আজ খবর ডেস্ক:
শ্রীলঙ্কা (SriLanka) ও পাকিস্তানের (Pakistan) পর আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে আইএমএফের কাছে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার চাইল বাংলাদেশ (Bangladesh)।
বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের অর্থ স্থানান্তর এবং রপ্তানি উভয়ই হ্রাস পেয়েছে। অন্তত এমনটাই বলছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী নাগরিকরা।
মনে করা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের (Russia-Ukraine War) কারণে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ফলে ভারতের এই প্রতিবেশী রাষ্ট্র মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে। যা জ্বালানীর দাম এমনভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে যে সেদেশের মানুষ রান্নার জন্য কাঠের আশ্রয় নিচ্ছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে, বাংলাদেশ নিয়মিত ব্ল্যাকআউট প্রত্যক্ষ করেছে। কখনও কখনও দিনে প্রায় ১৩/১৪ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বাদ পড়েনি রাজধানী ঢাকাও (Dhaka)। কারণ হিসেবে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎ পরিষেবা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানী এবং গ্যাস পাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সরকারি কর্তাদের মতে, বৈদেশিক রিজার্ভ ফুরিয়ে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, পাকিস্তান ও একইভাবে এই সমস্যার মুখে পড়েছে। জানা গেছে সেদেশের (পাকিস্তান) বাসিন্দাদের চায়ের মত প্রয়োজনীয় জিনিস পর্যন্ত কম ব্যবহারে বাধ্য করা হচ্ছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ/IMF) কাছে সহায়তার আবেদন করেছে। বুধবার বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেছেন, “আমরা ডলার কামাই করতে পারি না; আমাদের সেগুলি উপার্জন করতে হবে।”
আমাদের লোকেরা যারা বিদেশে কাজ করে বা ব্যবসা করে তাদের কঠোর পরিশ্রমে আমরা ডলার উপার্জন করি। তারা আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি।”
ক্রমবর্ধমান আমদানি বিলের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে বাংলাদেশে। মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সাম্প্রতিক আলোচনায় অংশ নেওয়া অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশ একটি “অর্থনৈতিক সঙ্কটের” সম্মুখীন হচ্ছে, যা শীঘ্রই শেষ হবে না কারণ বিশ্ব জুড়ে অর্থনীতিতে অস্থিরতা রয়েছে।
চলতি বছরের ২৭শে জুলাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছিলেন, সংকট আসন্ন নয়। তিনি বলেছিলেন, “দেশে ছয় থেকে নয় মাসের খাদ্য আমদানির পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। যে কোনোও সঙ্কটের সময় কমপক্ষে তিন মাসের জন্য খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য (প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র) আমদানি করার জন্য আমাদের হাতে অর্থ রয়েছে।”
তবে বাংলাদেশ সূত্র খবর প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণের পরেও দেশের অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সঙ্কটের লক্ষণ স্পষ্ট।
এই মুহূর্তে, বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম প্রচুর বেড়েছে এবং প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বাংলাদেশি মুদ্রার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এক ডলার, যার মূল্য মে মাসে প্রায় ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা ছিল, এখন কার্ব মার্কেটে ১১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
২ বছরে প্রথমবারের মত সম্প্রতি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৮০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।
এর প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি। যদিও রপ্তানি আয় ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫২.০৮ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড করেছে, কিন্তু বাণিজ্য ঘাটতিও ৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে রেকর্ড করেছে।
আমদানি বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছে না রপ্তানি এবং রপ্তানি আয়।
শিল্প বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, বাংলাদেশ থেকে মূলত বিশ্বজুড়ে রপ্তানি করা হয় বস্ত্র। বিশেষত বস্ত্র ব্যবসা বাংলাদেশ অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। কিন্তু গত কয়েক মাসে ইউরোপ সহ বিভিন্ন দেশে পোশাকের চাহিদা কমেছে। যার ধাক্কা এসে পড়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতির ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষ (জুলাই-জুন) শেষে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৩২৫ কোটি ডলারে (তিন লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি)। এটাই এখনও বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একই সময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও সাড়ে ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ এর আগে কখনোই এত বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েনি।