আজ খবর ডেস্ক:
যৌনতায় নিস্পৃহ (Asexuality) আপনি? এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে আমাদের চারপাশে। নিছক নিজের সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ বোধ করছেন না, এমন নয়। যৌনতাই পছন্দ হচ্ছে না আপনার। সম্পর্কে থাকা বা না থাকা তো পরের কথা, শারীরিক ঘনিষ্ঠতা আর আপনাকে আগ্রহী বা উত্তেজিত করছে না।


এটুকু পড়ে অনেকেই হয়তো ভাবছেন এমন আবার সম্ভব? তাঁদের জন্য একটি তথ্য।
উইলিয়ামস ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, এই মুহূর্তে পৃথিবী জুড়ে ১.৭ শতাংশ মানুষ নিজেদের অযৌন বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন। সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, সমকামী, সমকামী পুরুষ এবং উভকামী (LGB) প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অযৌন বা লিঙ্গ নন-বাইনারী, জন্মের সময় নির্ধারিত মহিলা এবং কম বয়সীদের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ইতিমধ্যেই মনোবিজ্ঞানীদের একাংশ এই নিয়ে রীতিমত গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন।
আপাতভাবে কেরিয়ারের চাপ, সম্পর্কের দ্বিধা, কমিটমেন্ট ফোবিয়া এবং আর্থিক স্ট্রেস; এই বিষয়গুলোকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।


মনোবিদরা বলছেন অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এবং স্বল্প মেয়াদী সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা, যৌনতাকে একঘেয়ে করে তুলছে। অথচ একটি সম্পর্কে অনেকগুলো দিক থাকে। পাশাপাশি বসে গল্প করেও দীর্ঘ সময় কাটানো সম্ভব। কিন্তু এই যুগে সকলের হাতেই সময় কম। তাই রোমান্টিক হওয়ার মত সাধ অথবা সাধ্য কোনটাই থাকছে না। দ্রুত বৈচিত্র খুঁজে নেওয়ার নেশায় এক সম্পর্ক থেকে আরেক সম্পর্কে ঝাঁপ দেওয়া আদতে মনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে যৌন আকর্ষণ এবং রোমান্টিক আকর্ষণ দুটি ভিন্ন জিনিস। যদিও আধুনিক সমাজে, হামেশাই দুটি বিষয় গুলিয়ে যায়।
যৌন আকর্ষণ আসলে শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়া, পছন্দের সঙ্গীকে স্পর্শ করার ইচ্ছা হিসাবে দেখা যেতে পারে। আবার কখনও একে অপরের প্রতি রোমান্টিক অনুভূতি অনুভব না করেই যৌনভাবে আকৃষ্ট হতে পারি। সাধারণত স্বল্প মেয়াদী সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি দেখা যায়। অনেক সময় পাশাপাশি কাজ করতে করতে অথবা হঠাৎ অফিস ট্যুরে গিয়ে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। আধুনিক দুনিয়া যাকে আখ্যা দেয় One Night Stand হিসেবে। এই ধরনের শারীরিক সম্পর্কে যে রোমান্টিকতা থাকবে না সেটাই খুব স্বাভাবিক।
রোমান্টিক আকর্ষণকে সঙ্গীর সঙ্গে গভীর, স্নেহপূর্ণ সংযোগ স্থাপনের ইচ্ছা বলা যেতে পারে।

দুজন মানুষের সম্পর্কের মধ্যে থেকে ধীরে ধীরে যখন এই সমস্ত বিষয়গুলো চলে যেতে থাকে, তখনই একে অপরের শরীরের প্রতি আকর্ষণ ও হারাতে থাকেন। কারন সেই সম্পর্কে নিছক শরীর ছাড়া আর কিছুই ভাগ করে নেওয়ার মত থাকে না।
আড্ডা, গল্প, খুনসুটি, মান-অভিমান সবকিছু হারিয়ে যায়। শারীরিকভাবে বেশ কয়েকবার মিলিত হওয়ার পরে দুটি মানুষের একে অপরের শরীরের প্রতি আকর্ষণ ক্রমশ কমতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।


কারণ ততদিনে শরীরের যাবতীয় রহস্য, মিলন ভঙ্গি, খাঁজ এবং ভাঁজ চেনা হয়ে যায়।
ফলে যৌনতার প্রতি আকর্ষণ কমতে থাকে।
এখন প্রশ্ন হল এই যে যৌনতার প্রতি আকর্ষণ কমতে থাকা, তা কি সামগ্রিক? নাকি নির্দিষ্ট একজনের প্রতি অনীহা বোধ?
মনোবিদরা বলছেন, নিজের কাছে সৎ থেকে নিজেকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই স্পষ্ট হবে, আসল সমস্যা কোথায়?

অযৌনতা সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। এটা প্রায়ই লিবিডো (Libido) কে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
অনেকে মনে করেন, অযৌনতা একটি অসুখ এবং এর চিকিৎসা সম্ভব।
অন্যরা অযৌনতাকে ব্রহ্মচর্য বা বিরত থাকার মত ভাবতে পছন্দ করেন।
এমনকি, বহু ক্ষেত্রে বিপজ্জনক ভাবে অনুমান করে নেওয়া হয় যে, কেউ অযৌন কারণ তাঁরা কোনও ধরণের যৌন ট্রমা (Sex Trauma) বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অতীতে।

চিকিৎসকরা বারবার সতর্ক করে বলছেন, অযৌনতা সাময়িক বা কিছু সময়ের জন্য হতে পারে। এটি কিন্তু সারা জীবনের জন্য নয়।
জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন মাত্রার যৌন আকর্ষণ অনুভব করতে পারেন একজন মানুষ। এটি সম্পর্ক থেকে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত হতে পারে।
আসলে একে অপরের প্রতি শারীরিক আকর্ষণ না থাকা চিকিৎসকদের মতে কোনও অসুখ নয়।


অবশ্যই কিছু শারীরিক বা মানসিক সমস্যা থাকতে পারে, যা মূলত হরমোন নিঃসরণের উপর নির্ভর করে। এর জন্য কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। হরমোন নিয়ন্ত্রণের ওষুধ চিকিৎসকের নির্দেশ অনুসারে খাওয়া যেতে পারে।
তবে কমবেশি সকলেই এক কথা বলছেন, যৌনতার প্রতি আকর্ষণ অথবা শারীরিক ঘনিষ্ঠতাকে উপভোগ করা ইচ্ছা ফিরে আসবে, এটাই স্বাভাবিক।
শুধু নিজেকে একটু সময় দিতে হবে। বুঝতে হবে আপনি ঠিক কী চাইছেন!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *