞ্চ।
করোনা’র (Corona) কারণে মাঝে ২বছর ধর্মতলার সভা হয় নি। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে হ্যাটট্রিক করে আসার পরেও এখানে সভা করেন নি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
প্রত্যাশা মতই এবার তাই উত্তেজনায় ফুটছে ঘাসফুল শিবির।
এরই মধ্যে কলকাতা শহরে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা।


পুলিশ সূত্রে খবর, এই কথা মাথায় রেখেই এবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের (21st July) মঞ্চে, শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবেশে জন্য আলাদা গেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে যাওয়া অচেনা আগন্তুকের প্রসঙ্গ মাথায় রেখে
এবার যথেষ্ট কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য।

ঠিক ১টায় মূল সভামঞ্চে পৌঁছানোর কথা তৃণমূল নেত্রীর। কালীঘাটের বাড়ি থেকে আলিপুরের রাস্তা দিয়ে মমতার কনভয় সভামঞ্চে যাবে।
২১শে জুলাই তৃণমূলের “শহিদ দিবস” উপলক্ষে শহর সচল রাখতে বাড়তি উদ্যোগ কলকাতা পুলিশের। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত একাধিক রাস্তাকে ওয়ানওয়ে (Oneway) করা হয়েছে।
এক নজরে সেই তালিকা
১) উত্তর থেকে দক্ষিণ = আমহার্স্ট স্ট্রিট,
২) দক্ষিণ থেকে উত্তর = কলেজ স্ট্রিট,
৩) উত্তর থেকে দক্ষিণ = ব্রেবোর্ন রোড,
৪) পূর্ব থেকে পশ্চিম = বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট,
৫) দক্ষিণ থেকে উত্তর = বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট,
৬) পশ্চিম থেকে পূর্ব = নিউ CIT রোড,
৭) দক্ষিণ থেকে উত্তর = বিধান সরণি,
৮) দক্ষিণ থেকে উত্তর = স্ট্র্যান্ড রোড,
৯) দক্ষিণ থেকে উত্তর = রবীন্দ্র সরণি (BK পাল অ্যাভিনিউ থেকে লালবাজার পর্যন্ত)।

এদিকে সোমবার বিকেলের পর থেকেই রাজ্যের প্রত্যন্ত জেলাগুলো থেকে তৃণমূল কর্মীরা আসতে শুরু করেছিলেন কলকাতায়। অধিকাংশই অবশ্য উত্তরবঙ্গের।
মঙ্গলবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, ধর্মতলা মঞ্চ, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম সহ বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।


প্রত্যেক বছর এই দিন উপলক্ষে তৃণমূল কর্মীদের পাঞ্জাবি দেওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। এবারও তৃণমূল কর্মীদের পাঞ্জাবি উপহার দিলেন অভিষেক। এই পাঞ্জাবি পরেই একুশের সমাবেশে অংশ নেবেন কর্মী সমর্থকরা। তবে এবার বাদ যান নি মহিলা কর্মীরাও। তাঁদের জন্যও পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে।
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে খবর, শুধুমাত্র কর্মী–সমর্থকরাই নয় এই শহিদ মঞ্চে বিশেষ খাদি’র (Khadi) পাঞ্জাবি পরবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্ত মন্ত্রী–বিধায়করা।
দলের বিশেষ ড্রেস কোড অনুযায়ী এবছর পুরুষরা পরবেন সেই খাদি’র পাঞ্জাবি এবং ওড়না দেওয়া হচ্ছে সব মহিলাদের।

তবে দলীয় নেতা-কর্মী থেকে আমজনতা, বৃহস্পতিবারের মূল কৌতূহল কিন্তু অন্য জায়গায়। অতীতে দেখা দিয়েছে এই মঞ্চ থেকেই রাজনৈতিক মহলকে বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। কার্যত একেক বছর তাঁর বক্তব্য চমক জাগিয়েছে।
স্বভাবতই ২০২৪ লোকসভা ভোট এবং তার আগে রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে কী বলবেন তৃণমূল নেত্রী, সেদিকে নজর থাকবে অনেকেরই।
পাশাপাশি এই মঞ্চেই কি ফের পুরনো দলে ফিরছেন শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee)? কলকাতার প্রাক্তন মেয়র এবং একসময় রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক দপ্তরের দায়িত্বে থাকা শোভন এবং তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় (Baisakhi Banerjee) মাসখানেক আগেই নবান্নে গিয়ে দেখা করে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেইসময় থেকেই শোভন-বৈশাখীর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের জল্পনা শুরু হয়েছিল।

যদিও, মাঝে কয়েক সপ্তাহ কেটে গেছে। এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও পক্ষই আর কিছু বলেননি।
তবে বৃহস্পতিবার ২১শের মঞ্চে শোভন-বৈশাখীর তৃণমূলে যোগদান ঘিরে নানারকম খবর সামনে আসছে।
সূত্রের দাবি, ২২শে জুনের পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহে দফায় দফায় শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে কথা হয়েছে তৃণমূলনেত্রীর। শোভন দলে ফিরলে তাঁর কী ভূমিকা হবে, সেই বিষয়ে খোলাখুলি কথা হয় দু’পক্ষের। তবে শোভনের সঙ্গে বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Baishakhi Banerjee) তৃণমূলে ফিরলে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা কী হবে, সেই নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে খবর।


এই মুহূর্তে শোভনের ছেড়ে যাওয়া বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র এবং কলকাতা পুরসভার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটে জিতে আসা প্রতিনিধি রত্না চট্টোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন নিয়েই অতীতে মমতার বিরাগভাজন হন শোভন। তার পর একে একে মেয়র পদ থেকে ইস্তফা, তৃণমূল ত্যাগ এবং সর্বোপরি বিজেপি-তে (BJP) যোগদান। তবে বিজেপি-তে যোগদানের পরও ২০১৯ সালে ভাইফোঁটার দিন মমতার বাড়িতে গিয়ে ভাইফোঁটা নিয়েছিলেন শোভন। সঙ্গে ছিলেন বৈশাখীও। এ ছাড়াও, রাজ্য সরকারের আয়োজনে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্‍সবেও তাঁদের দেখা গেছিল সামনের সারিতে।

কার্যত বিজেপি ছাড়ার পর থেকে সেভাবে আর সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না শোভন। গত প্রায় এক বছরেরও বেশি ক্যামেরার সামনে এসে ব্যক্তিগত জীবন, সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি।


সূত্রের খবর শোভন বৈশাখী ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের দিকে নজর থাকবে বৃহস্পতিবার।
বিজেপির একাধিক বিধায়ক, দীর্ঘদিন ধরে চর্চায় থাকা দক্ষিণবঙ্গের এক সাংসদ এবং উত্তর ২৪ পরগণার এক তরুণ বিধায়ক, যার সংসদ বাবা দিন কয়েক আগেই ফিরে গিয়েছেন তৃণমূলে। এছাড়াও বর্ষীয়ান এক আইনজীবীর নাম নিয়েও জল্পনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। সেই আইনজীবী একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। যদিও এখন তুমুল মমতা বিরোধী এবং অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্য।
যদিও তৃণমূল সূত্রে জানানো হচ্ছে, জমাটি প্রোফাইল এবং রেপুটেশন না থাকলে একুশের মঞ্চ থেকে কাউকে যোগদান করানো হবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *