আজ খবর ডেস্ক:

আপডেট: বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
দিলীপ কী বলেছেন, তা নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পাশাপাশি দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও আলাদা করে রিপোর্ট চেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন বিষয়ে সিবিআই তদন্ত নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন দিলীপ, তা সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর ‘অনাস্থা’র শামিল। সিবিআই সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘পার্সোনেল’ (কর্মিবর্গ) মন্ত্রকের আওতাভুক্ত।
দিলীপের বক্তব্যের ভিডিও ছাড়াও তাঁর বক্তব্যের হিন্দি ও ইংরেজি তর্জমা চাওয়া হয়েছে বলে সোমবার বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।


লড়াই করার কথা তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির জোড়া (ED/CBI) আক্রমণে বেশ খানিকটা বেসামাল রাজ্যের শাসক শিবিরও।
কিন্তু বঙ্গ বিজেপি আর সেই সুযোগ নিতে পারছে কই?
ঘরোয়া বিবাদেই ব্যস্ত গেরুয়া শিবির। এমনকি,
দিল্লিতে ডেকে দলের রাজ্য নেতাদের বার বার মিলে-জুলে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা৷ কিন্তু সে কথা কানে তুলবে কে? কার্যত দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে একেবারে সামনে চলে এসেছে বঙ্গ বিজেপির (BJP) প্রাক্তন এবং বর্তমান সভাপতির মতবিরোধ৷

দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh) সরিয়ে রাজ্য সভাপতি করা হয় সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) কে। দুজনেই সাংসদ কিন্তু বিজেপি অন্দরে বলা হয়, মোটেই সদ্ভাব নেই দুজনের।
রাজ্যে সাম্প্রতিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি (SSC Scam) এবং কয়লা ও গরু পাচার (Coal and Cattle Smuggling) কাণ্ডে তদন্ত করছে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি ও সিবিআই। দিন কয়েক আগে সিবিআইয়ের তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন দিলীপ ঘোষ। চেয়েছিলেন, সব তদন্তই তুলে দেওয়া হোক ইডির হাতে। পাল্টা জবাব ও দিয়েছিলেন সুকান্ত।


সোমবার সকালে নিউ টাউনের ইকো পার্কে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে দিলীপ সুকান্ত মজুমদারের নাম না করেই বলেন, “কে জানত অনুব্রতর এত টাকা। সিবিআইকে বিশ্বাস করেছিলাম। ভোট পরবর্তী হিংসায় আমার এত কর্মী মারা গিয়েছেন, আদালত সিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছিল। এফআইআরও হয়নি সেভাবে। আমরা ন্যায় পাইনি। আমি সভাপতি থাকার সময় সিবিআই অফিস ঘেরাও করেছিলাম। ইডি ভাল কাজ করেছে।”
এর পরেই ইঙ্গিতপূর্ম ভাবে দিলীপ ঘোষ বলেন, “ডাক্তারবাবু ভয় পেয়েছেন। কুকুর যদি তাঁর বাড়িতেও পৌছে যায়।”

পেশায় অধ্যাপক সুকান্ত মজুমদারের ডক্টরেট উপাধি রয়েছে৷ ফলে ডাক্তারবাবু বলে দিলীপ কি নাম না করে তাঁকেই নিশানা করেছেন? জোর জল্পনা তা নিয়ে।
দিলীপের এই মন্তব্যে বিজেপি-র অস্বস্তি বেড়েছে। বলছেন দলের অনেকেই। প্রশ্ন উঠেছে, এর আগে বারবার দিল্লিতে ডেকে দিলিপের মুখে লাগাম পরানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও কেন তিনি তা মানছেন না?
সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ জবাব বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের প্রশ্ন ছিল, “সিবিআই কীভাবে কাজ করে দিলীপদা কী করে জানলেন?” এ দিন পাল্টা জবাব দিতে গিয়েই সুকান্তর নাম না করে দিলীপের এহেন বিতর্কিত মন্তব্য।


প্রসঙ্গত, দিলীপ সুকান্তর এই তরজা চলছে গত কয়েক দিন ধরেই। কখনও প্রত্যক্ষভাবে, কখনও পরোক্ষে।
রবিবার কলকাতায় কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, “সিবিআই গত কয়েক বছর ধরে এখানে ‘সেটিং’ করছিল। অর্থ মন্ত্রক সবকিছু বুঝেই ইডি-কে বাংলায় পাঠিয়েছে। সেটিং যারা করেছে এখন তাঁরা বলছে, ‘ইডি কেন?’ কারণ এই কুকুরটা পোষ মানবে না, বড় কুকুরকে কামড়াবে।”

সিবিআই নিয়ে খোদ দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতির এই মন্তব্যে স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়ে বিজেপি নেতৃত্ব৷ দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যে যে তাঁর এবং দলের সমর্থন নেই, বুঝিয়ে দিয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ”দিলীপদা কোথা থেকে বললেন আমাদের জানা নেই। কেন্দ্রীয় এজেন্সি কীভাবে কাজ করে এটা কোনও রাজনৈতিক নেতার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। যদি কেউ মন্ত্রী হন তাহলে তাঁর পক্ষে জানা সম্ভব৷ আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনও তথ্য নেই”।
এর পরেই এদিন সকালে সুকান্ত কে এহেন তোপ দাগলেন দিলীপ। যা বিরোধী বিজেপি শিবিরের অস্বস্তি যারপরনাই বাড়িয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *