আজ খবর ডেস্ক:
নতুন করে বদলের পথে হাঁটতে চলেছে রাজ্য। প্রশাসনিক রদবদল শুধু নয়, দলের সংগঠনেও খোল নলচে বদলের পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
নতুন আরও ৭টি জেলা তৈরি হল রাজ্যে। সোমবার নবান্নে ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে নানাবিধ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি জানান, রাজ্য মন্ত্রিসভায় ও রদবদল হবে’।
মুখ্যমন্ত্রীর নয়া প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যে নতুন সাত জেলা তৈরি জল।
১) নদিয়া জেলা ভেঙে হল নতুন
রানাঘাট জেলা
২) উত্তর ২৪ পরগণা জেলা ভেঙে হল ইছামতি জেলা
৩) মুর্শিদাবাদ জেলা ভেঙে হল বহরমপুর , কান্দি ও জঙ্গিপুর জেলা
৪) দক্ষিণ ২৪ পরগণা ভেঙে হল সুন্দরবন জেলা
৫) বাঁকুড়া জেলা ভেঙে হল বিষ্ণুপুর।
অর্থাৎ ভাগ হল নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগণা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা।
নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছে মূলত প্রশাসনিক সুবিধার জন্য আকারে বড় এরকম জেলাগুলো কিছু ভাগ করা হল। এর আগে উত্তর ২৪ পরগণা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সুন্দরবন ও সন্দেশখালিকে আলাদা করার কথা বলেছিলেন।
মমতা বলেছিলেন, সুন্দরবনের মানুষকে যদি আলিপুরে গিয়ে কাজ করতে হয় আর সন্দেশখালির প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যদি মানুষকে বারাসত যেতে হয় তাহলে যাতায়াতেই তো তাঁদের দু’দিন চলে যাবে। কাজ হবে কখন?
প্রসঙ্গত দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা ভেঙ্গে সুন্দরবন হলেও উত্তর ২৪ পরগণা ভেঙে যে নতুন জেলা তৈরি হচ্ছে তার নাম রাখা হয়েছে ইছামতী।
অতীতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক জেলাকে ভাগ করেছিলেন। যেমন বর্ধমান ভেঙে তৈরি হয়েছিল পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান। দার্জিলিং ভেঙে তৈরি হয়েছিল কালিম্পং, পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে ঝাড়গ্রাম এবং জলপাইগুড়ি ভেঙে আলিপুরদুয়ার। তবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের মতে, একবারে নতুন ৭ জেলা তৈরি হওয়া কার্যত নজিরবিহীন।
সোমবার দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠক (Cabinet Meeting) থেকে বেরিয়ে মমতা নিজেই সাংবাদিক বৈঠক করেন। নতুন জেলা গঠনের খবর দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, আগামী বুধবার তথা ৩ অগস্ট মন্ত্রিসভায় রদবদল হবে। ওই দিনই বিকেল ৪টে নাগাদ শপথ নেবেন নতুন মন্ত্রীরা।
Many of them are writing a lot. We don't have plan to dissolve the whole ministry & form a new one. Yes, there will be a reshuffle. We lost ministers Subrata Mukherjee, Sadhan Pande. Partha is in jail so all their work has to be done. Not possible for me to handle alone: WB CM pic.twitter.com/wfMle4CMuq
— ANI (@ANI) August 1, 2022
সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভায় নতুন ৫ মুখ আনা হবে। বর্তমান ৪ মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁদের দলীয় সংগঠনের কাজে লাগানোর কথা ভাবা হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বলেন, “পার্থ জেলে রয়েছেন। সুব্রত মুখার্জি এবং সাধন পান্ডে মারা গেছেন। সেখানে শূন্য পদ রয়েছে যা পূরণ করা দরকার।”
প্রশাসনের পাশাপাশি দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক রদবদল ও সম্পন্ন হল।
একাধিক সাংগঠনিক জেলায় দলের সভাপতি পদে মহিলা মুখকে দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
তৃণমূল ভবন থেকে এই সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেইসঙ্গে বিস্তারিত তালিকাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১) দার্জিলিংয়ের ২টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি করেছে তৃণমূল। পাহাড়ের সভাপতি করা হয়েছে রাজ্যসভার সাংসদ শান্তা ছেত্রিকে। আর দার্জিলিংয়ের সমতলে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন পাপিয়া ঘোষ। তাঁকেই রেখে দেওয়া হয়েছে।
২) মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক শাঁওনি সিংহ রায়কে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আগে মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুর দুটি পৃথক সাংগঠনিক জেলা ছিল। এবার সেটাকে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
৩) বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। এর আগে এই দায়িত্বে ছিলেন বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায়। দলের মধ্যে তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। তাঁকে সরিয়ে কাকলিকে দায়িত্ব দিল দল।
৪) উত্তর ২৪ পরগনায় সবচেয়ে বেশি সাংগঠনিক জেলা কমিটি তৃণমূলের। কারণ এই জেলা এখন আয়তনে সবচেয়ে বড়।
এই জেলায় দমদম ও ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে কারও নাম ঘোষণা করেনি শাসকদল। বলা হয়েছে পরে ঘোষণা করা হবে। চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আগের মতই রয়েছেন পানিহাটির বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষ।
বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে। একুশের ভোটে বিশ্বজিৎ জিতেছিলেন বিজেপির টিকিটে। পরে তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। সেই তাঁকে এবার সাংগঠনিক দায়িত্ব দিল শাসকদল।
৫) দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান হলেন মনীশ গুপ্ত। সভাপতি পদে দেবাশীষ কুমার।
৬) আবার উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান পদে এখনও কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তালিকায় জানানো হয়েছে পরে নাম ঘোষণা করা হবে। যদিও সভাপতি পদে রয়েছেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সবমিলিয়ে চলতি সপ্তাহের শুরুতেই ব্যাপক রদবদলের ঘোষণা হল রাজ্যের শাসক দলের তরফে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘটনার পরে সবকিছু ঝেড়ে ফেলে নতুন করে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘাসফুল শিবির।