আজ খবর ডেস্ক:
বারংবার আপত্তি জানিয়েছিল ভারত (India)। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের সেই আপত্তি কার্যত পাত্তা না দিয়েই মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার (SriLanka) বন্দরে ভিড়ল ‘বিতর্কিত’ চিনা জাহাজ। ছাড়পত্র দিয়েছে কলম্বো।


১৬ই আগস্ট শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে চিনের জাহাজ নোঙর করল। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, এই জাহাজ গবেষণার কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলেই চিনের দাবি। উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন এই জাহাজ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং উপগ্রহ চিহ্নিত করতে পারে। এর নাম ‘ইউয়ান ওয়াং ৫’।
কিন্তু ভারতের আশঙ্কা, চিন (China) গুপ্তচরবৃত্তির জন্যই এই জাহাজ শ্রীলঙ্কায় পাঠাচ্ছে (Chinese spy ship)। ভারত মনে করছে শ্রীলঙ্কা দিয়ে ভারতের দক্ষিণ অংশের মাধ্যমে এদেশের ওপর নজরদারি চালাবে চিন।

ভারত ও আমেরিকার উদ্বেগ প্রকাশের জেরে চিনা জাহাজে প্রবেশের বিষয়ে দোটানায় ছিল দ্বীপরাষ্ট্র। সে কারণে প্রথমে এই জাহাজকে ঢুকতে দিতে চায়নি কলম্বো। কিন্তু পরে নিজেদের মত বদলায় তারা।
কারণ একদিকে যেমন শ্রীলঙ্কার সঙ্কটকালে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত, অন্যদিকে আবার বিশেষজ্ঞদের মত দেনার দায়ে চিনের কাছে মাথার চুল পর্যন্ত বিকিয়ে রেখেছে শ্রীলঙ্কা। ফলে এই জাহাজ নোঙর করতে না দিয়ে তাদের অন্য উপায় ছিল না।
এই প্রসঙ্গে চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জানিয়েছেন, ‘‘ইয়ুয়ান ওয়াং-৫” (চিনা জাহাজের নাম) (Yuan Wang 5) জাহাজকে তাদের বন্দরে নোঙর করার ছাড়পত্র দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।’’


বস্তুত, শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরে চিনা জাহাজের নোঙর করা নিয়ে গত প্রায় কয়েক মাস যাবত আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক চলছিল।
চিনের তরফে এই জাহাজকে গবেষণা ও সমীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে দাবি করা হলেও আদতে এর মাধ্যমে নজরদারির কাজ চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে। শ্রীলঙ্কার বন্দরে এই জাহাজের নোঙর করা নিয়ে প্রথম থেকেই ‘আপত্তি’ জানিয়ে এসেছে ভারত। সংশয় প্রকাশ করেছে আমেরিকাও।


প্রাথমিকভাবে এই অনুমতি দিতে কিছুটা দেরি করছিল শ্রীলঙ্কা। এই কারণে, গত ৮ আগস্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে বেজিং বলেছিল, “এটা অন্যায়”। তারা বলেছিল, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কয়েকটি দেশ কলম্বোর উপর ‘চাপ’ সৃষ্টি করছে এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে।

এর পরই গত ১৩ অগস্ট এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রক জানায় যে, অন্যান্য দেশের উদ্বেগ’ নিয়ে তারা পর্যালোচনা করেছে। সংশয়ের জেরে ১১ই আগস্ট থেকে ১৭ই আগস্টের মধ্যে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী হামবানটোটা (Hambantota Port) বন্দরে চিনা জাহাজের নোঙর স্থগিত রাখা হোক। গত ৫ অগস্ট তারা চিনা দূতাবাসকে এই অনুরোধ জানিয়েছিল।
এর মধ্যেই গত ১২ই আগস্ট এই জাহাজ নোঙর করার ছাড়পত্রের জন্য নতুন করে আবেদন করে চিনা দূতাবাস। জাহাজের প্রবেশের জন্য নতুন সময় দেওয়া হয় ১৬ই আগস্ট থেকে ২২শে আগস্টের মধ্যে। তারপরেই কলম্বো এক বিবৃতিতে জানায়, চিনা জাহাজের নোঙরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই জাহাজে প্রায় ২ হাজার নাবিক রয়েছেন বলে খবরে জানা গেছে।

শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছে বেজিং। ভারতের তরফে জানানো হয়েছে, গোটা পরিস্থিতির ওপর তারা নজর রাখছে।
এমনকি খবরে এও জানা গিয়েছে, চিনা জাহাজটি শ্রীলঙ্কার বন্দরের নোঙর করার সময় দ্বীপরাষ্ট্রের প্রাক্তন এডমিরাল জেনারেল সহ বেশ কয়েকজন ভিআইপি গিয়েছিলেন চিনের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাতে।


কিন্তু তাঁদের নাকি সেখানে প্রবেশ করতেই দেওয়া হয়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *