আজ খবর ডেস্ক:
হুগলি নদীর ওপর তৈরি হচ্ছে নতুন আরেকটি সেতু। উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ (NHAI)। প্রাথমিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (WB Govt) এই সেতু নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে বলেই খবর। এবার সেতু নির্মাণের পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। কলকাতা-বারাণসী এক্সপ্রেসওয়ের (Kolkata-Varanasi Express Way) জন্য হুগলি নদীর (Hooghly River) ওপর এই তৃতীয় সেতুটি নির্মাণ করা হবে। মোট ৫৪৯ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হবে। যার মধ্যে ২৫৬ কিলোমিটার রাস্তা যাবে বাংলার ওপর দিয়ে।


বর্তমানে, উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) বারাণসী থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ৬৯০ কিলোমিটার এবং এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা। বারাণসী-রাঁচি-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির পর দূরত্ব অনেকটাই কমবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ১২ থেকে ১৪ ঘন্টার সফরের সময় কমে হবে ৬ থেকে ৭ঘন্টা। ফলে সময় এবং জ্বালানীর ব্যাপক সাশ্রয় হবে।

ভারতমালা পরিযোজনা (BMP), ভারত সরকার একটি প্রকল্প। বিশ্বমানের এক্সপ্রেসওয়ে এবং হাইওয়ে নির্মাণের জন্য এই ভারতমালা পরিকল্পনা। উচ্চ-মানের এক্সপ্রেসওয়েগুলির নেটওয়ার্কের শুধু যে যানজট সমস্যা কমবে তাই নয়, শহরগুলির মধ্যে যাতায়াতের সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
বারাণসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে বারাণসী-রাঁচি-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে নামেও পরিচিত। এটি ভারত সরকারের ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম জার মূল উদ্দেশ্য, ভারতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য হাজার হাজার কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে, হাইওয়ে, অর্থনৈতিক করিডোর ও রাস্তার নির্মাণ।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, বারাণসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে নিশ্চিতভাবে আশেপাশের অঞ্চলে শিল্প বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মসৃণ এবং নির্বিঘ্ন যাতায়াত বাড়িয়ে তুলবে। এর পাশাপাশি এক্সপ্রেসওয়ে, লজিস্টিক সমস্যা সমাধানেও সহায়ক হবে।

১) এক্সপ্রেসওয়েটি ৬ লেনের গ্রিনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প হিসাবে তৈরি করা হচ্ছে।
২) ভবিষ্যতে লেন সম্প্রসারণের ব্যবস্থা রয়েছে।
৩) এক্সপ্রেসওয়ের রাইট অফ ওয়ে পুরো ১০০ মিটারে রাখা হবে।
৪) বিহারের কাইমুর জেলায় ৫ কিমি টানেল নির্মাণ করা হবে। ৫) বারাণসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন (EPC) মোডের অধীনে নির্মিত হচ্ছে।


৬) এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য মোট ১৩৪০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের সামুদ্রিক বাণিজ্য কাজকর্ম পরিচালিত হয় কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর থেকে। বারাণসী-রাঁচি-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হলে, কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের সঙ্গে পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের সংযোগ স্থাপন করা হবে। অন্তত এমনটাই জানাচ্ছেন এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়াররা।
এক্সপ্রেসওয়েটি উত্তরপ্রদেশের চান্দৌলি জেলার কাছে বারহুলি গ্রামের বারাণসী রিং রোড থেকে শুরু হবে। এগিয়ে চলবে ঝাড়খণ্ডের কাইমুর, রোহতাস, আওরন্দাবাদ, বিহারের গয়া, চাতরা, হাজারিবাগ, রামগড়, পিটারবার, বোকারো (যা রাঁচির কাছে) এবং হাওড়ার কাছে উলুবেরিয়ায় NH16তে শেষ হবে (যেটি কলকাতার কাছাকাছি) পশ্চিমবঙ্গে।

এই এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৬১০কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েটি উত্তর প্রদেশে ২২ কিলোমিটার, বিহারে প্রায় ১৫৯ কিলোমিটার, ঝাড়খণ্ডে প্রায় ১৮৭ কিলোমিটার এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৪২ কিলোমিটার পথ জুড়বে।
এই প্রকল্পের অধীনে কিছু প্রকল্প ইতিমধ্যেই চালু আছে। যেমন, আম্বালা-কোটপুটলি এক্সপ্রেসওয়ে, অমৃতসর-জামনগর এক্সপ্রেসওয়ে, বেঙ্গালুরু-চেন্নাই এক্সপ্রেসওয়ে,
রায়পুর-বিশাখাপত্তনম এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি। এইসব প্রকল্প এখনও নির্মাণের পর্যায়ে রয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় বারাণসী-রাঁচি-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়েও নির্মাণাধীন।
এটি পুরুলিয়ার ঝালদা হয়ে বাংলায় প্রবেশ করবে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি ও হাওড়া হয়ে কলকাতার উলুবেরিয়ায় কাজ শেষ হবার কথা।
কলকাতা-বারাণসী এক্সপ্রেসওয়ের জন্যই হুগলি নদীর উপর তৃতীয় সেতু তৈরির পরিকল্পনা চলছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *