আজ খবর ডেস্ক: মন খারাপের কারণ চট করে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবু হাজার রকম বিষন্নতা, মন খারাপ আমাদের অনেককেই দিনভর জড়িয়ে থাকে।
মাঝে মাঝেই নানান কাজের ফাঁকে জানান দেয়, মন ভালো নেই। তখন একা হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে আকন্দ বিষাদে ডুবে থাকতে।


এই মন খারাপ অল্প সময়ের জন্য হতে পারে, আবার এমনও হয় দীর্ঘদিন ধরে অবসাদ ঘিরে থাকে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, কিছু নির্দিষ্ট হরমোনের কম-বেশি প্রভাব সরাসরি পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। সেরোটোনিন, ডোপামিন, অক্সিটোসিন, এন্ডরফিন্স ও নরএপিনেফ্রিন সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরে।

অর্থাৎ মন ভালো রাখতে হরমোন খুব জরুরি।
যদি মনঃসংযোগে সমস্যা হয়, অবসন্ন লাগে, কাজের ইচ্ছে চলে যায় তাহলে ধরে নিতে হবে মস্তিষ্কে ডোপামিনের (Dopamine) মাত্রা কমে গিয়েছে। আবার সেরোটোনিনের (Seratonin) নেতিবাচক প্রভাবে তৈরি হয় হাল ছেড়ে দেওয়া, অপরাধবোধ, আত্মহত্যার প্রবণতা। নরএপিনেফ্রিনের ক্ষেত্রে সারা শরীরে ব্যথা বা জ্বালা করা, চিনচিন করার মত লক্ষণ দেখা যায়।
কোনও কোনও দিন কাজ করতে ইচ্ছা করে না। মাঝেমধ্যে মন খারাপ হওয়াটাও স্বাভাবিক। তার মানেই কিন্তু অবসাদ নয়। দু’সপ্তাহের বেশি এমন মনোভাব স্থায়ী হলে, মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অনেক তো হল মন খারাপের কথা। এবার এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক, কী ধরনের খাবার খেলে মস্তিষ্কের ডোপামিনের ক্ষরণ বাঁধতে পারে। এই সব খাবার থেকে তৈরি হওয়া “হ্যাপি হরমোন” (Happy Hormones) আপনার মন খারাপ সহজেই কাটিয়ে দিতে পারবে।
১) মাছ
প্রোটিন এবং বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ ডোপামিনের ক্ষরণ বাড়ায়। অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে ডোপামিন উৎপাদনে সহায়তা করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
মাছ এবং অন্যান্য উচ্চ-প্রোটিন খাবারের মত, হাঁস-মুরগির মাংসে অ্যামিনো অ্যাসিড বেশি থাকে। ফলে খিদে না বাড়িয়ে ডোপামিন বাড়াতে সাহায্য করে।

২) দুগ্ধজাত দ্রব্য
দুধ, পনির, দই ইত্যাদি নিরামিষাশীদের (Vegan) জন্য অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি বড় উৎস। বিশেষ করে পনির এবং দই শরীরে সুখী হরমোনের উৎপাদন বাড়ায়।

৩) স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি শুধু ডোপামিনই নয় সেরোটোনিনের উৎপাদন বাড়ায়। স্ট্রবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি দুর্দান্ত উৎস।

৪) সবুজ শাক
সবুজ শাক সব্জিকে বৈজ্ঞানিকভাবে ক্রুসিফেরাস (Cruciferous) ভেজিটেবল গ্রুপ বলা হয়। লেটুস, পালং শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি এবং আরও অনেক কিছু। এসব কিন্তু দুর্দান্ত ডোপামিন বুস্টার হিসাবে কাজ করে।


৫) সবুজ চা (Green Tea)
যদি প্রাকৃতিকভাবে ডোপামিনের মাত্রা বাড়াতে হয় তবে গ্রিন টি একটি দুর্দান্ত পানীয়। গ্রিন টি-তে ক্যাফেইন বেশি থাকে যা আমাদের শক্তির মাত্রা বাড়ায়। পাশাপাশি এটি আমাদের মেটাবলিজম বাড়ায়। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

৬) ডিম
ডিম আদতে একটি সুপারফুড। ডিমে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরে ডোপামিন উৎপাদনে সাহায্য করে।


৭) বাদাম
বাদাম অ্যামিনো অ্যাসিডের আরেকটি বড় উৎস। যেহেতু এগুলি অন্যান্য পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ তাই এটি আপনার ডায়েটে একটি দুর্দান্ত সংযোজন হবে।

৮) কফি
কফি একটি উচ্চ-ক্যাফিনযুক্ত পানীয়। এটি তাৎক্ষণিক ভাবে শক্তি এবং হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়। ক্যাফিন ডোপামিনের মাত্রা উন্নত করতে পারে।

এ তো গেল খাবার দাবার।
জানেন কি আমাদের রোজকার ব্যবহারে এমন কিছু মসলা রয়েছে যা শরীরে ডোপামিন বাড়ায় এবং মন ভালো রাখতে পারে? অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, সেই সঙ্গে এইসব মসলায় রয়েছে এমন বৈশিষ্ট্য যা জ্ঞান এবং মেজাজকে প্রভাবিত করে। মানসিক চাপ কমানো থেকে রাতে ভাল ঘুম, আপনার শরীর ও মনকে শান্ত করা, সেরোটোনিনের মত সুখী হরমোনের নিঃসরণকে স্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করা। এইসব ভেষজের নিয়মিত ব্যবহার রান্নাকে যেমন সুস্বাদু করবে, মনকেও তেমন তরতাজা রাখবে।

১) মেথি:
মেথিকা (Trigonella foenum-gracium), বা সাধারণ রান্নাঘরের মসলা মেথি, আয়ুর্বেদে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি ভেষজ। এটির শীতল করার ক্ষমতা এবং অ্যাস্ট্রিনজেন্ট মেটাবলিক এন্ড এফেক্ট রয়েছে। এই শীতল ক্রিয়া মানসিক চাপ উপশমের পাশাপাশি মন কে শান্ত করে। যা সুখী হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে।


২) ক্যামোমাইল :
ক্যামোলিন (ম্যাট্রিকেরিয়া ক্যামোমিলা) একটি শক্তিশালী ভেষজ। ঘুম-জাগরণ চক্র নিয়ন্ত্রণ করতে আয়ুর্বেদে এটি ব্যবহৃত হয়। দুর্দান্ত স্ট্রেস-রিলিভিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে।


৩) তুলসী:
তুলসী এমন একটি ভেষজ যা মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কে একটি শান্ত প্রভাব ফেলে এবং আপনাকে চাপের সাথে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে। সকালে তুলসি চা পান আপনার শক্তির মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে। এমনকি, খালি পেটে মধু সহ কয়েকটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।

৪) ত্রিফলা:
সেরোটোনিন, সুখী হরমোন, বেশিরভাগই অন্ত্রে তৈরি হয়। ত্রিফলা ট্যাবলেট হল কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য হজম সংক্রান্ত সমস্যাগুলির জন্য একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ। যা আপনার অন্ত্রকে সুস্থ করে তুলবে এবং আপনার মেজাজকে উন্নত করবে। এটি তিনটি অন্ত্রের বন্ধুত্বপূর্ণ ভেষজ- গুজবেরি বা আমলা, চেবুলিক মাইরোবালন বা হরিতকি এবং বহেদা বা বিভিটাকির শক্তি সহ একটি দুর্দান্ত পরিপাক পরিপূরক।

৫) ব্রাহ্মী:
এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ক্ষমতার জন্য সুপরিচিত। এছাড়াও, এটি একটি অ্যাডাপটোজেনিক ভেষজ যা মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে এবং ইতিবাচক মনোভাব বাড়াতে সহায়তা করে।

৬) অশ্বগন্ধা:
অশ্বগন্ধা মনের ওপর একটি শান্ত প্রভাব বিস্তার করে। অশ্বগন্ধার এই গুণটি এটিকে বিষণ্নতা দূর করতে এবং মেজাজ উন্নত করতে ব্যবহার করা হয়।

৭) দারুচিনি:
মশলাদার, মিষ্টি গন্ধের সঙ্গে দারুচিনি উষ্ণতা বাড়ায় এবং মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে। একাগ্রতা, স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ বাড়ায়।
শেষে একটা কথাই বলার, মন ভাল রাখার জন্য নিজের ভাল থাকাটা খুব জরুরি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *