আজ খবর ডেস্ক:
শনিবার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ আচমকা গুলির শব্দে কেঁপে উঠল কলকাতার প্রাণকেন্দ্র পার্ক স্ট্রিট (Park Street)। ভারতীয় জাদুঘরের (Indian Museum) কাছে বিধায়কদের হস্টেলের (MLA Hostel) বিপরীতে পার্ক স্ট্রিটে সিআইএসএফ (CISF) ব্যারাকে এক জাওয়ান তাঁর সতীর্থকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালান।
একজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক ধারণা, কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ রাউন্ড গুলি চলে।
জখম একাধিক। আহতদের এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সূত্রের খবর, অত্যাধুনিক একে-৪৭ রাইফেল থেকে গুলি ছোঁড়া হয়।

হামলাকারী সিআইএসএফ-এর কনস্টেবল পরে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ও গুলি ছোঁড়ে। গুরুতর আহত এক পুলিশ কর্মী। জানা গেছে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুবীর ঘোষ নামে কলকাতা পুলিশের ওই কর্মীর হাতে গুলি লেগেছে। এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন তিনি।।
এই প্রতিবেদন লেখা সময় জানা গেছে, আত্মসমর্পণ করেছেন ওই ঘাতক জওয়ান।
কলকাতা পুলিসের ডিসি সেন্ট্রালের নেতৃত্বে প্রায় এক ঘন্টার অপারেশনের পর শেষ পর্যন্ত নিরস্ত্র অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে অক্ষয় মিশ্র নামের ওই সিআইএসএফ জওয়ানকে।
জানা গেছে, সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ আচমকা গুলি চালাতে শুরু করেন তিনি। সেই সময় কাজ সেরে ব্যারাকে প্রায় ১০০ জন সিআইএসএফ জওয়ান ছিলেন বলে সূত্রের খবর। ফলে হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কলকাতা জাদুঘরের কাছে, এমএলএ হস্টেল থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এই ঘটনা ঘটেছে। বস্তুত হামলার পরেও দীর্ঘক্ষণ হামলাকারী ভিতরে লুকিয়ে ছিলেন। এই অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন কলকাতা জাদুঘরের কর্মীরা।
জানা গিয়েছে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন অক্ষয় মিশ্র। মাত্র তিন দিন আগে তাঁর বাবা মারা গিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে অক্ষয়ের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ছুটির আবেদন করেও ছুটি পাননি তিনি। এই নিয়ে মানসিকভাবে খানিকটা বিপর্যস্ত ছিলেন অক্ষয়।
হাতে AK-47 নিয়ে জাদুঘরের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন। বহু সময় ধরে চেষ্টা করে তাঁকে নিরস্ত্র করা হয়।
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট পরে ভেতরে ঢোকে কলকাতা পুলিশ এবং সিআইএসএফ সশস্ত্র বাহিনী। পাশাপাশি শনিবারের ব্যস্ত পার্ক স্ট্রিট এলাকায় পুলিশের তরফে মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে আর্জি জানানো হতে থাকে।
দীর্ঘ এক ঘণ্টার টানটান উত্তেজনার শেষে পুলিশের হাতে আসেন অক্ষয়।

বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চলেছে বলে খবর। এক প্রত্যক্ষদর্শীর বলেছেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর গুলির শব্দ শোনা যায়। একাধিক গুলির শব্দ শোনা গিয়েছে।’ সিআইএসএফ সূত্রে খবর, প্রায় ২৫ রাউন্ড গুলি চলেছে।
খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিশ। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ব্যারাকের মধ্যে প্রবেশ করে পুলিশ। কিন্তু অক্ষয়কে তখন ব্যারাকের ভেতরে পাওয়া যায়নি। জানাযায় তিনি জাদুঘরের ভেতরেই লুকিয়ে রয়েছেন এবং তাঁর হাতে রয়েছে বন্দুক। অভিযুক্ত জওয়ান কনস্টেবল পদমর্যাদার কর্মী বলে সূত্রে খবর। ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় কমব্যাট ফোর্স ও কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

স্বাভাবিকভাবেই ঘটনার জেরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। একে পার্ক স্ট্রিট স্ট্রিটের মধ্যবর্তী এলাকা, তার ওপর পাশেই এমএলএ হোস্টেল। ফলে এই ঘটনার প্রভাব যাতে লোকালয়ে না পড়ে, সাধারণ মানুষ যাতে নিরাপদে থাকেন, পুলিশের তরফে তা নিশ্চিত করা হয় প্রথম থেকেই।

প্রথমে ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ভর সন্ধেবেলা খুন হন দম্পতি।
দিন কয়েক আগেই শহর কলকাতায় ঘটে আরেক আতঙ্কের ঘটনা। প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যস্ত পাকসারকাস ও বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে কর্তব্যরত ১ পুলিশ কর্মী এলো পাথরে গুলি চালাতে শুরু করেন। প্রাণ যায় এক মহিলার। পরে ওই পুলিশকর্মী আত্মঘাতী হন। সেখানেও সামনে এসেছিল ওই পুলিশকর্মীর মানসিক অবসাদের কথা। আবার সেরকমই এক ঘটনা ঘটল এদিন পার্ক স্ট্রিটে। এখানে উঠে আসছে সিআইএসএফের ওই জওয়ানের মানসিক অবসাদ প্রসঙ্গ।


সেই সময় ওই এলাকায় যারা ছিলেন তারা বলছেন, ঘটে যেতে পারতো অনেক বড় ঘটনা। ফলে প্রশ্ন উঠছে শহর কলকাতায় আমজনতার নিরাপত্তা নিয়ে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *