আজ খবর ডেস্ক:
সোমবার রাতেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।
মঙ্গলবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার ৷
তবে শুধু অমিত শাহই নন, দিল্লি সূত্রে খবর বিজেপি-র (BJP) সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার (J P Nadda) সঙ্গেও দেখা করবেন শুভেন্দু৷

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ই আগস্ট অর্থাৎ রবিবার দিল্লি যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেখানে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা মমতার। রাজনৈতিক মহলের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি সফরের আগেই তড়িঘড়ি কেন দিল্লি ছুটলেন বিরোধী দলনেতা?

গেরুয়া শিবিরের একাংশের দাবি, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ (SSC) দুর্নীতি কাণ্ডে ইডির (ED) তদন্ত যাতে আরও কঠোর হয়, তা নিশ্চিত করতে শুভেন্দুর দিল্লি যাত্রা।
আগামী রবিবার নীতি আয়োগের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করার কথা মমতার।
রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে আশঙ্কার চোরা স্রোত বইছে। অনেকেই মনে করছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) মুখ খুললে তৃণমূলের আরও কিছু শীর্ষ নেতা জড়িয়ে পড়তে পারেন।
এমন আবহে মমতার দিল্লি সফর ঘিরে বাম-কংগ্রেস যখন বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে আঁতাঁতের অভিযোগ তুলছে, সেখানে শুভেন্দুর দিল্লি সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

মনে করা হচ্ছে, ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি ও মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করে সোমবার সংসদে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্ণা-বিক্ষোভ করেন বিজেপি সাংসদেরা।
বাংলার বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ছাড়াও ওই মঞ্চে ছিলেন দার্জিলিং-এর সাংসদ রাজু বিস্তা, হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। পরে সাংবাদিক বৈঠকে সুকান্তু দাবি করেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশ থেকে সরে গিয়েছে দল। তাই তাঁর উচিত, কারা ষড়যন্ত্র করেছে তাঁদের নাম বলে দেওয়া। তবে প্রতি জেলা থেকে নাম উঠে আসছে। মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে এখন ঘর সামলানো কঠিন।’’
এদিকে পাল্টা আক্রমণ করে খোদ বিজেপি রাজ্য সভাপতির দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
গত লোকসভায় বিজেপি রাজ্যে ১৮টি আসন জিতলেও গান্ধী মূর্তির সামনে মাত্র ৫ সাংসদদের উপস্থিতি নিয়ে সরব হন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তুনু সেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বাকিরা কোথায়?’’

তবে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বিরুদ্ধে। অভিযোগ এনেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আগেই জানা গিয়েছিল, বিজেপিতে যোগ দেবার পূর্বে তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষা ছিলেন নেতা ছিলেন সুকান্ত মজুমদার। এবার তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেন অভিযোগ করলেন, সুকান্ত ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ ছিল। তিনি বলেন, ‘‘অতীতে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের সদস্য ছিলেন সুকান্ত। সে সময়ে ভাল সম্পর্ক থাকার সুবাদে নিজের স্ত্রীর স্কুলে বদলি করিয়েছিলেন তিনি।’’
পাল্টা জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘পারস্পরিক সহমতের ভিত্তিতে আমার স্ত্রী এবং আর এক শিক্ষকের বদলি হয়েছিল। অতীতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ ধরনের অভিযোগ তুলেছিলেন। যার ভিত্তিতে পার্থকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলাম। আজ পর্যন্ত পার্থের সঙ্গে কথা বলিনি।’’

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারি এবং এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে ইডি-র তৎপরতার মধ্যে শুভেন্দুর দিল্লি দরবার নিয়ে স্বভাবতই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে৷ যদিও তাঁর দিল্লি যাত্রা কী উদ্দেশ্যে তা এখনও স্পষ্ট করে বলেননি বিরোধী দলনেতা৷
তবে একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বৈঠকে থাকতে পারেন সুকান্ত মজুমদারও।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, দিল্লিতে গিয়ে ফের একবার বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের বকেয়া অর্থের দাবি ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যকে বঞ্চনা করার অভিযোগে সরব হবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রধানমন্ত্রীর কাছেও সেই দাবি জানাবেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী যাতে মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবির সামনে নরম না হন, সম্ভবত সেই বার্তা নিয়েই শুভেন্দু অমিত শাহ এবং জে পি নাড্ডার কাছে সওয়াল করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে৷

কারণ, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদল থেকে শুরু করে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বেশ কিছুটা সময় ধরেই তৎপর শুভেন্দু৷ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদল সহ বিভিন্ন অভিযোগে রাজ্যের প্রাপ্য বরাদ্দ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের চিঠিও দিয়েছেন তিনি৷
কয়েকদিন আগেই ঝটিকা সফরে মুম্বাই গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী৷ তাঁর মুম্বাই সফর নিয়েও একই ভাবে জল্পনা ছড়িয়েছিল৷ পরে অবশ্য জানা যায় নাগপুর গিয়েছিলেন তিনি।

আপডেট: দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করে বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দু অধিকারীর। তাঁর দাবি, এসএসসি দুর্নীতি-কাণ্ডে তৃণমূলের আরও অনেকে যুক্ত। তিনি অমিত শাহের কাছে ১০০ জন তৃণমূল নেতা-নেত্রীর নামের তালিকা দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন শুভেন্দু। সেই তালিকায় তৃণমূল সাংসদ, বিধায়কের পাশাপাশি কয়েক জন মন্ত্রীর নামও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *