আজ খবর ডেস্ক:
বৈদিক ভিলেজে (Vedic Village) বঙ্গ বিজেপির (BJP Bengal) ৩ দিনের চিন্তন শিবির। দল বলছে, পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা এখন থেকেই শুরু হবে। কারণ খোঁজা হবে নেতাদের মতবিরোধের। সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই শিবিরে রয়েছেন রাজ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল।
বৈদিক ভিলেজে দলের সব সাংসদ, বিধায়ক ও রাজ্য নেতাকে ডাকা হয়েছে। আসতে বলা হয়েছে জেলা সভাপতি ও দায়িত্বপ্রাপ্তদেরও। কিন্তু বিজেপি সূত্রে খবর, সেখানে গরহাজির বেশ কয়েকজন বিধায়ক, এমনকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। যা ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবিরের কপালের ভাঁজ চওড়া করেছে।
আলিপুরদুয়ারের জন বারলা নেই। কোচবিহারের নিশীথ প্রামাণিক নেই। গরহাজির দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা-ও। সোমবার বেদিক ভিলেজে বঙ্গ-বিজেপির প্রশিক্ষণ শিবিরে দেখা যায়নি দক্ষিণবঙ্গের তিন সাংসদকেও। বনগাঁর শান্তনু ঠাকুর, ঝাড়গ্রামের কুনার হেমব্রম এবং বর্ধমান-দুর্গাপুরের সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া।
তবে এক ধাক্কায় উত্তরবঙ্গের তিন সাংসদের অনুপস্থিতি রীতিমত চিন্তায় ফেলেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলকে। তার মধ্যে দু’জন আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
গত বেশ কয়েকমাস ধরেই উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করার দাবিতে সরব বিজেপির একাংশ। তার মধ্যেই কলকাতায় দলীয় কর্মসূচিতে উত্তরবঙ্গের তিন সাংসদের না থাকা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও ওই ছয় সাংসদ পার্টিকে জানিয়েই বৈঠকে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের দাবি।
কোচবিহারের সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক পার্টিকে জানিয়েছেন, সোমবার বিশ্ব ক্রীড়াদিবস। তাঁর ঠাসা কর্মসূচি। ফলে তাঁর পক্ষে বৈদিক ভিলেজে থাকা সম্ভব নয়। অথচ রবিবারই তিনি কোচবিহারে হাজির ছিলেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের (GCPA) সভায়। সেখান থেকে কার্যত বঙ্গভঙ্গের ডাক দেওয়া হয়।
এই মঞ্চেই হাজির ছিলেন কোচবিহার উত্তরের বিজেপি বিধায়ক সুকুমার রায়। সেখানে তিনি বলেন, ”উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করার দাবিকে আমরা সমর্থন করি। উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত।”
তুফানগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক মালতী রাভা বলেন, ”কিছু কিছু নেতা এসে বলে যাচ্ছেন, উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করা যাবে না। আমি বলছি, উত্তরবঙ্গের মানুষ ঠিক করবে, আলাদা রাজ্য হবে কি না। আপনারা (গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন) যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, চালিয়ে যান। উত্তরবঙ্গের সব বিধায়ক আপনাদের সঙ্গে আছে।”
এই সময় মঞ্চেই বসেছিলেন নিশীথ। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ”ওঁদের কথাগুলি মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।”
যদিও এই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এদিন ফের বলেন, “রাজ্যভাগের দাবি বিজেপি সমর্থন করে না। আমাদের পার্টি রাজ্য খণ্ড-বিখণ্ড করায় আস্থা রাখে না।”
বস্তুত, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত শিবিরের এসেছেন শুধু কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়েই শিবিরে এসেছেন বিজেপির এই ‘আদি’ নেতা।
এদিকে অনুপস্থিত আরেক জন, কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনুর গলায় অভিমানের সুর। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন ব্যক্তিগত কাজে গুজরাতে রয়েছি। শিবিরে যাইনি। এই কাজটা আমার কাছে খুব দরকারি। আমন্ত্রণ পেয়েছি। কিন্তু ওখানে গিয়ে কী হবে? যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁরাই করুন। আমরা তো আর পার্টির দায়িত্বে নেই। যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরাই চালান না। তাঁরাই তো সব চালাচ্ছেন।’’
বাকি দেড় দিনের শিবিরেও আপাতত অনুপস্থিত নেতা মন্ত্রীরা আসবেন না বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির।
বনগাঁর সাংসদ শান্তনুকে আগেই “বিদ্রোহী” হতে দেখা গিয়েছে। তিনি কলকাতায় রাজ্য বিজেপির ‘বিদ্রোহী’-দের নিয়ে বৈঠকও করেছিল মন্ত্রী হওয়ার পরে, সরকারি গেস্ট হাউসে বসে।
কৈলাস বিজয়বর্গির পরে বাংলায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন সর্বভারতীয় বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা সুনীল বনসল। এই শিবিরে যোগ দেওয়ার মাধ্যমেই রাজ্যে কাজ শুরু করলেন। শিবিরের শেষ দিনে হাজির থাকার কথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষের। কিন্তু তাঁদের সামনেও রাজ্য বিজেপি ঐক্যের ছবি দেখাতে ব্যর্থ, এমনটাই মনে করছেন দলের অধিকাংশ নেতা।
নতুন তিন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সম্পর্কে অবশ্য খুব একটা ইতিবাচক ধারণা নেই গেরুয়া শিবিরের বাকি নেতাদের মধ্যে। তাঁদের মতে, তিন জনই কোটায় মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। এক জন উত্তরবঙ্গের এবং আদিবাসী, এক জন মতুয়া এবং এক জন রাজবংশী কোটায়।
চিন্তন শিবিরে যোগ দেওয়ার জন্য বিজেপি যে নিয়ম করেছে, তাতে সব স্তরের নেতা বা মন্ত্রীকেই নিজস্ব নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত সহকারীদের বাইরে রেখে শিবিরে দুই রাত্রি, তিন দিন কাটানোর কথা। বাড়ির বিছানা ছেড়ে শিবিরেই থাকার ব্যবস্থা।
আরও তিন সাংসদ দার্জিলিঙের রাজু বিস্তা, বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনের সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়া এবং ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম ও অনুপস্থিত। তাঁরা নাকি আগে থেকেই সংসদীয় কমিটির কাজে ব্যস্ত থাকার কথা দলকে জানিয়েছিলেন।