আজ খবর ডেস্ক:

আপডেট: অনুব্রত মন্ডলকে ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিল আসানসোল আদালত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতায় আনা হচ্ছে। আগামী ২১ আগস্ট ফের তাকে আসানসোল আদালতে তোলা হবে।


গরু পাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের (CBI) হাতে গ্রেপ্তার হলেন তৃণমূলের (TMC) বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)।


তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে অনুব্রতর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সাত-সকালে বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে পৌঁছে যায় সিবিআই। সার্চ ওয়ারেন্ট সঙ্গে নিয়ে যায়। সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে ছিল মোট ২ কোম্পানি আধাসেনা। অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে পৌঁছনোর পর শুধু বাড়ি নয়, কার্যত গোটা এলাকা ঘিরে ফেলেন আধাসেনা জওয়ানরা।


বাড়ির আশেপাশেও সাধারণের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় সিবিআইয়ের তরফে।
এর আগে এত সেনা বাহিনীর জওয়ান লোকসভা, বিধানসভা নির্বাচনেও আসেনি। অভিমত, অনুব্রত মণ্ডলের প্রতিবেশীদের।

অনুব্রতর বাড়িতে যাঁরা আছেন, তাঁদের সবার ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়। একদিকে অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন সিবিআই আধিকারিকরা। অন্যদিকে তাঁর বাড়িতে চলতে থাকে তল্লাশি। গোরুপাচার কাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডলের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। অন্যদিকে অভিযোগ, অনুব্রত মণ্ডল ক্রমাগত তদন্তে অসহযোগিতা করছিলেন। ১০ বার হাজিরার নোটিশ পাঠানোর পরেও তিনি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআইয়ের মুখোমুখি হচ্ছিলেন না।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা নাগাদ তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই।
প্রসঙ্গত এর আগে, অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। তাঁর কাছে প্রচুর সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গিয়েছে। সম্প্রতি অনুব্রত ঘনিষ্ঠ তিন ব্যবসায়ীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর নথি ও ১৭ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।
এদিনই তাঁকে আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করা হচ্ছে। তার আগে কোনও হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।

সায়গল হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর সিবিআই আদালতে যে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছিল, তাতেও অনুব্রত মণ্ডলের নাম রয়েছে। এদিন তাঁর বাড়িতে পৌঁছে সিবিআই প্রথমে ৪১এ ধারায় নোটিস দেয়। তাঁকে বলা হয় এখনই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু অনুব্রত বলেন, তিনি অসুস্থ। তারপরেই সিবিআই অফিসাররা তাঁকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন বাড়ি থেকে। জানা যাচ্ছে বাড়িতেই অনুব্রত মণ্ডল কে বলা হয়েছিল অ্যারেস্ট মেমোতে (Arrest Memo) সই করতে। কিন্তু সেই সময় নিজের আইনজীবী পাশে না থাকায় রাজি হননি অনুব্রত। তখন তাঁকে আটক (Detain) করে সিবিআই।
সকালে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে ঢুকেই তার নিরাপত্তা রক্ষী সহ সকলকে বের করে দিয়েছিল সিবিআই। বাড়ির ভেতর থেকে তালা মেরে দেন সিবিআই আধিকারিকরা। পরিস্থিতি এমনই যে বাইরে আটকে পড়েন অনুব্রতর দেহরক্ষীরাই।
কাটায় কাটায় সকাল ১০টায় অনুব্রতর বাড়িতে ঢোকে সিবিআই। দোতলা বাড়ির ওপর থাকেন অনুব্রত। নীচের তলায় তাঁর অফিস এবং আরও কিছু ঘর। কিছু ক্ষণের মধ্যেই নীচের তলার দখল নিয়ে নেয় সিবিআই।

সিবিআইয়ের “অপারেশন অনুব্রত” কার্যত শুরু হয়েছিল বুধবার রাত থেকেই।
বোলপুরের একাধিক জায়গা থেকে খবর পাওয়া গিয়েছে, বুধবার মধ্যরাতে সিবিআইয়ের একটি দল বোলপুর পৌঁছয়। ৫টি গাড়ি করে আসেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার সকালে আসে সিআরপিএফও।
জানা গেছে, এর মধ্যে ৩টি গাড়ি কলকাতার নিজাম প্যালেস থেকে এব‌ং দু’টি গাড়ি আসানসোলের সিবিআই দপ্তর থেকে এসেছে। বুধবার রাতে বিশ্বভারতীর রতনকুঠি গেস্ট হাউসেই ছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার সকালে ওই গেস্টহাউসের বাইরে দেখা যায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও। সূত্রের খবর, ডাকা হয়েছিল এক ব্যাঙ্ক কর্মীকেও।

সিবিআই আধিকারিকরা কয়েক জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ানকে নিয়ে অনুব্রতর বাড়িতে ঢুকেই বাড়ির সমস্ত দরজা ভিতর থেকে তালা মেরে দেন। যাতে বাইরের কেউ ঢুকতে না পারেন। এ দিকে সিবিআইয়ের অভিযান সম্পর্কে কোনও খবরই ছিল না অনুব্রতর দেহরক্ষীদের কাছে। ফলে তাঁরাও বাইরেই আটকে পড়েন। পরে অবশ্য তাঁদের প্রধানকে বাড়িতে ঢুকতে দেয় সিবিআই। তিনি ভিতরে ঢুকে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পর অনুব্রতর বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন দু’জন সিবিআই আধিকারিক। তাঁরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে কথা বলেন। ফোনেও কিছু ক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় তাঁদের।
তারপরেই দেখা যায় ভেতর থেকে অনুব্রত মণ্ডল সহ বাকি সিবিআই আধিকারিকদের বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠতে।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় দুর্গাপুর অভিমুখে চলেছে প্রায় ৭০ টি গাড়ির কনভয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *