আজ খবর ডেস্ক:
এবছর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বলেছিলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস করে খাওয়ার জায়গা নয়”।


তবে বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) চিরকালই ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) স্নেহধন্য। একাধিকবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে অনুব্রত জানিয়েছেন, তিনি ভোটে দাঁড়াতে চান না। জোর করে তাঁকে ভোটে দাঁড় করানো হলে বা রাজ্যসভায় পাঠানো হলে তিনি দলই ছেড়ে দেবেন। আসলে বীরভূমের জেলা সভাপতি হিসেবেই অনুব্রত ছিলেন স্বচ্ছন্দ। নিছক প্রয়োজনে অথবা দলীয় কর্মসূচি ছাড়া কলকাতাতেও খুব একটা আসতেন না তিনি।
জেলা বা দল সংক্রান্ত যাবতীয় আলোচনা সারতেন একমাত্র তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গেই।

গরু পাচার কাণ্ডে বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর অনুব্রত প্রসঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য রাখেনি তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)।
বিকেলে তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং প্রাক্তন বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী। সেখানে দলের তরফে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তদন্তে নিরপেক্ষতার দাবি জানিয়ে পথে নামতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
শুক্রবার থেকেই শুরু হচ্ছে সেই কর্মসূচী। দলের যুব ও ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা জেলায় জেলায় প্রতিবাদ মিছিল করবে বলে জানান দলের মুখপাত্র চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ।

তবে রাজনৈতিক মহলের আগ্রহ তৈরি হয়েছে অন্য জায়গায়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তদন্তকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব এদিন একবার ও অনুব্রতকে নির্দোষ বলে দাবি করেনি।
দলের তরফে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বারে বারেই বলেন, বিচার ব্যবস্থার ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখছেন তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, তদন্তকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। বস্তুত তৃণমূল কংগ্রেসের দক্ষ সংগঠক হিসেবে যে কয়েকজন নেতার নাম উঠে আসে, অনুব্রত তাঁদের অন্যতম। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অতীতেও বারবার অভিযোগ করেছে, বীরভূমকে কার্যত বিরোধীশূন্য করেছেন কেষ্ট। বিশেষত ২০১৮র পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার অধিকাংশ জায়গায় মনোনয়নপত্র জমাই দিতে পারেনি বিরোধীরা। ২০১১ পরবর্তী যতগুলো নির্বাচন হয়েছে এই রাজ্যে, বীরভূমে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি তৃণমূল ছাড়া কোনও রাজনৈতিক দল।
তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, এত তাড়াতাড়ি অনুব্রতকে কেন ভুলে গেল তৃণমূল?

অনুব্রত মণ্ডল বীরভূমের জেলা সভাপতির পাশাপাশি জাতীয় কর্মসমিতিরও সদস্য। এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, তৃণমূল কি অনুব্রতকে দল থেকে সাসপেন্ড করবে? উত্তরে দলের দুই মুখপাত্র বললেন, দলে শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি রয়েছে। সর্বোপরি নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন। যথা সময়ে যা হওয়ার হবে।
রাজনৈতিক মহলের কাছে এই উত্তরটি ও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। অতীতে যখন নারদ কাণ্ডে মদন মিত্ররা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, সেই সময়ে ‘আমরা সবাই চোর’ প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে গোষ্ঠ পাল মূর্তির পাদদেশে ধর্ণা অবস্থানে বসেছিল গোটা তৃণমূল দল।
এমনকি এদিন তৃণমূল মুখপাত্র সমীর চক্রবর্তী বলেন, “পার্থবাবু গ্রেপ্তার হওয়ার পাঁচ দিন পর দল তাঁকে সাসপেন্ড করেছিল। অনুব্রত গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র কয়েক ঘণ্টা হল। ধৈর্য ধরুন।”
চন্দ্রিমা বলেছেন, “অভিষেক জানিয়ে দিয়েছেন, দুর্নীতির প্রশ্নে জিরো টলারেন্স নিয়ে চলবে দল।”

আবার ইতিমধ্যেই ঘাসফুল শিবিরের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, অনুব্রতর পর বীরভূম জেলার তৃণমূল সভাপতি কে হতে পারেন?
ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে দুজনের নাম ভাসতে শুরু করেছে। তাঁদের একজন হলেন চন্দ্রনাথ সিনহা— যিনি নাকি একদা অনুব্রত মণ্ডলের প্রোমোটিং ব্যবসার পার্টনার ছিলেন এবং অন্যজন হলেন অভিজিৎ সিংহ ওরফে রানা। যিনি কার্যত অনুব্রত মণ্ডলের ছায়াসঙ্গী বলেই পরিচিত।


চন্দ্রনাথ এখন রাজ্যের মন্ত্রী। ইতিমধ্যেই এক ব্যক্তি, এক পদ নীতি কার্যকর করে ফেলেছে শাসকদল। সেক্ষেত্রে চন্দ্রনাথকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিয়ে জেলা সভাপতি করা হবে নাকি রানাকে বসানো হবে অনুব্রতর চেয়ারে? অনুব্রত মণ্ডল গ্রেপ্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এইসব নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *