আজ খবর ডেস্ক:
পুজোর আগেই রোগা হতে চান?
ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলেস্টেরল কমিয়ে এই পুজোতে জমিয়ে আনন্দ করতে চান? তাহলে আপনার অন্যতম পছন্দ হওয়া উচিত মেথি (Fenugreek)।
নাম শুনে মোটেও মুখ তেতো করবেন না। জানেন কি? দীর্ঘদিন ধরে নানা ভাবে শরীর ফিট রাখতে সাহায্য করে মেথি।


ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং ভাইরাল সংক্রমণ থেকে শরীরের জ্বালা পোড়া রুখতে নিরলস কাজ করে মেথি।
সেই প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে (Ayurveda) মেথি ব্যবহৃত হয় ওষুধ হিসেবে। শুধু ভারতীয়ই নয়, চীনা চিকিৎসা পদ্ধতিতে মেথি ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।
আমরা রোজ ব্যবহার করি এমন বহু সাধারণ জিনিসের মধ্যেও মেথির নির্যাস রয়েছে।
সাবান, প্রসাধনী, চা, গরম মসলা, ম্যাপেল সিরাপ থেকে মাথায় মাখার তেল অথবা শ্যাম্পু, জেনে বা না জেনে আপনি প্রায় রোজই ব্যবহার করছেন মেথি।

মেথিতে রয়েছে বিশেষ কিছু পুষ্টিকর উপাদান।
কোলিন, ইনোসিটল, বায়োটিন, ভিটামিন এ, বি ভিটামিন, ভিটামিন ডি, ফাইবার ও আয়রন।
তবে কোনও কিছুর বেশি ব্যবহারই ভালো নয়। মেথি অতিরিক্ত ব্যবহার বা সেবন করলে গর্ভাবস্থায় জরায়ু সংকোচন হতে পারে এবং হরমোন-সংবেদনশীল ক্যান্সার থাকলে, তা বাড়তে পারে।
মেথি হালকা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল উপসর্গের কারণ হতে পারে, যেমন ডায়রিয়া এবং ফোলা। তাই মেথি ব্যবহারের আগে এই বিষয়গুলো একটু মাথায় রাখবেন।

এবার আসা যাক মেথির লাভ কী কী সেই প্রসঙ্গে।
মেথি খাওয়া হজমের সমস্যা, কম টেস্টোস্টেরন এবং আর্থ্রাইটিসে সাহায্য করতে পারে।
১) ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় মেথি। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথিতে অন্তত চারটি যৌগ এন্টিডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে:
অন্ত্রের গ্লুকোজ শোষণ কমায়;
গ্যাস্ট্রিক কমাতে সাহায্য করে;
ইনসুলিন (Insulin) সংবেদনশীলতা এবং
লিপিড-বাইন্ডিং প্রোটিনের ঘনত্ব কমায়।

২) সদ্য মা হওয়া মহিলাদের জন্য মেথি বুকের দুধ উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে এবং প্রবাহকে সহজ করতে সাহায্য করতে পারে।
২০১৪ সালের একটি গবেষণায়বদেখা গেছে, ২৫ জন ভারতীয় মহিলা যারা সম্প্রতি সন্তানেরজন্ম দিয়েছেন তাঁরা ২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তিন কাপ মেথি চা পান করেছেন এবং প্রথম সপ্তাহে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

৩) মেথি ক্ষিধে কমায়। মেথি শাক বা ফোড়ন হিসেবে ব্যবহার করে রান্না করলে, সেই খাবার অল্প খেলেই পেট ভরে গেছে এমন মনে হয়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং ওজন হ্রাস করতে পারে।
২০১৫ সালে ৯ জন অতিরিক্ত ওজনের কোরিয়ান মহিলার ওপর একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল। তাঁদের দুপুরের খাবারের আগে একটি মৌরি, মেথি বা প্লাসিবো চা পান করানো হয়। যারা মেথি চা পান করেছেন তাঁরা কম ক্ষুধার্ত এবং বেশি তৃপ্ত বোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
ফাইবার থাকার কারণেও মেথিযুক্ত খাবার অল্প খেলেই পেট ভরার অনুভুতি হয়।

৪) টেস্টোস্টেরন বাড়ানো এবং শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পুরুষদের কাছে মেথি অত্যন্ত উপযোগী।
মানসিক সতর্কতা, মেজাজ এবং লিবিডোকে (Libido) ধারাবাহিকভাবে উন্নত করে মেথি।

৫) মেথিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা প্রদাহরোধী এজেন্ট হিসাবে দুর্দান্ত।

৬) মেথি কলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং রক্তচাপ (Blood Pressure) কমাতে সাহায্য করতে পারে , যা হৃদরোগের (Heart Attack) ঝুঁকি কমাতে পারে।
কারণ মেথি বীজে প্রায় ৪৮ শতাংশ ডায়েটারি ফাইবার থাকে।

সবশেষে আপনাদের জন্য রইল একটা ছোট্ট টিপস।
দেড় গ্লাস জল গরম বসান। তাতে ১ চামচ মেথি বীজ দিন। এবার ফুটতে দিন। জল ফুটে ১ গ্লাস মতো হয়ে গেলে নামিয়ে ছেঁকে নিন। এবার গরম গরম পান করুন।


রাতে ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত আধ ঘণ্টা আগে আপনাকে মেথির জল খেতে হবে। গরম গরম খেতে পারেন বা উষ্ণ। তবে খুব ঠান্ডা করে পান করবেন না। একটানা ১৫ দিন রাতে খেলেই উপকার পাবেন হাতেনাতে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের বদল দেখতে পাবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *